একজনের কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকায় বর্গা নেন ৫২ শতক জমি। সেখানে চাষ করেছেন শীতকালীন সবজি বাঁধাকপি।
তার বাঁধাকপির জমিটি স্থানীয় উপজেলা কৃষি অধিদফতরের সংশ্লিষ্টরা দেখভাল করছেন। প্রয়োজনমতো পরামর্শ দিচ্ছেন। সেখানকার কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার মোদক বাংলানিউজকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাঁধাকপির বাম্পার ফলন হবে। বাজার দর ভালো থাকলে দামও ভালো পাবেন। এতে অনেকটাই লাভবান হতে পারবেন এই কৃষক। তার মতো অনেকেই সবজি নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন এখন।
ধুনট উপজেলায় বাঁধাকপি ছাড়াও ফুলকপি, বেগুন, টমেটো, শিমসহ শীতকালীন নানা ধরনের সবজি চাষ করা হয়েছে। শুধু এ উপজেলায় প্রায় এক হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ করা হয়েছে। এই আবাদ এখনও অব্যাহত রেখেছেন এ উপজেলার কৃষকরা, জানালেন স্থানীয় কৃষি অধিদফতরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান।
বগুড়ার ১২টি উপজেলার মধ্যে সদর, শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর, শেরপুর, ধুনট, গাবতলী, নন্দীগ্রাম, কাহালু, ধুনট ও সোনাতলার কৃষকরা অনেকটা বড় পরিসরে সবজি চাষ করে থাকেন। এর মধ্যে শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলার কৃষকরা সবজি চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের সবজির চারাও উৎপাদন করেন। অবশ্য চারা উৎপাদনের দিক দিয়ে জেলার মধ্যে শাজাহানপুর উপজেলা এখনও শীর্ষে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠে মাঠে যেনো সবুজের হাসি বিরাজ করছে। কেউ ক্ষেতের সবজি তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকেই কীটনাশক স্প্রে করছেন। কেউ কেউ নতুন করে আবাদের জমি প্রস্তুত করছেন। আবার বিভিন্ন জাতের চারা উৎপাদনেও ব্যস্ত অনেক কৃষক। সবমিলে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, শিম, টমেটো, কাঁচা মরিচ, মুলা, করলা, লাউ, ঢেঁড়স, গাঁজর, পটল, লালশাক, পালংশাকসহ বিভিন্ন জাতের সবজিতে ভরে আছে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ।
আব্দুল আজিজ, মোসলেম উদ্দিন, হায়দার আলী, জাবেদ আলীসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে বলেন, সবজি চাষ করতে বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। তুলনামূলক কম সময়ে তা বাজারজাত করা যায়। নিজেদের চাহিদা মেটানো যায়। প্রায়ই হাট-বাজারে বিকি-কিনি করা যায় সবজি। এতে করে কৃষকের হাতে কম-বেশি টাকা থাকে। যা অন্য ফসল চাষ করে সম্ভব না।
তারা আরও বলেন, শীতকালীন সবজি হিসেব প্রায় তিনভাগে সবজি চাষে নামেন কৃষকরা। অনেকেই শীতের প্রথম ভাগে সবজি বাজারে তুলতে মাঠে নামেন। কারণ এই সময়টাতে সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়।
আরেক দফা শীতের মাঝামাঝিতে সবজি হাটে-ঘাটে তোলার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করেন কৃষকরা। আবহাওয়া ঠিকঠাক থাকলে আর ভাগ্য ভালো থাকলে এ সময়টাতেও সবজির ভালো দাম মেলে। তবে শেষভাগে উৎপাদিত সবজির ভালো দাম পাওয়া নিয়ে অনেকটা ঝুঁকি থাকে। তবু কম-বেশি নগদ টাকা পান কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের হর্টিকালচার সেন্টারের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে ও বাজার দর মোটামোটি ভালো থাকলে প্রত্যেক বছর শীতকালীন সবজি চাষ করে কৃষকরা লাভবান হন। এ কারণে শীতের সবজি নিয়ে এ জেলার কৃষকরা বরাবরই চরম ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন।
তিনি আরও বলেন, সবজি চাষ ও চারা উৎপাদনে এ জেলার কৃষকরা নিজেরাই অনেকটা অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। এছাড়া কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও প্রয়োজন মতো নজরদারি অব্যাহত রাখা হয়। প্রয়োজনে কৃষকদের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। সবমিলে এ জেলায় সবজি চাষ ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৮
এমবিএইচ/টিএ