ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

শীতকালের ফুলকপি-বাঁধাকপি গ্রীষ্মকালে, লাভবান কৃষক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৩ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
শীতকালের ফুলকপি-বাঁধাকপি গ্রীষ্মকালে, লাভবান কৃষক

দিনাজপুর: বোরো ধান চাষ করে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দেশের অন্যান্য জেলার মতো দিনাজপুরের কৃষকরাও বেশ দুঃসময় পার করছেন। তবে এই বোরো মৌসুমে তথা গ্রীষ্মকালে শীতকালীন ফসল হিসেবে পরিচিত ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করে অনেক কৃষকই হচ্ছেন লাভবান। অসময়ে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করে কিছুটা শঙ্কার মধ্যে থাকলেও আর্থিকভাবে লাভের মুখ দেখায় বেশ খুশি অসময়ের সবজি চাষিরা। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালে বাজারে ফুলকপি ও বাঁধাকপি পেয়ে খুশি সাধারণ ক্রেতারাও।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শীতকালীন ফসল গ্রীষ্মকালে চাষ দিন দিন বাড়ছে। প্রাথমিকভাবে জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায় গ্রীষ্মকালে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ হলেও আগামীতে অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও ছড়িয়ে যাবে বলে আশা স্থানীয় কৃষকদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরও আগ্রহী চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছে।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের দলুয়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এ গ্রামের বেশির ভাগ কৃষক পাকা ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরই মধ্যে ওই গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেকের জমিতে দেখা গেল সবুজ আর সবুজ। সবুজ হওয়ার কারণ ধান নয়, ওই জমিতে চাষ করা হয়েছে ফুলকপি আর বাঁধাকপি।

সারাদেশে শীতকালীন প্রধান সবজির মধ্যে অন্যতম ফুলকপি ও বাঁধাকপি। এই গ্রামের আব্দুল মালেকসহ অনেকে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। সারাদেশে যখন ধান চাষ করে কৃষক মাথায় হাত দিয়েছেন, সেই সময় বীরগঞ্জের কিছু কৃষক ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করে অধিক লাভবান হয়েছেন। গ্রীষ্মকালে অর্থাৎ রমজান মাসে বাজারে ফুলকপি ও বাঁধাকপি পাওয়ায় অনেক ক্রেতা বেশি দাম হলেও কিনছেন।  শীতকালীন ফসল বাঁধাকপি গ্রীষ্মকালে চাষ হচ্ছে।  ছবি: বাংলানিউজদলুয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক বাংলানিউজকে জানান, তিনি এবছর উপজেলা একটি কৃষি খামারের সাড়ে ৩ একর জমি চুক্তিতে লিজ নেন। সেই জমির কিছু অংশে ফুলকপি (জাত-১১১) ও কুইকার জাতের বাঁধাকপি বীজ রোপণ করেন। চলতি বছরের মার্চ মাসের ২৫ তারিখে তিনি বীজতলা তৈরি শেষে চারা তুলে ওই জমির অন্য অংশগুলোতে রোপণ করেন। তার সাড়ে ৩ একর জমিতে বর্তমানে প্রায় ৭৫ হাজার চারা রয়েছে। চারা রোপণের ৫০ দিন পর থেকে তার ক্ষেত থেকে পরিপক্ক ফুলকপি ও বাঁধাকপি তুলে বাজারে বিক্রি শুরু করেন। এখন রমজান মাস হওয়ায় ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১১ টাকা বা কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, তিনি এবছর বোরো ধানের পরিবর্তে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেছেন। আগামীতেও তিনি চাষ করবেন। প্রায় ৭৫ হাজার পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি চারা রোপনের পর ৫০ হাজার পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রায় দেড় লাখ টাকায় বাজারে বিক্রি করেছেন। শীতকালীন ফসল গ্রীষ্মকালে ভালো ফলন এবং লাভ বেশি হওয়ায় আশপাশের গ্রামের অনেক কৃষক ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।  

ভবিষ্যতে বীরগঞ্জের বাইরে আশপাশের উপজেলাগুলোতেও গ্রীষ্মকালে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ ছড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

দলুয়া গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন ও ফকির উদ্দীন বাংলানিউজকে জানান, আমরাও আগামী বছর থেকে গ্রীষ্মকালে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করবো। ধান চাষ করে আমরা পথে বসেছি। ভবিষ্যতে আর ধান চাষ করার চিন্তা নেই আমাদের। যেই ফসলে আমাদের বেশি লাভ হবে, সেটিই আমরা চাষ করবো।  

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বীরগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১০ একর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করা হয়েছে। যা গত গ্রীষ্ম মৌসুমের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, ফুলকপি ও বাঁধাকপি শীতকালীন ফসল হওয়ায় গ্রীষ্মকালে চাষ করা অনেক কঠিন। আবহাওয়া খারাপ থাকলে গ্রীষ্মকালে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চারার অনেক ক্ষতি হয়। তারপরেও সঠিক সময়ে সার ও কীটনাশকসহ নিয়মিত পরিচর্যা করলে ক্ষতির বদলে উপকার পাওয়া যায়। কয়েক বছর ধরে বীরগঞ্জে গ্রীষ্মকালে স্বল্পপরিসরে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করা হলেও দিন দিন এর চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামীতে জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে এসব সবজি চাষ করা হবে। যদি অন্যান্য উপজেলাগুলোতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ সাফল্য আনে তাহলে চূড়ান্তভাবে কৃষকদের নিয়ে চাষ করা হবে। তবে বীরগঞ্জের কেউ কৃষক ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করতে আগ্রহী হন, তাহলে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান ওই কৃষি কর্মকর্তা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩০১ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।