ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাসে ব্রি’র সাফল্য

মহিবুল আলম সবুজ, শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৮
গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাসে ব্রি’র সাফল্য মাঠ পর্যবেক্ষণ করছেন কৃষিমন্ত্রীসহ আইএফডিসির উপ-পরিচালক (এশিয়া অঞ্চল) এবং ব্রির সাবেক ও বর্তমান মহাপরিচালকরা

ঢাকা: বর্তমান বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন ও পৃথিবীর উষ্ণতা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন ও হ্রাস নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের  (ব্রি) একদল বিজ্ঞানীর গবেষণায় দেখা গেছে, ধানক্ষেতে নিয়ন্ত্রিত সেচ দেওয়া হলে প্রায় ৩৫ শতাংশ কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমন কম হয়।

গবেষকরা নিয়ন্ত্রিত এ সেচের নাম দিয়েছেন পর্যায়ক্রমে ভিজানো ও শুকনো পদ্ধতি। এ পদ্ধতি বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাসে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।



আমাদের দেশে প্রধানত আমন ও বোরো মৌসুমে ধান চাষ হয়। আমন মৌসুমের তুলনায় বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন প্রায় দেড় গুণ বেশি। তবে বোরো মৌসুমের ধান চাষ সম্পূর্ণভাবে সেচের পানির উপর নির্ভরশীল। এতে একদিকে ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে। যা ভূমিধসসহ, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে ব্রি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশে ২০১৩ সাল থেকে অত্যাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ধানক্ষেত থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাস কমানোর চেষ্টা করছিলেন। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, পর্যায়ক্রমে ভিজানো ও শুকনো পদ্ধতিতে প্রায় ৪০ শতাংশ মিথেন গ্যাস নির্গমন কম হয়। ফলে পর্যায়ক্রমে ভিজানো ও শুকনো পদ্ধতিতে সব সময় পানি দাঁড়ানো জমির ধানক্ষেতের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন হ্রাস করতে পারে। এতে একদিকে যেমন পানির অপচয় কমে, অন্যদিকে বাড়ে উৎপাদন।

চলমান এ গবেষণার আংশিক ফলাফল ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘Geoderma’ ও ‘Nutrient Cycling in Agroecosystems’ এ প্রকাশিত হয়েছে।

ব্রি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম মফিজুল ইসলাম উক্ত বিষয়ের উপর তার পিএইচডি গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে কৃষিজমির ৮৫ শতাংশ জমিতে ধান চাষ হয়। এসব জমি থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাস যেমন- মিথেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রাস অক্সাইড নির্গত হয়। পর্যায়ক্রমে ভিজানো ও শুকনো পদ্ধতিতে সেচ দিলে একদিকে যেমন সেচের পানি সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে এটি ধানের জমি থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন হ্রাস করবে, যা বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।  

ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর গ্রিনহাউজ গ্যসের নির্গমন হ্রাসের জন্য পর্যায়ক্রমে ভিজানো ও শুকনো পদ্ধতির সুফল ব্যাপকভাবে কৃষকের মধ্যে অতিদ্রুত সম্প্রসারণ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ পদ্ধতিতে একদিকে যেমন ২৫-৩০ শতাংশ পানি সাশ্রয়ী হয়, অন্যদিকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়, তা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  

এই তথ্যের ভিত্তিতে জলবায়ু বিষয়ক বিশ্ব সভায় আমাদের দাবি আরো জোরালোভাবে উপস্থাপন করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।