ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

অবিক্রিত আম-লিচুর বহু বাগান, অনলাইনে বেচাকেনার চিন্তা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৪ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২০
অবিক্রিত আম-লিচুর বহু বাগান, অনলাইনে বেচাকেনার চিন্তা আম-লিচু

ঢাকা: রাজশাহীতে ১৫ মে আম গুটিজাতের আম নামানোর কথা থাকলেও পরিপক্ব না হওয়ায় নামানো হয়নি। আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিপক্বতা না আসায় তারা আম নামাচ্ছেন না। আমের আঁটি শক্ত হতে আরও সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করতে হবে।

গোপাল ভোগ, রাণী প্রসাদ, লক্ষণ ভোগ এবং হিম সাগর নামার কথা ২ জুন। এছাড়া ল্যাংড়া, আম্রপালি ও ফজলি ১৬ জুন এবং আশ্বিনা নামানো শুরু হবে ১ জুলাই থেকে।

ফলে চাষিদের শঙ্কা বেড়েই চলেছে। চাষিরা সংশ্লিষ্ট জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উদ্বেগের কথাও জানিয়েছেন।

বর্তমানে করোনার কারণে এসব মৌসুমি ফলের ক্রেতা নেই বলা চলে। পরিবহন সংকটের কারণে সারাদেশে প্রায় ৭ শতাংশ আম ও লিচুর বাগান অবিক্রিত রয়ে গেছে।

আম ও লিচু যেন সঠিকভাবে বিক্রি হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে যোগাযোগ করছেন চাষিরা। সঠিকভাবে সারাদেশে আম লিচু সরবরাহের জন্য অনলাইনের মাধ্যম ব্যবহারের চিন্তা করা হচ্ছে। যেন অনলাইনের মাধ্যমে সারাদেশে আম ও লিচু বিক্রি করা যায় এবং চাষিরা সঠিক দাম পান।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, করোনা সংকট মোকাবিলায় এবং আম-লিচু চাষিদের বাঁচাতে অনলাইনে আম ও লিচু বিক্রি করা হবে। অনলাইনে আম চলে যাবে বিকাশে চাষির কাছে টাকা চলে আসবে। ডিজিটাল ভাবে চাষির আম-লিচু বিক্রি করার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। বর্তমানে অনেক শিক্ষিত ছেলেরা বেকার আছে। যারা ডিজিটালভাবে অনেক সাউন্ড এদের আমরা কাজে লাগাবো।

শুধু আম নয় লিচুর ক্ষেত্রে বেশি ভয়ে আছেন চাষিরা। লিচু সাধারণত ২০ মে থেকে শুরু হয়ে ২০ জুনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এই সময়ের মধ্যে করোনা সংকট থাকবে। যেমন অল্প সময়ের মধ্যেই বাজারে আসবে নারায়ণগঞ্জের কদমি লিচু। এরপরে আসবে পাতি লিচু ও চায়না-৩ লিচু।

মেহেরপুর জেলায় ডালে ডালে থোকা থোকা লিচুতে ভরে গেছে গাছ। স্থানীয় মোজাফফর জাতের সঙ্গে বোম্বাই ও চায়না জাতের লিচু চাষ এবার মেহেরপুরে বেড়ে গেছে। ডালে ডালে লিচু থাকলেও চাষির মুখে হাসি নেই।

আম-কাঁঠালের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় মেহেরপুর জেলায় ৬২০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। আম চাষ হচ্ছে ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১৩ টন আম ও লিচু হবে সাড়ে চার টন। যা থেকে ৩৫ কোটি টাকার বেচাকেনা হবে বলে আশা করছিল কৃষি বিভাগ এবং চাষিরা। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে মিলছে না চাষিদের সেসব হিসাব। শঙ্কার কথা চাষিরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরাবর জানিয়েছেন।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. কামরুল হক মিঞা বাংলানিউজকে বলেন, আম ও লিচু সারাদেশে সরবরাহের জন্য আমরা সভা করেছি।   সভায় ডিসি-এসপিসহ সংশ্লিষ্টরা ছিলেন। আম ও লিচু বহনকারী ট্রাকে ডিসি স্যারের প্রত্যায়ন পত্র থাকবে।

গত কয়েক বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর লিচু ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়। এতে বেশি দামে বাগান কিনে রাখেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এবার পরিস্থিতি পুরো উল্টো। করোনা মোকাবিলায় সারাদেশে অচলাবস্থা। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই দোকানপাট বন্ধ। কৃষিপণ্য বিপণন ও বিতরণে বিধিনিষেধ না থাকলেও ঘর থেকে বের হতে না পারায় এবার ফল কেনার ক্রেতা সংকটে পড়েছে। ক্রেতারা এবার আম ও লিচুর বাগানও কিনতে যাননি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহীর মনিটরিং ও মূল্যায়ন সূত্র জানায়, আম ও লিচু নিয়ে কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে দশম। ২ লাখ ৩৫ হাজার একর জমিতে ১২ লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে।

জুন,  জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাসে ৬০ শতাংশ ফল উৎপাদিত হয়। অথচ এই সময়ে দেশ করোনার কবলে। সুতরাং চাষিরা সমস্যায় পড়বেন। কারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে পাশাপাশি সরবরাহের একটা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেকে ভয়ে বাজারে যেতে পারছেন না। ফলে কৃষকের আম লিচু ভোক্তার হাতে পৌঁছে দিতে অনলাইন প্লাটফর্ম বেছে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও হোম ডেলিভারি, পার্সেল সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা হবে। চাষির আম লিচুর পাইকারি ব্যবসায়ীদের যাতায়াত ও থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এমন সব প্রস্তাবনা প্রস্তুত করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার বিভাগ।

শনিবার (১৬ মে) জুম প্লাটফর্মের মাধ্যমে ‘আম-লিচু ও অন্যান্য মৌসুমি ফল বিপণন’ বিষয়ক এক অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হবে। কৃষিমন্ত্রী ড.  মো. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হবে সভা। সভায় জনপ্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ, কর্মকর্তা, ফল চাষি, ফল ব্যবসায়ী, আড়তদার সংযুক্ত থাকবেন। অনলাইন সভাটি পরিচালনা করবেন কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান। অনলাইনে কীভাবে আম-লিচু বিক্রি করা যায় এই জন্য মিটিংয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক সংযুক্ত থাকবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (হর্টিকালচার উইং)  মো. কবির হোসনে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা উদ্যোগ না নিলে চাষিরা আম-লিচুতে লোকসানে পড়বেন। অনলাইনে আম-লিচু বিক্রির পথ বের করবো। এছাড়াও হোম ডেলিভারি ও পার্সেল সার্ভিসের ব্যবস্থা করবো। ব্যবসায়ীরা যাতে নিরাপদে সারাদেশে মৌসুমি ফল কিনতে পারেন এই ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে পরিবহন ও আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে।   আম ও লিচু সারাদেশে সরকারের জন্য একটা প্রস্তাবনা তৈরি করেছি। সভায় এটা উপস্থাপন করবো। কৃষকের কষ্টের আম-লিচু ভোক্তার ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। কারণ অনেক বাগান এখনো অবিক্রিত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২০
এমআইএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।