ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

গাজীপুরে কমেছে বায়ু দূষণ, বেড়েছে ফল-শাক-সবজির ফলন

মো. রাজীব সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৬ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২০
গাজীপুরে কমেছে বায়ু দূষণ, বেড়েছে ফল-শাক-সবজির ফলন

গাজীপুর: গাজীপুরে বায়ু দূষণের মাত্রা অনেক কমে গেছে। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে বায়ু দূষণের মাত্রা (পিএম ১০) ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৩৮০-৪০০ মাইক্রো গ্রাম। আর এ বছরের এপ্রিলে তা কমে ৯৬.৯২-তে নেমে এসেছে। আর মে মাসে আরও কমে হয়েছে ৭৬.৭৮। যার ফলে বেড়েছে নানা জাতের ফল, শাক-সবজি ও ফসলের ফলন।

জেলাটিতে বায়ু দূষণের প্রধান কারণ হচ্ছে ইটভাটার কালো ধোঁয়া, বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য-ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া এবং সড়কের ধুলোবালি।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে দূষণ বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন।

অভিযানে গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও জেলায় বিভিন্ন এলাকায় ২৬৬টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরও ওইসব ইটভাটার মালিকরা অবৈধভাবে ইটভাটা চালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের অভিযানের কারণে ইটভাটা পরিচালনায় মালিকরা ব্যর্থ হয়। এছাড়াও অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এসব ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে চার কোটি টাকার অধিক জরিমানা আদায় করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে ৩ জন ইটভাটা মালিককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডও দেওয়া হয়। আর এসব ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়ায় সুফল মিলতে থাকে জানুয়ারি মাস থেকেই।

গাজীপুর জেলায় গত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বায়ু দূষণের মাত্রা (পিএম ১০) ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৩৮০-৪০০ মাইক্রো গ্রাম। পরে জানুয়ারি মাসে তা কমে ২৭৯.৮৮, ফেব্রুয়ারিতে ২৭২.৫৯, মার্চে ১৯২.৭৯, এপ্রিলে ৯৬.৯২ এবং সর্বশেষে মে মাসে কমে ৭৬.৭৮ হয়েছে। যা কয়েক মাস আগের তুলনায় অনেক কম।
ছবি: বাংলানিউজগত চার মাসে গাজীপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ ও বিভিন্ন কলকারখানা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কারণে বায়ু দূষণের মাত্রা কমেছে। বায়ু দূষণের মাত্রা কম থাকায় ফল, শাক-সবজি এবং ফসলের ভালো ফলন হয়েছে গাজীপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুস সালাম সরকার জানান, গত ডিসেম্বর ও চলতি বছরে জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ব্যাপকভাবে অবৈধ ইটভাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। গাজীপুরের কোনো এলাকায় একটি অবৈধ ইটভাটাও চলতে দেওয়া হবে না। আগামীতে কেউ অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা বাদল মিয়া জানান, গত ডিসেম্বর মাস থেকেই গাজীপুরের পরিবেশ অধিদপ্তর অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে। পরে সিটি করপোরেশনের বাইমাইল, বাগিয়া, কাতলাখালী, গাছা, বাসন ও কারখানা বাজার এলাকাসহ সিটি করপোরেশনের সবগুলো এলাকায় সমস্ত ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যার ফলে আমাদের এলাকার পরিবেশ গত বছরের চেয়ে এবার অনেক ভালো হয়েছে। গাছের ফল, শাকসবজি ও ফসল অনেক ভালো হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) জিয়াউল হক জানান, প্রতি মাসের ২৪ ঘণ্টা গড় হিসেবে গাজীপুর জেলায় গত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বায়ু দূষণের মাত্রা (পিএম ১০) ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৩৮০-৪০০ মাইক্রো গ্রাম। পরে এপ্রিলে ৯৬.৯২ এবং সর্বশেষে মে মাসে কমে ৭৬.৭৮ হয়েছে। যা কয়েক মাস আগের তুলনায় অনেক কম। বায়ু দূষণের প্রধান কারণ হচ্ছে ইটভাটার কালো ধোঁয়া। এছাড়া কল কারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া এবং সড়কে ধুলোবালি। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পুরোপুরিভাবে ইটভাটা চালু থাকে। যার ফলে ওই দুই মাস বায়ু দূষণের মাত্রা বেশি ছিল। পরে গাজীপুরে অভিযান চালিয়ে কয়েকশ অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। এছাড়া করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক কলকারখানা, যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। যার ফলে বায়ু দূষণের মাত্রা অনেক কমে গেছে।
ছবি: বাংলানিউজগাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ায় বায়ু দূষণ অনেকটাই কমেছে। এছাড়া লকডাউনের কারণে রাস্তাঘাটে ধুলোবালি, কলকারখানার ধোঁয়া কমে যাওয়ায় এর সুফল পাওয়া গেছে।

গাজীপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মাহবুব আলম জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছরের আবহাওয়া অনেক ভালো ছিল। ফলমূল-শাক-সবজি ও ফসল উৎপাদনের জন্য এটা একটি ভালো দিক। ইটভাটা ও কলকারখানা বন্ধ থাকায় বায়ু, পানি ও পরিবেশ দূষণের মাত্রা অনেক কম ছিল। যার কারণে ফলন গতবারের চেয়ে এ বছরের অনেক ভালো হয়েছে। এছাড়াও জনস্বাস্থ্যের জন্য এই আবহাওয়াটা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২০
আরএস/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।