ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

ফসলের মাঠে মাঠে শিলাবৃষ্টির তাণ্ডব

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
ফসলের মাঠে মাঠে শিলাবৃষ্টির তাণ্ডব ফসলের ক্ষেতে শিলাখণ্ড যেন স্তূপ বেঁধে আছে। ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: ফাগুনের প্রথম সপ্তাহে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঝড়ো হাওয়া। সেই সঙ্গে ছিল ব্যাপক শিলাবৃষ্টি। এতে শিলাবৃষ্টি যেন তাণ্ডব চালিয়েছে ফসলি ক্ষেতে।

শনিবার (১৬) ফেব্রুয়ারি দিনগত রাত থেকে রোববার (১৭ ফেব্রুযারি) সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে। রোববার ভোরে রাজশাহী ও নাটোরে এবং সকালে সিলেট ও হবিগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়।

শিলার আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফসলের।   

বাংলানিউজের করেসপন্ডেন্টদের পাঠানো রিপোর্ট

নাটোর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট মামুনার রশিদ জানান, নাটোরের নলডাঙ্গা ও সিংড়া উপজেলায় ব্যাপক ঝড়সহ শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এ শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় ১০ মিনিট স্থায়ী এ শিলাবৃষ্টিতে ঘরবাড়ির টিনের চালাসহ ফসল ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ক’দিন আগে ধানের চারা রোপণ করেছেন, শিলাবৃষ্টির পর সেই জমির পাশে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন এক কৃষক।  ছবি: বাংলানিউজনলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান বাংলানিউজকে জানান, তার ইউনিয়নের পিপরুল, পাটুল, হাপানিয়া, ভুষণগাছা, আচড়াখালি, কালিগঞ্জ, ঠাকুরলক্ষ্মীকোলসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। শিলায় ঘরের চালা ফুটো হয়ে গেছে, ভুট্টা, পেয়াজ, রসুন, গম, ধানসহ রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকরা কীভাবে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন সেটা এখন চিন্তার বিষয়।

খাজুরা ইউপি চেয়ারম্যান জানান, তার ইউনিয়ের করেরগ্রাম, গোয়ালঘাট, বামুনগ্রাম,হাটবিলা, পারবিশাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত ২০ বছরের মধ্যে এতো শিলাবৃষ্টি হয়নি।

পাটুল গ্রামের কৃষক ফরিদুল ইসলাম, আকতার হোসেন জানান, শিলাবৃষ্টিতে তাদের পেয়াজ, রসুন, গম, পেয়াজ বীজ, আর ভুট্টার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। কারো কারো ফসল ঘরে তোলাই যাবে না। এতো শিলা পড়েছে যে গাছের পাতা পর্যন্ত ঝড়ে গেছে, মাটিতে শিলার স্তূপ পড়ে আছে।

সিংড়া এলাকার স্থানীয় সাংবাদিক রাজু আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, এ উপজেলার চৌগ্রাম, হুলহুলিয়া, ভাগনগরকান্দি,খরমকুড়ি, কলম, কালিনগর, দাজপুর, লালোর, ডাকমণ্ডপ, বারইহাটিসহ অন্তত ২০টি গ্রামে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, শিলাবৃষ্টিতে গম, ভুট্টা, পেয়াজ বেশ আক্রান্ত হয়েছে। তবে ধানের কোনো ক্ষতি হবে না। ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। বিস্তারিত পরে জানানো সম্ভব হবে। শিলাখণ্ড যেন বরফের চাদরের মতো ঢেকে দিয়েছে ফসলের মাঠ।  ছবি: বাংলানিউজরাজশাহীর স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শরীফ সুমন জানান, রাজশাহীতে ভোর ৪টা ৪০ মিনিট থেকে ৫টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত শিলাবৃষ্টি হয়। এসময় বজ্রপাতও হয়।  

শিলায় আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর বৃষ্টি শুরুর পর থেকেই পুরো মহানগর এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। যা স্বাভাবিক হতে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে।

ভোরে শিলাবৃষ্টির পর বিদ্যুৎহীন মহানগরে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে বিদ্যুৎ না থাকায় স্থানীয় পত্রিকাগুলো প্রকাশে সকাল হয়ে যায়।  

শিলাবৃষ্টির আঘাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর, পবা, পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে মুকুল ঝরে পড়েছে। তবে আমের মুকুলের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা না গেলেও এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন স্থানীয় আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা। শিলাবৃষ্টি তছনছ করে দিয়েছে ভুট্টাক্ষেত।  ছবি: বাংলানিউজরাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের রায়পুর এলাকার আম ব্যবসায়ী শামসুল হক জানান, আজকের শিলাবৃষ্টির আঘাতে আমের মুকুল ঝরে পড়ায় চরম লোকসান গুণতে হবে তাদের। আম গাছে মুকুল যে পরিমাণ এসেছিল, তাতে অন্যান্য বছরের লোকসান অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হতো। কিন্তু আজকের শিলাবৃষ্টিতে তাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ভোরের এ ৩৮ মিনিটে রাজশাহী মহানগরে ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। আকাশে এখনও মেঘ রয়েছে। তাই আবারও বৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে, আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় লঘুচাপের প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

