ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

মাগুরায় পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
মাগুরায় পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক পাট কাটছেন দুই কৃষক। ছবি: বাংলানিউজ

মাগুরা: ‘এক আঁটি পাট পানিতে নিতি খরচ হচ্ছে ৫ টাকা। এক মণ পাট বানাতি আমাদের খরচ হচ্ছে দুই হাজার টাকা। শ্রমের দাম ৪শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা। পাট চাষে লাভ হচ্ছে না। জমি থেকে পাট কেটে পচাতি স্যালোমিন দিয়ে পানি দিতে হচ্ছে। তাও আবার পুখুর ডুবায় পাট পচানোর জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।’

কথাগুলো বলছিলেন মাগুরা সদর উপজেলার আঠারোখাদা ইউনিয়নের আড়াইশত গ্রামের কৃষক সুদীপ সেন।

মাগুরা জেলায় এবার পাটের উৎপাদন ভালো।

পাটের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। কিন্তু পাটের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

পাট চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কৃষকরা বলছেন, পাট পণ্য ব্যবহার রয়েছে দেশ-বিদেশে। পাটের চাহিদা থাকলে গত বছরের পাট এখনো ঘরে রয়েছে। নতুন পাটের দাম ভালো পেলে বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সরেজমিনে ঘরে দেখা যায়, আঠারোখাদা ইউনিয়ন বেনিপুর এলাকায় বেশিরভাগ ফসলের জমি খালি পড়ে আছে। পাটের দাম কম হওয়ায় পাট চাষের আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক। এবছরও পাটের দাম নিয়ে উদ্বেগে জেলার পাট চাষিরা।

তারা বলছেন, প্রান্তিক-ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকরা সরকারি দাম না পাওয়ায় পাট চাষ থেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে জানান একাধিক পাট চাষিরা। পাট কাটছেন দুই কৃষক।  ছবি: বাংলানিউজঅসাধু ব্যবসায়ীরা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা অধিক লাভবান হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।

মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামার বাড়ি দেওয়া তথ্য সূত্রে চলিত মৌসুমে মাগুরা পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৬ হাজার ১১০ হেক্টর। পাট চাষ হয়েছে  ৩২ হাজার ৫৫৫ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৮৩ বেল। (১ বেল = ১৮৭ কেজি)। মাগুরা সদর উপজেলায় পাট চাষ হয়েছে ৯ হাজার ৭শ হেক্টর। শ্রীপুর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৭৩০ হেক্টর। শালিখায় ৩ হাজার ৯২৫ হাজার হেক্টর। মহম্মদপুর উপজেলায় ১ হাজার ২শ হেক্টর। চলতি মৌসুমে পাট চাষ হয়েছে ৩২ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৫৫৫ হেক্টর কম। গত বছরের তুলায় এ বছর জেলায় পাট চাষ কমেছে।

সদর উপজেলার পাট চাষি আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর ৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন তিনি। এতে শ্রমিকের খরচ দিতে পারিনি। পাট পরিচর্যা, পাট কাটা পাটের আঁশ ছাড়ানোর সময় শ্রমিক পাওয়া যায় না। এ সময় শ্রমিকের বেশি দাম দিতে হয়েছে।

তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে পাট বোনা থেকে শুরু করে, পাট আঁশ ছাড়ানো পর্যন্ত প্রায় খচর ২ হাজার টাকা। পাটের চাষ শুরু থেকে রোদে শুকাতে প্রায় ১৫টা শ্রমিক লাগে। শ্রমিকদের মজুরি দিতে হয় জনপ্রতি ৪শ থেকে ৬শ টাকা। এতে প্রায় ১০ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।

পাট ব্যবসায়ী বলাই সাহা বাংলানিউজকে বলেন, পাট চাষিরা অধিকাংশ সময় তারা স্থানীয় বাজারে পাট বিক্রি করে থাকেন। পরিবহন এবং আর্থিক সংকটের কারণে প্রান্তিক কৃষকরা ন্যায্যমূল্য না পেয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গত বছর পাট গুদামে রয়েছে। পাটের দাম কম হওয়া বিক্রি করতে পারিনি বলে যোগ করেন ওই চাষি।

মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামার বাড়ি উপ-পরিচালক মো. জাহিদুল আমিন বাংলানিজউকে বলেন, কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে পাটবীজ, সার, কীটনাশক বিতরণ ও পাট চাষের ওপর উঠান বৈঠকসহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ জেলার মাটি পাট চাষের উপযোগী। তবে এ অঞ্চলে তোষা জাতের পাট চাষ হয়ে থাকে। তবে গতবারের চেয়ে এবার জেলায় পাটের চাষ কম হয়েছে। আমি আশা করি, এ বছর কৃষকরা ভালো দামে পাট বিক্রি করতে পারবেন। এ বছর পাটে তেমন কোনো পোকামাকড় দেখা দেয়নি। আশা করছি, এবার পাটের উৎপাদন ভালো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।