ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

‘যশোরে সবজির বীজ অঙ্কুরোদগমেই লাখপতি কৃষক’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৮
‘যশোরে সবজির বীজ অঙ্কুরোদগমেই লাখপতি কৃষক’ বীজতলাতে নিবিড় পরিচর্যায় বীজ অঙ্কুরোদগম করছেন কৃষক। ছবি: বাংলানিউজ

যশোর: শীতকালীন সবজি উৎপাদন না করে শুধুমাত্র বীজতলাতে নিবিড় পরিচর্যায় বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে লাখপতি হয়েছেন দুই শতাধিক কৃষক। এ কাজে জড়িত পুরাতনদের কেউ কেউ তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন।

চলতি মৌসুমের আষাঢ় মাস থেকে থেকে শুরু হওয়া অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে বিক্রি চলবে কার্তিক মাসজুড়ে। এ পাঁচ মাস সময়কালে কৃষক একই জমিতে তিনবার পর্যন্ত বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারবেন।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সবজির রাজধানীখ্যাত যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ও চুড়ামনকাঠি ইউনিয়নে রাস্তার দু’পাশ দিয়ে শত শত পলিথিনে মোড়া বীজতলা। সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়াতেই বীজতলার উপরের পলিথিন খুলে উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন কৃষক। এরপর ঝাঝরি দিয়ে পানি ছিটিয়ে এবং আগাছা পরিস্কারে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণী।

চুড়ামনকাঠি-চৌগাছা সড়কের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী আব্দুলপুর মাঠে দেখা গেছে, গোটা মাঠজুড়ে হাজারো বীজতলা। এসব বীজতলায় নারী-পুরুষ মিলিয়ে অন্তত শতাধিক শ্রমিক বীজতলা পরিচর্যা করছেন। এদের কেউ পানি দিচ্ছেন, কেউ নিড়ানি দিয়ে আস্তে আস্তে আগাছা পরিচর্যা করছেন, কেউবা নতুন করে বীজতলা তৈরি করে বীজ বপন কিংবা পলিথিনে মোড়ানো ঘর তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন।  

স্থানীয়রা জানান, চুড়ামনকাঠি ও হৈবতপুর ইউনিয়নে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়, এসব এলাকার বিল (জলাবদ্ধ কিংবা তুলনামূলক নিচু জমি) ব্যতিত ধানের আবাদ নেই বললেই চলে। অধিকাংশ জমিতে উন্নত পদ্ধতিতে মাচায় সবজি চাষ করে। তবে সবজি চাষের পাশাপাশি দুই ইউনিয়নের শতাধিক কৃষক ঝুঁকেছেন সবজির বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদনে। বীজতলা।  ছবি: বাংলানিউজচুড়ামনকাঠি ও হৈবতপুর এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমের আষাঢ় মাস থেকে বীজতলা প্রস্তুত করে বাঁধাকপি ও ফুলকপির বীজ বপন করা হয়। ওই বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা গজালে তা পরিচর্যা করে এক মাস বয়সে তুলে অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে বাজারে ভালো মানের প্রতিটি ফুলকপির চারা ১ টাকা ৮০ পয়সা এবং বাঁধাকপির চারা মানভেদে ৬০ পয়সা থেকে ৭৫ পয়সা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যশোরের ঝিকরগাছা, গদখালী, নাভারণ, চৌগাছা, মণিরামপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গার জীবনডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, নড়াইল, লোহাগড়া, সাতক্ষীরা, শ্যামনগর, কালীগঞ্জ এলাকার কৃষক ও সবজি চারার পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বাংলানিউজকে বলেন, গত তিনবছর ধরে স্থানীয় শতাধিক কৃষক মৌসুমের পাঁচ মাস বীজ থেকে চারা তৈরির কাজই করেন। এদের মধ্যে অর্ধশত কৃষক ৫ থেকে ১০ বিঘা জমি নিয়ে অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে উপার্জন করছেন। তবে বিদেশি বীজের তুলনামূলক বেশি দাম হওয়ায় চারা উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে।

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠি ইউনিয়নের পোলতাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর ৫ বিঘা জমিতে অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন এবং বিক্রি করে প্রায় তিন লাখ টাকা লাভের মুখ দেখেছিলেন। তবে চলতি বছর সবেমাত্র এক চালান ফুলকপি এবং বাঁধাকপির চারা উৎপাদন করে বিক্রি করেছেন। আরেক ধাপ বিক্রির মতো হয়েছে। তবে মৌসুম শেষে হিসাব-নিকাশ না করে লাভের অঙ্কটা বলা সম্ভব না বলেও জানান তিনি।

সদর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামের কৃষক ওসমান গাজী বাংলানিউজকে বলেন, বছর তিনেক আগে চারা উপাদন করে বিক্রির সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ জন কৃষক জড়িত থাকলেও, এখন ছোট-বড় মিলিয়ে দুই শতাধিক কৃষক এ কাজে জড়িত হয়েছেন।

চারা উৎপাদনকারী কৃষকরা বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবিঘা জমিতে ফুলকপির বীজ বপন করে চারা উৎপাদন পর্যন্ত (এক মাস) অন্তত দেড় লাখ টাকা ব্যয় হয়। তবে এতে তিন লক্ষাধিক চারা উৎপাদন করে আনুসাঙ্গিক খরচ বাদেও অন্তত আড়াই লাখ টাকা বিক্রি হয়। পরবর্তীতে ওই চারা অন্য কৃষকরা কিনে অন্তত তিনমাস পরিচর্যা করে বিক্রি উপযোগী করে তোলে। এছাড়াও প্রতিবিঘা জমিতে বাঁধাকপির বীজ বপন করে চারা উৎপাদন পর্যন্ত (এক মাস) অন্তত ১ লাখ টাকা খরচ হয়। তবে এতে উৎপাদিত চারা ২ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে বিক্রি হয়।

এদিকে, আরেক শ্রেণীর কৃষক এসব চারা কিনে রোপন করে আগাম সবজি উৎপাদন (খাওয়ার উপযোগী) করে বাড়তি আয় করছেন। এমনকি, মৌসুমের শুরুতে বাঁধাকপি-ফুলকপি, মুলা চারগুণ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ভরা মৌসুমে ফলন বাড়লে এসব সবজি মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, সৌদিআরবে পাঠানো হবে। কৃষকদের মতে, ধানের তুলনায় তারা সবজি চাষাবাদে বেশি লাভবান হওয়ায় দিন দিন চাষের পরিধি আরও বাড়াচ্ছেন।

যশোর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এস এম খালিদ সাইফুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, সারাদেশের মধ্যে যশোরের আব্দুলপুর এলাকাতেই বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা তৈরি করে বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় কৃষাণ-কৃষাণী চারা উৎপাদনে অত্যন্ত পারদর্শী, তারা কৃষির সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে চারা তৈরি করেন। গতবছরও এখানকার সবজি বাণিজ্যিকভাবে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদিআরব ও তাইওয়ানে গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৮
ইউজি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।