ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

মাল্টা চাষে সফল গাজীপুরের সাচ্চু

মো. রাজীব সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯
মাল্টা চাষে সফল গাজীপুরের সাচ্চু বাগানের গাছে মাল্টা। ছবি: বাংলানিউজ

গাজীপুর: ২০১৭ সালে ডিসেম্বরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বরাব এলাকায় জমি ভাড়া নিয়ে মাল্টা চাষ শুরু করেন সিঙ্গাপুর ফেরত শহিদুল ইসলাম সাচ্চু (৪০)। বর্তমানে তার বাগানের লাগানো মাল্টা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। মাল্টা চাষ করে তিনি এখন সফল।

শহিদুল ইসলাম সাচ্চু মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার কোলা এলাকার শাহজাহান খানের ছেলে। তিনি ৮ বছর আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী পুকুরপাড় এলাকায় বাড়ি করে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন।

মাল্টাচাষি শহিদুল ইসলাম সাচ্চু বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৯৭ সালে আর্থিক অবস্থা পরিবর্তন ঘটাতে সিঙ্গাপুরে যাই। সেখান থেকে কিছু টাকা জমিয়ে ২০১১ সালে দেশে ফিরে আসি। একবছর পর গেঞ্জি তৈরির কারখানা করে ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু সেখানে কয়েকজন কর্মচারী আমার সঙ্গে প্রতারণা করেন। এতে ব্যবসায় বড় ধরনের লোকসান হয়। পরে কয়েকজন বন্ধু মিলে ছাগল পালনের উদ্যোগ নেই। ঝুঁকি ও বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে ছাগল পালনের উদ্যোগটি বাদ দেই। পরে চার বন্ধুকে নিয়ে উপজেলার বরাব এলাকায় দুলাল মার্কেট এলাকায় ১১ বিঘা জমি ভাড়া নিয়ে মাল্টা চাষ শুরু করি। বর্তমানে বাগানে ১ হাজার ৫০০ মাল্টা গাছ রয়েছে। এবার প্রথম গাছে মাল্টা ধরতে শুরু করেছে। বাগানে এখনো অনেক মাল্টা রয়েছে। বাজারেও বিক্রি করেছি মাল্টা। প্রতিবছর জমি ভাড়া দিচ্ছি প্রায় ২ লাখ টাকা। বাগান দেখভাল করছেন বেতনভুক্ত ৪ জন কর্মচারী। পাশাপাশি আমার বন্ধুরাও বাগানের পরিচর্যা করেন। বাগানে মাল্টা ছিঁড়ছেন শহিদুল ইসলাম সাচ্চু।  ছবি: বাংলানিউজশহিদুল ইসলাম সাচ্চু বলেন, মাল্টা বাগানে কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করিনি। নিজেই তরল জৈব সার তৈরি করে বাগানের গাছগুলোতে দেই। ১শ লিটার পানির মধ্যে ১০ কেজি গোবর, এক কেজি বেসন, এক কেজি চিটা গুড় ও এক মুষ্টি মাটি মিশিয়ে একটি পাত্রে তিনদিন রেখে দেই। এভাবে তৈরি হয় তরল জৈব সার। পরে তা গাছগুলোতে দেই। প্রতিদিন মাল্টা বাগান দেখতে আশপাশ অনেক লোকজন আসছে। তারা বাগান থেকে কিনে নিয়ে যায় তাজা ও ভেজালমুক্ত মাল্টা।

শহিদুল ইসলাম সাচ্চু আরও বলেন, যখন আমি মাল্টা চাষ শুরু করি, তখন অনেকেই আমাকে নিয়ে হাসি-তামাশা করতো। কারো কথায় কান ভারি না করে মাল্টা চাষে এগিয়ে যাই। মাল্টা চাষ করে আমি এখন সফল। তবে, সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে আরও ভালো করতে পারবো।

ওই মাল্টাচাষি বলেন, প্রথম বছরই এক‌টি গা‌ছে ৬০/৭০টি ক‌রে মাল্টা ধ‌রে‌ছে। ৫টি মাল্টার ওজন প্রায় এক কে‌জি। এ বছর পাইকারি বি‌ক্রি হ‌চ্ছে ১০০টাকা কে‌জি দ‌রে। প্র‌তিটি গাছ থে‌কে ১৩০০/১৪০০ টাকার মাল্টা বি‌ক্রি করেছি। আগামী‌তে কমপ‌ক্ষে এক‌টি গা‌ছে ২৫০টি ফল ধর‌বে। সে‌ক্ষে‌ত্রে প্র‌তি গাছ থে‌কে প্রায় ৫০০০ টাকার ফল বি‌ক্রি করা যা‌বে। ১ হাজার ৫০০টি গা‌ছের পেছ‌নে জ‌মি ভাড়া, সার ও শ্র‌মিকসহ মোট খরচ হয় প্রায় ৫ লাখ টাকা। বর্তমান বাজার দর হি‌সাবে প্র‌তি গা‌ছের পেছ‌নে খরচ হয় প্রায় ৩৩৫ টাকা। প্র‌তিটি গাছ থে‌কে লাভ প্রায় সা‌ড়ে ৪ হাজার টাকা। বছ‌রে এ বাগান থে‌কে ৬০/৭০ লাখ টাকার লাভ থাক‌বে।

কালিয়াকৈর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিষ কুমার কর বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলায় আরও কয়েকটি এলাকায় মাল্টার বাগান করা হয়েছে। তবে, বরাব এলাকার শহিদুল ইসলাম সাচ্চুর মাল্টার বাগান সবচেয়ে বড়। তার মাল্টার বাগান পরিদর্শন করেছি। এদেশে মাল্টা চাষ বাড়তে থাকলে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না। দেশে বারি মাল্টা-১ এর চাহিদা বাড়ছে। এই জাতের মাল্টা খেতে মিষ্টি ও সুস্বাদু। এ মাল্টার পেছনে পয়সার মতো চিহ্ন থাকে। নতুন করে এক একর জমিতে মাল্টা চাষ করলে সরকারিভাবে চারা, সার ও স্পে মেশিনসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু চাষিকে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়:১৬১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯
আরএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।