ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

ভাসমান বাজারে জমজমাট পেয়ারা বেচাকেনা, অপেক্ষা আমড়ার

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৯
ভাসমান বাজারে জমজমাট পেয়ারা বেচাকেনা, অপেক্ষা আমড়ার ভাসমান বাজারে নৌকাবোঝাই পেয়ারা। ছবি: বাংলানিউজ

ঝালকাঠি: বরিশাল বিভাগে ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার ভাসমান হাট-বাজারগুলোতে পেয়ারার বেচাকেনা বেড়েই চলছে। পুষ্টিকর ওই ফলটিকে স্থানীয়ভাবে গইয়া নামে ডাকা হয়। ঝালকাঠি সদর উপজেলা ও পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায় প্রচুর পেয়ারার আবাদ হয়। যা সারাদেশের তুলনায় এখানে বেশি উৎপাদন। আর খাল ও নদী বেষ্টিত এলাকায় ভাসমান বাজারগুলোতে ঘিরে এখন রমরমা পেয়ারার বাজার।

খুচরা-পাইকার ব্যবসায়ী ও চাষিদের উপস্থিতিতে বর্তমানে জমজমাট ঝালকাঠির ভিমরুলির আর পিরোজপুরের আটঘর-কুড়িয়ানার ভাসমান বাজার।

স্থানীয় চাষিরা বলছেন, বিগত বছর ধরে পেয়ারা ও আমড়ার চাষির সংখ্যা স্থিতিশীল থাকায় বাড়ছেও না কমছেও না।

তবে, গতবারের চেয়ে এবার পেয়ারার মান যেমন ভালো হয়েছে, তেমনি উৎপাদনও ভালো হয়েছে। আর এবার গতবছরের থেকে দামও বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে।

কাপড়কাঠি এলাকার পেয়ারার চাষি রতন হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, আষাঢ় মাস থেকে বাজারে পেয়ারার আমদানি শুরু হয়েছে। যা আশ্বিন মাসে গিয়ে শেষ হবে। এবারে চাহিদা বেশি থাকায় শুরু থেকেই পেয়ারার দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। চলতি বছরে মণপ্রতি (দাদনসহ ৪২ কেজি) ৩ থেকে ৫শ টাকার মধ্যে পেয়ারার দর ওঠানামা করছে। গতবছর তো ২শ টাকার নিচেও নেমেছিল পেয়ারার দর। ভাসমান বাজারে নৌকাবোঝাই পেয়ারা।  ছবি: বাংলানিউজতিনি বলেন, আমার ৫ কাঠা জমিতে যে পরিমাণ ফল হয়েছে, তাতে এবার বাজার এভাবেই থাকলে লোকসানের কোনো শঙ্কা দেখছি না।

শেখর নামে আরেক চাষি বলেন, আটঘরের কুড়িয়ানা ও ভিমরুলি পাশাপাশি হওয়ায় এ অঞ্চলের চাষিরা দিনে দিনে লাভবান হচ্ছেন। এক কথায় কৃষি বিপ্লবও ঘটছে এ অঞ্চলে। তবে গত কয়েকবছর ধরে এ অঞ্চলে পেয়ারার চাষির সংখ্যা বাড়েনি। কারণ বিগত বছরের পেয়ারার দর কম ছিল। এবার যে দর রয়েছে তা বিগত সময়ের থেকে ভালো। উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে পেয়ারার আমদানিও বেশি রয়েছে।

ভাদ্র মাস থেকে বাজার আমড়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে বলে যোগ করেন আমড়া চাষি সমর।

তিনি বলেন, এখন যেমন ভাসমান বাজারে পেয়ারার বিক্রি হচ্ছে, তেমনি ভাদ্র থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত আমড়ার একক আধিপত্য থাকবে আটঘর-কুড়িয়ানা ও ভিমরুলির ভাসমান বাজারজুড়ে। যদি পেয়ারার মতো আমড়ার চাহিদা বেশি থাকে, তবে চাষিরা আমড়ারও ভালো দাম পাবেন। কারণ এবার আমড়ার উৎপাদনও এ অঞ্চলে ভালো হয়েছে বলে যোগ করেন তিনি।

স্থানীয় পাইকার মিলন ব্যাপারী বাংলানিউজকে বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আটঘর ও ভিমরুলি কেন্দ্রীক ভাসমান বাজারকে ঘিরে নৌ ও সড়কপথের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। তাই দিনে দিনে পাইকারদের সংখ্যা বাড়ছে, স্থানীয় চাষিদের উৎপাদিত ফসলের চাহিদা বাড়ছে। এতে দামও ভালো পাচ্ছেন তারা। এবারে পেয়ারার গুণগত মান ভালো, গতবারের মতো পেয়ারার ওপরের অংশে কালো দাগ দেখা যায়নি। খেতেও সুস্বাদু এ অঞ্চলের পেয়ারা।

গত বছর দেড়শ’ টাকায় মণপ্রতি পেয়ারা বিক্রি হলেও এবার ভালো মানের পেয়ারা ৩শ টাকার নিচে কোনো চাষিকেই বিক্রি করতে হয়নি বলে বাজার ঘুরে জানা গেছে। ভাসমান বাজারে নৌকাবোঝাই পেয়ারা।  ছবি: বাংলানিউজপিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানার ভাসমান বাজার শুক্রবারসহ সপ্তাহে দু’দিন মিললেও পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভিমরুলির বাজার বর্তমান সময়ে সপ্তাহে প্রতিদিন বসছে।  

এদিকে সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আটঘরের বাজারে পেয়ার বিক্রি শুরু হয়ে সকাল ৮টার মধ্যে বিলীন হয়ে যায়, আর ভিমরুলির বাজার শুরু হতে হতে সকাল প্রায় ১০টা বেজে যায়, যা গড়ায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে পেয়ারার একক নিয়ন্ত্রণে বাজারগুলো। তবে বাজারের লেবু, কলা, পেঁপে, ডাব-নারিকেলও পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে প্রতিদিনের মতো ছুটির দিনগুলোতে প্রচুর পর্যটক ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৯
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।