ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

আমন-আউশের মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা চাষে কৃষকের বাড়তি আয়

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২০
আমন-আউশের মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা চাষে কৃষকের বাড়তি আয়

ফেনী: ইরি-বোরো ধান হয় না ও আমন-আউশের মধ্যবর্তী সময়ে খালি পড়ে থাকা জমিতে সরিষা চাষ করে বাড়তি আয় করছেন ফেনীর কৃষকরা। বীজ বপনের ৭০ থেকে ৮০ দিনে সরিষায় ফলন আসে। ক্ষুদ্র এ তেলজাতীয় শস্য সরিষা চাষ সহজ এবং বাজারমূল্য থাকায় ফেনী জেলায় এ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।  

ফেনী সদর উপজেলার উত্তর কাশিমপুর, সোনাগাজীর আমিরাবাদ ও ছাগলনাইয়ার শুভপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় হলুদে ফুলে ছেয়ে গেছে মাঠ।  

কৃষকরা বলছেন, সরকারি সহযোগিতায় বীজ ও চাষের পরামর্শ পাওয়ায় বেড়েছে সরিষার আবাদ।

বছরের যে সময়টায় মাঠ খালি পড়ে থাকে, সে সময়টা সরিষা আবাদ করে লাভবানও হচ্ছেন তারা।

ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসমে জেলায় চার হাজার দুইশ একর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে সদর উপজেলায়। এখানে আবাদ হয়েছে দুই হাজার তিনশ একর জমিতে এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ফাজিলপুরে দুইশ ৩৪ একর। সরকারিভাবে জেলায় ১৫০ জন কৃষককে প্রদর্শনীর জন্য বিনামূল্যে নগদ অর্থ এবং দু’হাজার কৃষককে বিঘা প্রতি প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।

ছবি- বংলানিউজ

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ফেনীর তথ্যমতে, গত মৌসুমে জেলার ছয় উপজেলায় তিন হাজার পাঁচশ ২০ একর জমিতে বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫, ৯ ও ১৭ চাষ করে এক হাজার ৮শ ৬৪ মেট্রিক টনের বেশি উৎপাদন হয়েছিলো। এবছর চার হাজার দুইশ একর জমিতে বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫ ও বারি সরিষা-১৭ চাষ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, প্রতি একরে সরিষা উৎপন্ন হবে জাতভেদে ৪০০ থেকে ৪৫০ কেজি। বাজারে প্রতিকেজি বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। সরিষা ভাঙলে প্রতি একরে তেল আসে ৪০ থেকে ৪৫ কেজি। প্রতিকেজি সরিষার তেল বাজারে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়।

ইরি-বোরো ধান হয় না এমন জমিতে আমন ও আউশের মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা চাষ করে কৃষকরা বাড়তি আয় করতে পারেন। বীজ বপনের ৭০ থেকে ৮০ দিনে সরিষায় ফলন আসে।

ফেনী সদর উপজেলার উত্তর কাশিমপুর এলাকার বাসিন্দা সৌরভ পাটয়োরী জানান, তিনি শখের বসে নিজের পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য এক একর আট শতাংশ জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। গেলো বছরও ৬৬ শতাংশ জমিতে সরিষার লাগিয়েছিলেন। তাতে ফলনও হয়েছে তার বেশ। তাই লাভের আশায় এবারও তিনি আবাদ বাড়িয়েছেন।

ছবি- বাংলানিউজ

ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের জগন্নাথ সোনাপুর গ্রামের চাষি কবির আহম্মদ জানান, এবছর ৯০ শতাংশ জমিতে তিনি সরিষা চাষ করেছেন। এবার ৩৬০ থেকে ৩৭০ কেজি সরিষা পাবেন বলে তিনি আশাবাদী।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিঠুন ভৌমিক জানান, বারি সরিষা-১৪ চাষ করতে প্রতি একরে চাষ, বীজ, সার-ওষুধ ও সেচে কৃষকের সর্বোচ্চ ব্যয় হয় ১০ হাজার টাকা। আর উৎপাদন হয় ৬০০ কেজি, যার বাজারমূল্য ৪৮-৫০ হাজার টাকা। আমন ও আউশের মধ্যবর্তী সময়ে কম খরচে বাড়তি আয়ের জন্য কৃষকদের মধ্যে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার জানান, সরিষা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য রারি সরিষা-১৪, ১৫ ও ১৭ জাতের ৪০টি প্রদর্শনী ও ৬শ কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।

ছবি- বাংলানিউজ

ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান বলেন, গত বছর নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ও চলতি মাসে ৫ জানুয়ারি প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষকের জমি তৈরিতে বিঘ্ন হয় এবং ফসল বিনষ্ট হয়। তাই এবার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও জানান, সরিষা চাষ জনপ্রিয় করতে কৃষিবিভাগ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। কৃষক খালি পড়ে থাকা অনাবাদী জমিতে সরিষা চাষ করলে লাভবান হবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২০
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।