ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

চরের মরিচের খ্যাতি দেশজুড়ে!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৯
চরের মরিচের খ্যাতি দেশজুড়ে! মরিচ তুলছেন একজন গৃহবধূ, ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: যমুনার পানি নেমে যাওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকেন চরাঞ্চলের মরিচ চাষিরা। যমুনার বুক খালি হলেই কপাল খুলে যায় নদী ভাঙনের শিকার মানুষগুলোর। পানি নেমে যাওয়া মাত্র চরের উর্বর মাটিতে পা পেলেন তারা। তোড়জোড় শুরু করে দেন মরিচ চাষে। প্রতিবছরই মরিচ ফলানোর কাজটি করেন চরাঞ্চলের চাষিরা। 

এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। যমুনার বিভিন্ন এলাকায় ও দু’কূল ঘেঁষে জেগে ওঠা চরের উর্বর মাটিতে বিশাল এলাকাজুড়ে চাষ করেছেন দেশিয় জাতের মরিচ।

অবশ্য কেউ কেউ আবার হাইব্রিড জাতের মরিচও চাষ করেছেন। টানা ৩ থেকে ৪ মাস চরাঞ্চলের চাষিরা মরিচ চাষে ব্যস্ত সময় পার করে দেন। উর্বর মাটির কারণে চরের জমিতে মরিচ ভাল হয়। আর চরের মরিচ গুণে মানে স্বাদেও অতুলনীয়। সারাদেশে চরের মরিচের চাহিদা রয়েছে আলাদা। সবমিলে চরের লাল টুকটুকে মরিচের খ্যাতি দেশজুড়ে বললেও তেমন একটা বাড়তি বলা হবে না।
 
বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলা যমুনা বেষ্টিত। এরমধ্যে সারিয়াকান্দির প্রায় সাতটি, সোনাতলার তিনটি ও ধুনটের একটি ইউনিয়ন পুরোপুরি যমুনায় ঘেরা। এসব ইউনিয়নের কৃষকরা বছরের এক মৌসুমে এ সময়টা মরিচ চাষ করেই সময় কাটিয়ে দেন।

সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম মুকুল বাংলানিউজকে জানান, এবার তিনি প্রায় ১২ বিঘা জমিতে দেশিয় জাতের মরিচ চাষ করেছেন। যমুনার পানি নেমে যাওয়া মাত্র জমি প্রস্তুতির কাজ শুরু করে দেন।
টুকটুকে লাল মরিচক্ষেত, ছবি: আরিফ জাহানতিনি জানান, হালকাভাবে জমি চাষ দিতে হয়। এরপর মরিচের বীজ রোপন করতে হয়। পরবর্তীতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে নিড়ানি, সামান্য সেচ ও সার দিতে মরিচের ক্ষেতে। মূলত পরিচর্যাটা করাই আসল কাজ। মোটামুটি দু’মাস অতিবাহিত হওয়ার পর থেকেই ক্ষেত থেকে মরিচ উঠানো যায়। প্রতি বিঘা জমির বিপরীতে তাকে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে।
 
কর্ণিবাড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা আনিছুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, প্রায় ১২ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন তিনি। এতে বিঘা প্রতি ব্যয় হয়েছে তার ১৫ হাজার টাকা করে। বর্তমানে তার ক্ষেতের মচির পাক ধরেছে। এছাড়া সপ্তাহে বা ১৫ দিনের মধ্যে একবার করে ক্ষেত থেকে মরিচ উঠানো যায়। এসব মরিচ ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে থাকেন।
 
তবে ঘন কুয়াশার কারণে গেলো বারের তুলনায় ফলন সামান্য কম হয়েছে বলে জানান এসব চাষিরা। এছাড়া এবার দামও কিছুটা কম। গেলো চরের প্রতিমণ মরিচ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। এবার সেই মরিচ ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা মণ করে বিক্রি হচ্ছে।
 
আর চরের উৎপাদিত মরিচ বিক্রি নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয় না। দেশের নামিদামি অনেক কোম্পানি বা বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখানকার মরিচ ক্রয় করে। ক্ষেতের মরিচ উঠানোর সময় থেকেই কোম্পানির পক্ষ থেকে এসব এলাকায় বিক্রয় প্রতিনিধি আসতে থাকে।
 
এদিকে মরিচ লাগানো, উঠানো, শুকানো ও বস্তায় ভরানোর কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সহযোগিতা করেন। বাড়তি আয়ের আশায় নারীরা পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজটি করে থাকেন। পুরো সময়টাতে নারীরাও ব্যস্ত থাকেন মরিচ নিয়ে।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এ জেলায় মোট ৭ হাজার ৬৬৬ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে যমুনা বেষ্টিত তিন উপজেলাতেই অর্ধেকের বেশি মরিচ লাগানো হয়েছে। দেশিয় জাতের পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের মরিচ রয়েছে।  
মরিচ আলাদা করছেন দুই গৃহবধূ, ছবি: আরিফ জাহানরোববার (২০ জানুয়ারি) পর্যন্ত ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমির মরিচ উঠানো হয়েছে। কাঁচা হিসেবে হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ৯ মেট্রিক টন হারে। আর মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৭০১ মেট্রিক টন।  
 
অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বাবলু সূত্রধর বাংলানিউজকে জানান, চরাঞ্চলের মরিচ গুণগত মান অনেক ভাল। শতভাগ স্থানীয় জাতের মরিচ লাগানো হয় চরের জমিতে। মরিচের ফ্লেভার অনেক ভাল ও আকর্ষণীয়। স্বাদেও অতুলনীয়। উৎকট গন্ধ বা ঝাল থাকে না চরের উৎপাদিত মরিচে।
 
এসব সুবিধা বিবেচনা করে চরের মরিচের প্রতি দেশের নামকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির আলাদা টান রয়েছে। এতে করে চরে উৎপাদিত মরিচের দাম তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায় যোগ করে কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৯
এমবিএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।