ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

‘ধান বিক্রি করে লেবার খরচও উঠছে না’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৯
‘ধান বিক্রি করে লেবার খরচও উঠছে না’

কুষ্টিয়া: ধানের যে দাম, এক মণ ধান বিক্রি করে একটা লেবার খরচও হচ্ছে না। সাড়ে ৫০০ টাকা মণ ধান আর ধান কাটা লেবারের মজুরি ৬০০-৭০০ টাকা। তাও হাতে পায়ে ধরে আনতে হচ্ছে তাদের। কি করা ধান যেহেতু চাষ করেছি কাটতে তো হবেই। খাওয়ার জন্য আবাদ করেছি না কাটলেও তো হয় না। 

আক্ষেপ করে বাংলানিউজকে কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের কৃষক বদর উদ্দিন।  

বুধবার (১৫ মে) দুপুরে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা মাঠে ধান কাটার সময় এভাবে আক্ষেপ করেন তিনি।

 

তিনি বলেন, ধানের দাম প্রতিবছরই বাড়ে, এবারও বাড়তে পারে তবে যখন আমার মতো কৃষকের ঘরে ধান থাকবে না তখন। সরকারের কাছ থেকে আজীবন লাভ করে মিল মালিকরা আর ব্যবসায়ীরা। আর আমরা কৃষক আজীবন কাজ করেই মরবো। আমাদের কেনার সময় সারের দাম বেশি, বীজের দাম বেশি, কীটনাশকের দাম বেশি, শুধু বিক্রির সময় দাম কম। চালের দাম বাড়ে আর ধানের দাম কমে। আমরা ধান লাগিয়ে পড়েছি মহা বিপদে। এক মণ ধান বিক্রি করে যদি একটা লেবারের মজুরিও না হয়-’এ কথা বলবো কার কাছে।  

সিরাজুল ইসলাম নামে অপর এক কৃষক বলেন, চাষিদের পদে পদে বিপদ। সার, বীজ, কীটনাশক সব কিছুরই দাম চড়া। এমনকি ধানের চালেরও দাম বেশি সে তুলনায় ধানের ন্যুনতম ন্যায্য মূল্য টুকুও নেই। প্রতিবিঘা ধান উৎপাদন করতে যে খরচ হয়, বর্তমানে ধান বিক্রি করে তার লেবার খরচই উঠছে না।  

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ধান কাটার জন্য বিঘাপ্রতি ৫ জন শ্রমিক প্রয়োজন। বর্তমানে ধান কাটা শ্রমিকের সংকট হওয়ায় শ্রমিকের মজুরি বেশি। ৬০০-৭০০ টাকার কমে কেউ ধান কাটতে আসছে না। এদিকে এক মণ ধান বিক্রি করলে আমরা সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পাচ্ছি। ধান প্রতি মণ ন্যুনতম ১ হাজার টাকা হলে চাষিদের আসল বাঁচবে। বর্তমানে উপায় না পেয়ে লস দিয়ে ধানের আবাদ করছি আমরা।  

কৃষক খাইরুল মালিথা বাংলানিউজকে বলেন, ধানের চাইতে এখন ধানের কুড়া, খুদের দামই তুলনামূলকভাবে বেশি। ১৪-১৫ টাকা কেজি ধান বিক্রি করছি আর সেখানে ধানের কুঁড়া ১০-১২ টাকা কেজি এবং খুদ ২০-২২ টাকা কেজি। এক কেজি ধান ১৪-১৫ টাকা বাজারে। এক কেজি ধান উৎপাদন করতেই তার চেয়ে বেশি খরচ হয়ে যাচ্ছে।  

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা মাঠ থেকে ছবিটি তুলেছেন মো. জাহিদ হাসান জিহাদ। ছবি: বাংলানিউজ

মিরপুর উপজেলার খয়েরপুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটা ধান সাড়ে ৫শ’ থেকে ৫৮০ টাকা, মাঝারি ৬শ’ থেকে ৬২০ এবং চিকন ধান ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা।  

জেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ৯০ ভাগ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান চাষ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় ধানের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ করেছে কৃষক। তবে ধানের দাম কম এবং শ্রমিক সংকট হওয়ায় চাষিরা বিপাকে পড়েছেন।  

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর ধানের উৎপাদন অনেক বেশি হয়েছে। এ সময় কৃষকরা শ্রমিক না পাওয়ায় অতিরিক্ত মজুরি দিতে হচ্ছে। ধানের ফলন ভালো হলেও কৃষকেরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। দাম না পেলে কষ্ট করে ধান আবাদ করা থেকে তারা বিমুখ হবেন। বাজার মন্দার বিষয়টি খতিয়ে দেখা অতীব জরুরি।

তিনি আরও বলেন, আমরা যদি আমাদের উৎপাদিত ধান থেকে চাল বিদেশে রপ্তানি করতে পারি তাহলে কৃষক ভালো দাম পাবে। সেইসঙ্গে শ্রমিক সংকটে আধুনিক ধান কাটা, মাড়াইয়ে যান্ত্রিক শক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দেন এই কৃষি কর্মকর্তা।  

এদিকে কৃষকদের কৌশলী হয়ে কম দামে ধান বিক্রি না করে বাড়িতে কয়েকদিন সংরক্ষণ করে বিক্রির পরামর্শ দিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক।  

জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কৃষকের ধানের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে হাটগুলোতে তদারকি বাড়ানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৮ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।