সিলেটের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট নাসির উদ্দিন জানান, সকালে সিলেটের কোনো কোনো স্থানে বজ্রবৃষ্টির সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। শিলাবৃষ্টির কারণে গাছ গাছালি থেকে আমের মুকুল কিছুটা হলেও ঝরেছে।  বৃষ্টির পর সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় এভাবেই শিলা জমে থাকতে দেখা যায়।  ছবি: বাংলানিউজ

আবহাওয়া অধিদফতর সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাইদ আহমদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বলা চলে, এ বৃষ্টির মধ্য দিয়ে শীতকে বিদায় জানানো হলো। সকালে বজ্রবৃষ্টির সঙ্গে আধা ইঞ্চি আকারের শিলা পড়েছে।  

তিনি বলেন, সিলেটের বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এর আগে ভোর ৬টার পর শিলাবৃষ্টিও হয়। এতে অন্যান্য দিনের তুলনায় তাপমাত্রাও খানিকটা হ্রাস পেয়েছে।
 
সকাল পৌনে ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সিলেটে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। যদিও আবহাওয়া অধিদফতর আগেই শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলেছে, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী লঘুচাপের কারণে সিলেটসহ সাতটি বিভাগে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
 
এতে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ উপ-হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর ফলে সিলেট, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য এবং দিনের তাপমাত্র ১/৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে।

হবিগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বদরুল আলম জানান, হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা সদরে সকাল ৭টা থেকে টানা ২৫ মিনিট শিলাবৃষ্টি হয়েছে।  বানিয়াচং শহরের রাস্তায় জমে থাকা শিলা।  ছবি-বাংলানিউজ

উপজেলার গরীব হোসেন মহল্লার বাসিন্দা তৌহিদুর রহমান পলাশ বাংলানিউজকে জানান, ব্যাপক শিলাবৃষ্টিতে আমের মুকুল ঝরে যাওয়াসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষতি হয়েছে। তবে বোরো ধানের তেমন ক্ষতি হয়নি।

জাতুকর্ণপাড়া এলাকার কৃষক তৌফিক মিয়া বাংলানিউজকে জানান, বোরো ফসল রোপণ মাত্র শেষ হয়েছে। এখন শিলাবৃষ্টিতে তেমন একটা ক্ষতি হবে না। তবে কিছুদিন পরে যদি আবার শিলাবৃষ্টি হয় তাহলে ক্ষতি হবে।

বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন খন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হলেও তেমন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। কোথাও ক্ষতি হয়েছে কি না খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

কুষ্টিয়া ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট জাহিদ হাসান জিহাদ জানান, কুষ্টিয়ার মিরপুরে শিলাবৃষ্টিতে বিভিন্ন ফসলসহ ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। মাঠের পর মাঠ তামাক নষ্ট হয়ে গেছে। এতে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হাজারো কৃষক।  

এছাড়া আবুরী-মাগুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের টিনের চালা ভেঙে গেছে। সেইসঙ্গে ফুটো হয়ে গেছে ২০-২৫টি বাড়ির টিনের চালা।
 
রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভোর রাতে এ শিলা বৃষ্টি হয়।  এতে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রাজনগর, নওদাপাড়া, কাকিলাদহ, আবুরী, বড়বাড়ীয়া, হিদিরামপুর, আজমপুর, মল্লিকপাড়া, নওদাআজমপুর, মিটন, বুরাপাড়া, মেহেরনগর, চক, বাঁশবাড়িয়া, শ্রীরামপুর, কুর্শাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামে শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ওই এলাকার প্রায় ৯৫ ভাগ তামাক ক্ষেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।  

কৃষকরা দাবি করেছেন এক রাতের শিলাবৃষ্টিতে মিরপুর উপজেলায় প্রায় ১শ’ কোটি টাকার তামাক নষ্ট হয়ে গেছে।  
ক্ষতিগ্রস্ত তামাক ক্ষেত।  ছবি: বাংলানিউজকাকিলদহ এলাকার মল্লিক পাড়ার কৃষক আবু বক্কর বলেন, এবছর আমি বর্গা নিয়ে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে তামাকের চাষ করেছি। ক্ষেতে তামাকের কাজ প্রায় শেষের দিকে এখন বাড়িতে এনে শুকিয়ে বিক্রি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এরই মধ্যে রাতে প্রচুর শিলাবৃষ্টিতে আমার সব তামাক নষ্ট হয়ে গেছে।  

