ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

‘গেল বছর না খেয়ে থেকেছি, এবার হয়তো ধান উঠবে ঘরে’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৮
‘গেল বছর না খেয়ে থেকেছি, এবার হয়তো ধান উঠবে ঘরে’ কৃষাণী জায়েদা খাতুন। ছবি: বাংলানিউজ

বিশ্বম্ভরপুরের (সুনামগঞ্জ) ধনপুর ইউনিয়নের ছাতারা গ্রাম থেকে ফিরে: গেল বছর আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে না খেয়ে খেয়ে দিনগুলো পাড় করেছি। তারপরও আবার ঋণ করে বোরো ফসল ফলিয়েছি। আশা করছি আল্লাহ আমাদের দিকে মুখ তুলে থাকালে এ বছর ঘরে ধান তুলতে পারব।

কান্না জড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথা বলছিলেন বিশ্বম্ভরপুরের ছাতারা গ্রামের কৃষাণী জায়েদা খাতুন। এসময় চোখের পানি মুছে মুছে আবেগাপ্লুত জায়েদা বাংলানিউজকে বলেন, ধান না পেয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বড় কষ্টে দিন কেটেছে আমাদের।

এবার ধান তুলতে পারলে বিক্রি করে ঋণ পরিশোধের পর যা থাকবে তা দিয়ে সংসার খরচ করব। কিনব কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনসপত্রও।

একই গ্রামের আরেক কৃষাণী রহিমা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, আমার চার কেদার জমি আছে। গেল বছর ক্ষতি হলেও সেখানে এবারো বোরো ধান লাগিয়েছি। আশা করছি এ বছর প্রায় ৬০ মণ ধান পাব। সেই ধান দিয়ে আমার পরিবারের সারা বছরের চাল হয়ে যাবে। আল্লাহর কাছে এই দোয়া করি, যেনো কোনো রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়। ধান গোলায় তুলতে পারলে এবার সুখে দিন কাটাতে পারব বলে আশা করছি আমরা। ধানক্ষেত।  ছবি: বাংলানিউজতিনি আরো বলেন, ধান কাটার জন্য ইতোমধ্যে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ধান শুকানোর জায়গা তৈরিসহ যাবতীয় কৃষি সরঞ্জামাদি কিনে আনা হয়েছে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই ধান কাটা শুরু হবে।

জানা গেছে, এখন শুধু ব্রি-২৮ জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। ২৯ জাতের ধান কাটতে আরো সময় লাগবে। তাছাড়া এবার যে ফলন হয়েছে কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়লে সারা বছরের চাল ও সংসার খরচের টাকা হয়ে যাবে বলে ধারণা অনেক কৃষকের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট দুই লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে এবার। এর মধ্যে ধর্মপাশা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৩২ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। মোট আবাদের তিন শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আর মাঠে পাকা অবস্থায় আছে ৪০ শতাংশ। চার-পাঁচদিনের মধ্যে এই ধান কাটা শুরু করবেন কৃষকরা।

এ বছর হাইব্রিড জনকরাজ, এসিআই, আফতাব প্রজাতির ধান আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে। আর আগাম জাতের উফশি বি ধান-২৮ ও বি ধান ২৯ জাতের চারা এক লাখ ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে রোপণ করা হয়। জেলার ১১ উপজেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ২১ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন। যা চালের পরিমাণে আট লাখ ৭৫ হাজার ৩৫৯ মেট্রিক টন।
এদিকে, সম্প্রতি হাওর রক্ষা বাঁধ পরিদর্শনে আসেন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এ সময় তিনি সবাইকে পরার্মশ দেন দ্রুত ধান কাটার জন্য। যাতে অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল এসে ধান নষ্ট করতে না পারে।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত জেলায় মোট আবাদের তিন শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই ধান কাটার ধুম পড়বে। তবে কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা আশা করছি ৯৫ ভাগ ধান কৃষক গোলায় তুলতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৮
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।