ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

আতঙ্ক নিয়ে উৎপাদন করেও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত চাষিরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২০
আতঙ্ক নিয়ে উৎপাদন করেও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত চাষিরা

চুয়াডাঙ্গা: আছে করোনা আতঙ্ক। আছে মৃত্যুভয়ও। তবুও দায়িত্ব থেকে এক পা সরে আসেননি চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রান্তিক চাষিরা। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি নিয়ম করে খাদ্যশস্য উৎপাদনে নিজেদের আত্মনিয়োগ করছেন। ক্রান্তিকালে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাখতে এমন নিরলস পরিশ্রম করলেও ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চুয়াডাঙ্গার হাজারো কৃষক।

করোনা ভাইরাসের থাবায় দেশে যাতে কোনোভাবেই খাদ্য সংকট তৈরি না হয় তার জন্য অনেকটা যুদ্ধ করছেন তারা। করোনা ভীতিকে উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়ে খাদ্যশস্য উৎপাদনে মাঠে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

সংকটময় মুহূর্তে দেশের কল্যাণ তাদের এখন প্রধান লক্ষ্য। তবে ঘাম ঝরানো উৎপাদিত সেই ফসল বাজারজাতকরণ নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। এতে করে কষ্টার্জিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।  

জেলার সদর উপজেলার বেলগাছি, মাখালডাঙ্গা, দ্বীননাথপুর, গাড়াবাড়িয়া গ্রামসহ প্রতিটি গ্রামেই দেখা গেছে মাঠে থাকা বিস্তীর্ণ জমির ধান কাটছেন কৃষকরা। লক্ষ্য খুব দ্রুততম সময়ে ধান কেটে পরবর্তী ফসলের জন্য বীজতলা প্রস্তুত করা। কেউ কেউ আবার ভুট্টা কাটার পর নতুন করে বোরো ধান লাগাতে ব্যস্ত। শুধু ধান নয়, মৌসুমি ফল তরমুজ, লাউ, পেঁপে, বেগুন, শশা, করলা, ধনেপাতাসহ নানা ধরনের সবজি উৎপাদনে দিনরাত পরিশ্রম করছেন কৃষকরা।  

চুয়াডাঙ্গার মাখালডাঙ্গা গ্রামের কৃষক লতিফ মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, মাঠে ধান কাটতে তাদের আরও কয়েকদিন সময় লাগতো। তারপরও তারা আগেভাগেই ধান কাটছেন। খাদ্য সংকট যেন দেখা না দেয় সেজন্য দ্রুত সময়ে এ ধান কেটে বাজারে বিক্রি করা তাদের লক্ষ্য। একইসঙ্গে নতুন ফসলের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন তারা।  

অপর কৃষক রহমান মোল্লা বাংলানিউজকে জানান, করোনার ভয়কে তুচ্ছ করে তারা মাঠে আছেন। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে এই সংকটে তারাও সরকারকে সহায়তা করতে চান।  

সবজি ক্ষেত।  ছবি: বাংলানিউজতিনি জানান, এ ক্ষেত্রে কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে কৃষকের ঘাম ঝরানো উৎপাদিত ফসল বাজারজাতকরণ নিয়ে। করোনা পরিস্থিতিতে বাইরের জেলা থেকে ব্যাপারী ও ব্যবসায়ীরা জেলায় আসতে না পারায় এ সংকটের মূল কারণ বলে তিনি মন্তব্য করেন। এমন বাস্তবতায় হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও কষ্টার্জিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।  

গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দীন বাংলানিউজকে জানান, আগে তাদের উৎপাদিত পণ্য মাঠ থেকে ক্রয় করতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা আসতো। কিন্তু করোনার কারণে তারা আসতে পারছেন না। চাষিরা যে নিজ জেলা থেকে ট্রাকে করে নিয়ে যাবেন সেখানেও বিপত্তি। করোনা সংকটে ঢাকাতে পরিবহন খরচ যেখানে ১০ হাজার টাকা ছিল তা এখন দ্বিগুণ। সব মিলিয়ে বাম্পার ফলন ফলিয়েও নতুন এক সংকটের মধ্যে এ জেলার কৃষকরা।  

কৃষি উদ্যোক্তা খাইরুল ইসলামের মতে, কৃষি শিল্পে এমন বিরুপ প্রভাব দ্রুত কাটিয়ে ওঠা না গেলে দেশের খাদ্য সংকটের আশঙ্কা থেকেই যাবে। এমন বাস্তবতায় দ্রুত এ সংকট নিরসনসহ কৃষি ও কৃষকদের বাঁচাতে সরকারি প্রণোদনাসহ বিশেষ সহযোগিতার দাবি তার।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাশরুর বাংলানিউজকে জানান, করোনা যুদ্ধে কৃষকরাও সামনের সারির যোদ্ধা। কৃষি সমৃদ্ধ দেশ বলেই তারা করোনা মোকবিলায় অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। কৃষকদের উৎপাদিত খাদ্যশস্য বিক্রি ও বিপণনের ক্ষেত্রে চুয়াডাঙ্গা কৃষি বিভাগ কাজ করছে বলেও দাবি তার। একইসঙ্গে দ্রুত এ সংকট নিরসন করে এ ব্যাপারে সরকারকে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।