তিনি আরো বলেন, সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আমার সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিলো ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। এবছর আশা করেছিলাম প্রায় ২ লাখ টাকার তামাক বিক্রি করতে পারবো। তবে শিলা বৃষ্টির পরে যে অবস্থা দেখছি তাতে আয় তো দূরের কথা ২ হাজার টাকা লাগবে জমি পরিষ্কার করতে।
 
অপর এক কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি এবছর ৮ বিঘা জমিতে তামাকের চাষ করেছি। তামাকের যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা বলার অবকাশ নেই। আমার মতো এই এলাকার প্রায় ২শ’ তামাক চাষি একেবারে সর্বশান্ত হয়ে গেছে।
 
মিটন এলাকার তামাক চাষি মারফত আলী বলেন, শনিবার রাতেও আশা ছিল তামাক বিক্রি করে লাভের মুখ দেখবো। তামাকের মাঠের কাজ শেষ। এখন শুধু শুকিয়ে বিক্রি করবো। তবে এক রাতের শিলাবৃষ্টি সব শেষ করে দিয়ে গেলো।  

শিলাবৃষ্টিতে ক্ষয়-ক্ষতি ।  ছবি: বাংলানিউজমালিহাদ ইউনিয়নের আশাননগর এলাকার কেসমত জানান, রাজপুর, রাজনগর, আবুরী, আশাননগর মাঠে প্রায় ২৫-৩০ জন চাষির কলা বাগান একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। বিঘাপতি সেখানে প্রায় এক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
 
মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য মতে, এবছর মিরপুর উপজেলায় ৭ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে তামাক, ৬৫০ হেক্টর জমিতে গম, ৯১০ হেক্টর জমিতে মসুর, ১ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান, ২১০ হেক্টর জমিতে পান, ৭৫০ হেক্টর জমিতে সবজি, ৩৭৫ হেক্টর জমিতে কলা, ১৮৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ ও ১১০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ করা হয়েছে।
 
এর মধ্যে রোববার ভোর রাতে শিলাবৃষ্টিতে মিরপুর উপজেলার প্রায় ১ হাজার ৫০৮ হেক্টর জমির তামাক, ৩ হেক্টর জমির গম, ১ হেক্টর জমির মসুর, ৩ হেক্টর জমির ভুট্টার সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমির তামাক, ৭০ হেক্টর জমির গম, ২৪ হেক্টর জমির মসুর, ৮০ হেক্টর জমির ভুট্টা, ৫ হেক্টর জমির পান, ৭ হেক্টর জমির সবজি, ৬০ হেক্টর জমির কলা, ৪০ হেক্টর জমির পেঁয়াজ ও ৩৫ হেক্টর জমির রসুনের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।  

আবুরী মাগুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান জানান, শিলাবৃষ্টিতে শ্রেণি কক্ষের চালা ফুটো হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে ৪শ’ শিক্ষার্থী রয়েছে। দিনের বেলায় চালা দিয়ে আলো ঢুকছে। বৃষ্টি এলে ক্লাস করানো সম্ভব হবে না শ্রেণি কক্ষে।  

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, অর্থকরী ফসল হওয়ায় মিরপুর উপজেলার কৃষকরা তামাক চাষে বেশি আগ্রহ দেখায়। তবে আমরা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে তামাকের বিকল্প ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। কৃষকরা যদি তামাকের বিকল্প মসুর, ভুট্টা, গম, পেঁয়াজ, রসুন ও ধান চাষ করে তাহলে এ ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়ে লাভবান হতে পারে।

রাঙামাটি ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট মঈন উদ্দীন বাপ্পী জানান, রাঙামাটির দুর্গম বাঘাইছড়ি উপজেলায় শিলাবৃষ্টি হয়েছে। রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে এ শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় ১০ মিনিটের এ শিলাবৃষ্টির কারণে রবি ফসল বিশেষ করে আম ও লিচুর মুকুলের ক্ষতি হতে হয়েছে।

রাঙামাটি শহরে দুপুরে কয়েক মিনিট গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ মেঘাছন্ন রয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কাপ্তাই উপজেলায় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।

বাঘাইছড়ি উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোফায়েল আহম্মেদ বাংলানিউজকে জানান, উপজেলা শহরে বৃষ্টি হলেও শিলার আকার ছোট ছিল। তবে উপজেলার আমতলী ইউনিয়ন, লাইল্যাঘোনাসহ অন্যান্য এলাকাগুলোতে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ণয় করা যায়নি। ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি সহকারী কর্মর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সোমবারের মধ্যে ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে বলা যাবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।