ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

সবুজের ঢেউয়ে দোলে কৃষকের স্বপ্ন

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৯
সবুজের ঢেউয়ে দোলে কৃষকের স্বপ্ন বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে সবুজ ধানের পাতাগুলো। আর এমন সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলে উঠছে কৃষকের স্বপ্ন। কদিন পরেই সবুজ চারাগুলো হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। এরপর সোনালী ধানের শীষে ঝলমল করবে মাঠের পর মাঠ। রাশি রাশি সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষাণীর শূন্য গোলা।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মাধবপুর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আসান হাবিব মন্ডল তার আট বিঘা জমিতে এবার বোরো চাষ করেছেন। সুষ্ঠু সবল সবুজ ধানের চারাগুলো হাতড়াচ্ছিলেন তিনি।

এমন সুন্দর চারা দেখে তার মনটা খুশিতে ভরে উঠেছে। এবছর সার ও বিদ্যুতের কোনো সংকট না থাকায় খুবই ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি।  

কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি বোরো মৌসুমে প্রতি বিঘায় অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ মণ ধান উৎপাদন হবে বলে জানান তিনি।

সলঙ্গা থানার বাসুদেবকোল গ্রামের কৃষক দশের আলী পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছেন। নিজ জমিতে বালাইনাশক দিতে দিতে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। ফলন খুব ভালো হবে।  
বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ।  ছবি: বাংলানিউজ
তাড়াশ উপজেলার সাস্তান গ্রামের প্রান্তিক কৃষক শ্রীশ চন্দ্র বসাক, চক গোপীনাথপুর গ্রামের আব্দুস সালাম, মাধবপুরের আসান মন্ডলসহ অনেকেই বলেন, এবছর বিদ্যুৎ ও সারের কোনো সংকট হয়নি। যে কারণে ফসলের চেহারা অনেক সুন্দর হয়েছে। সবল-সতেজ চারাগুলো দেখে মনে হয় ধানের ব্যাপক ফলন হবে।  

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলনবিল অধ্যুষিত রায়গঞ্জ, তাড়াশ, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর অঞ্চলের নিচু জমিগুলো বছরের অন্তত ৩-৪ মাস বন্যা ও পানির নিচে তলিয়ে থাকে। ফলে তারা বোরো চাষের ওপর নির্ভরশীল। ভালোভাবে এ বোরো ফসল ঘরে তুলতে পারলে তাদের সারা বছরের চাহিদা পূরণ হয়। এ কারণেই বোরো মৌসুকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখে এ অঞ্চলের চাষিরা।  

এবছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চাষিরা ধান রোপণ করেছেন। যথা সময়ে সার, বালাইনাশক ও সেচ দিতে পারায় প্রাথমিকভাবে চারাগুলো উজ্জীবিত রয়েছে। ধান গাছে শীষ গজানো থেকে শুরু করে ধান পাকার আগ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো ফলন হবে বলে জানান কৃষকেরা।  

তবে বাজারে ধানের পর্যাপ্ত মূল্য না থাকায় হতাশাও প্রকাশ করেছেন চাষিরা। কৃষকদের দাবি, এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে যে পরিশ্রম আর ব্যয় করা হয়, সে তুলনায় ধানের মূল্য তারা পাচ্ছেন না। ফলে ধান চাষের আগ্রহও হারিয়ে ফেলছেন অনেক কৃষক। তাদের দাবি সরকার যেমন করে সার-বীজ, কীটনাশক ও বিদ্যুতের ঘাটতি মিটিয়েছে, তেমনই ধানের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করলে প্রান্তিক চাষিদের দুঃখ-দুর্দশা ঘুচে যাবে।
বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ।  ছবি: বাংলানিউজ
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর সিরাজগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায় বোরো চাষ বেড়েছে। তবে চলনবিল অধ্যুষিত চারটি উপজেলায় ব্যাপকহারে ধান উৎপাদন করা হচ্ছে। পুরো জেলায় এক লাখ ৪১ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে চলনবিল অধ্যুষিত রায়গঞ্জ, তাড়াশ, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলায় ৯৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাবিবুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এবার এখন পর্যন্ত বোরো চাষে কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। সার, বীজ ও বালাইনাশক সংকট ছিল না।  

তাছাড়া নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকায় সেচ কার্যক্রমও সঠিকভাবে চলেছে। ফলে এবার ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, এবছর এক লাখ ৪১ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। যেটা গত বছরের চেয়ে তিন হাজার ৮৪০ হেক্টর বেশি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন ধান। পরবর্তী আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও কোনো প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে সিরাজগঞ্জে রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৯
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।