ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

মিল মালিকদের হাতেই চালের বাজার 

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২০ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৮
মিল মালিকদের হাতেই চালের বাজার  বাবুবাজার-বাদামতলি পাইকারি চাল বাজারের একটি আড়ৎ

ঢাকা: আমদানি চালের ওপর শতকরা ২৮ ভাগ কর আরোপের পর গত এক মাস ভারত থেকে চাল আমদানি প্রায় বন্ধই রয়েছে বাবুবাজার-বাদামতলি পাইকারি চাল বাজারে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নিন্মআয়ের মানুষ। তবে লাভ হয়েছে দেশি মিল মালিকদের। তারা কর আরোপের দিন থেকেই কেজি প্রতি চালের দর বাড়িয়েছেন তিন থেকে পাঁচ টাকা।

গত ৭ জুন দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি চালের আড়ৎ বাবুবাজার-বাদামতলিতে ভারত থেকে আমদানি করা মোটা চাল বিক্রি হতো ৩৩ থেকে ৩৬ টাকা। ওইদিন প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী দেশের কৃষকের স্বার্থ ও পর্যাপ্ত মজুদের কথা চিন্তা করে চাল আমদানিতে সব মিলিয়ে ২৮ ভাগ কর আরোপ করেন।

এর পরদিনই নিন্মআয়ের মানুষের মোটা চালের দর ওঠে সর্বনিন্ম ৩৯ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪১ টাকা পর্যন্ত। আর ২৮ চালের দর ওঠে ৩৬ টাকা থেকে ৪২ টাকায়। মিল মালিকদের কারসাজিতেই চালের বাজারের এই উলম্ফন বলে দাবি আড়ৎ মালিকদের।

তবে সেই অবস্থার কিছুটা উন্নতির দিকে যাচ্ছে। সামান্য হলেও কমতে শুরু করেছে পাইকারি চালের বাজার। ঈদের পর থেকে আবার কেজি প্রতি মানভেদে এক থেকে তিন টাকা পর্যন্ত কমেছে চালের বাজার।

শনিবার (০৭ জুলাই) সরেজমিন বাবুবাজার, কদমতলি আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা থেকে ৪৩ টাকা, আতপ চাল ৩৪ টাকা থেকে ৩৬ টাকা, মিনিকেট ৪৯ টাকা থেকে ৫২ টাকা, নাজিরশাইল ৫৫ টাকা থেকে ৬২ টাকা, ২৮ চাল ৩৯ থেকে ৪১ টাকা দরে। যা ঈদের আগের থেকে এক/দুই টাকা কম।

মেসার্স শাহাদাৎ রাইস এজেন্সির মালিক শাহাদাৎ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে নিন্মআয়ের মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকা মোটা চালের দর। বাজেটের দিন থেকেই এই দুই চালের দর বেড়েছে কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা। ভারত থেকে চাল আসা বন্ধ হওয়াতেই এই দুই ধরনের চালের দর এতোটা বেড়েছে। তবে অন্য চালের ওপরও এর প্রভাব পড়েছে কেজিতে এক থেকে তিন টাকা পর্যন্ত।

মেসার্স খাদিজা রাইস এজেন্সির মালিক মঞ্জু সরকার বলেন, ভারত থেকে যখন চাল আসতো তখন ভারতীয় চালের চেয়ে কেজিতে তিন টাকা কম দরে বিক্রি হতো দেশি চাল। এখন কর আরোপের পর ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ হওয়ায় দেশি চালের দর কেজিতে বেড়েছে গড়ে পাঁচ থেকে সাত টাকা। মিল মালিকরাই বাজেট ঘোষণার পর এই দর বাড়িয়েছেন। বাজার তো তাদের নিয়ন্ত্রণে। তারা চাইলে বাজার উঠবে-নামবে, অথবা স্থিতিশীল থাকবে। আমরা বড়জোর তাদের চালে ৫০ পয়সা বেশি নিতে পারি। এর বেশি কিছুই আমাদের করার নেই।

তিনি বলেন, আমদানিকারক ও মিলারদের হাতে এখনো কিছু পুরনো আমদানি করা চাল আছে। যা বিক্রি হচ্ছে। আবার কেউ কেউ দেশি চাল ভারতীয় চালের পুরনো বস্তায় ভরেও বেশি দরে বিক্রি করছেন। ভারতীয় চাল আসা বন্ধ হওয়ায় দর বাড়লেও লাভ হয়েছেন দেশের মিল মালিকদের। দেশি চালের সরবরাহ ও বিক্রিও বেড়েছে।

মেসার্স দেশ রাইস এজেন্সির চাল ব্যবসায়ী নুরুল আমিন জানান, মোটা চাল ও ২৮ চালের দর বাড়ার কারণ ভারত থেকে চাল না আসা। আবার দেশের মিল মালিকদের কাছ থেকে মোটা চাল সরকারি খাদ্যগুদামে চলে যাওয়ায় তা বাজারে আসছে না। ফলে এই দুই প্রকার চালের এক ধরনের সংকট তৈরি হয়ে আছে। যেটুকু দেশি মোটা চাল বাজারে আসে, নিন্মআয়ের এই চালের ক্রেতারা তা আবার কিনতে চান না। তারা ভারতীয় মোটা চাল পছন্দ করেন। কারণ, ভারতীয় মোটা চালের ভাত সকালে রান্না করলে সারাদিন ভালো থাকে। দেশি চালের ভাত সকালে রান্না করলে, দুপুরের আগেই নষ্ট হয়ে যায়।

এছাড়া বাজার মোটামুটি স্থিতিশীলই রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঈদের আগে দর বেড়েছিলো মিল মালিকদের প্রেসারে। ঈদের ছুটিতে ১৫ দিন মিল বন্ধ থাকবে বলে আড়তদারদের মধ্যে আতংক তৈরি করে চাল বেশি দরে বিক্রি করেছেন। প্রতি বছরই তারা এটা করেন। এখন বাজার স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

তবে মালঞ্চ ট্রেডিংয়ের ফারুক হোসেন জানান, কেবল মিল মালিকদের কারসাজিই নয়, চালের দর বাড়ানোর দায় সরকারেরও আছে। আগে কেবল ট্রেডিং লাইসেন্স নিয়েই ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারতেন। এখন ট্রেডিং লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট, কৃষি অধিদফতরের লাইসেন্স ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ফুড গ্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করতে হয়ে। এতে ব্যবসায়ীদের খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনি সময়ক্ষেপণ হওয়া ও ভোগান্তি বেড়েছে। যার প্রভাব পড়ে বাজারে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৮ 
আরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।