ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

করোনা: লোকসান গুনছে বান্দরবানের আম চাষিরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৫ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২০
করোনা: লোকসান গুনছে বান্দরবানের আম চাষিরা গাছে ঝুলছে কাঁচা আম। ছবি: বাংলানিউজ

বান্দরবান: বান্দরবানে আম্রপালি, হাঁড়িভাঙা, বারি আম-৪, রাংগোয়াইসহ বিভিন্নজাতের আমের বাম্পার ফলন হলেও করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে লোকসান গুনছে চাষিরা। ফলে চাষিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

বান্দরবানে পাহাড়ের পাদদেশে এখন গাছে গাছে আম। পাহাড়ে মাটি ও জলবায়ু আম উৎপাদনের জন্য উপযোগী।

ফলন ভালো হওয়ায় লাভের আশায় বুক বেঁধে ছিলেন চাষিরা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে চাষিদের সেই স্বপ্ন হতাশায় পরিণত হয়েছে। করোনায় সংক্রমণ এড়াতে আম কিনতে আসছেন না ব্যবসায়ীরা। যার কারণে আম বিক্রিও হচ্ছে না। ফলে উৎপাদন খরচ তুলতে চরম বেগ পেতে হচ্ছে চাষিদের। এতে আর্থিভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় আম চাষিরা।

এদিকে একাধিক আম চাষি বাংলানিউজকে জানান, করোনার কারণে বাইরের আম ব্যবসায়ীরা বান্দরবানে আসছেন না। ফলে আম তেনম বিক্রি হচ্ছে না। যাও কিছু বিক্রি হচ্ছে তাতে লাভের সম্ভবনা নেই। তার ওপর কাচাঁ আম বেশি দিন রাখাও যায় না। ফলে কম দামেই আম বিক্রি করতে হচ্ছে।

আবার অনেকেই অর্থ সংকটের কারণে কাচাঁ অবস্থাতেই আম্রপালি বিক্রি করে দিচ্ছেন কম দামে। তাদের মতে, পাহাড়ে উৎপাদিত আম্রপালি আমের খ্যাতি দেশজুড়ে। এই আমের চাহিদা থাকায় সময়ের সঙ্গে এখন পাহাড়ে বেড়েছে এর চাষাবাদ। কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থ সংকটের কারণে বাধ্য হয়েই কাঁচা আম বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা।

গাছে ঝুলছে কাঁচা আম।  ছবি: বাংলানিউজবান্দরবানের যৌথ খামার এলাকার আম চাষি মো. আলতাফ বাংলানিউজকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় আমের উৎপাদন বেশি হয়েছে। তবে করোনার কারণে আম বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। সময় মতো আম বাজারজাত করতে না পারলে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে। করোনার কারণে বিগত বছরের মতো এবার ভালো দাম পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে আমাদের।

এদিকে বান্দরবান কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বান্দরবান জেলায় রাংগোয়াই জাতের আমের চাষ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। আমের এই জাতটি বান্দরবানের থানচি এবং নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত হয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমার থেকে এদেশে প্রবেশ করেছে। এখন থেকে প্রায় ১৫/২০ বছর আগে পাহাড়িরা এই আম মিয়ানমারের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বান্দরবান নিয়ে আসেন। তবে অনেকের কাছে এটি বার্মিজ আম নামে পরিচিত। মিয়ানমারের বার্মি ভাষায় রাংগোয়াই অর্থ বুকে শিরধারার মতো সেলাই আর ‘সি’ অর্থ ফল, অর্থাৎ রাংগোয়াইসি মানে ‘বুকসেলাই ফল’। খেতে খুবই সুস্বাদু, পোকার আক্রমণ কম এবং স্বল্প সময়ে বেশি লাভজনক ফলন।

বেশ কয়েক বছর ধরে এই আমের চাষবাদ হয়ে আসছে বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায়। তবে চলতি মৌসুমেও বান্দরবানে আম্রপালি, হাঁড়িভাঙা বারি আম-৪ এবং রাংগোয়াইসহ বিভিন্নজাতের আমের বাগানে ভালো ফলন হয়েছে।

বান্দরবান সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, চলতি মৌসুমে বান্দরবান জেলার ৭ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে এবং ৯০ হাজার মেট্রিক টন আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে আমের ফলন ভালো হয়েছে। এবছর করোনায় তাদের উৎপাদিত ফলন বিক্রি করতে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা। তবে কৃষি বিভাগ বান্দরবানের আম ভোক্তার হাতে পৌঁছে দিতে এবং অনলাইনে বিক্রি করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এতে করে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবেন।

ওমর ফারুক আরও বলেন, করোনার কারণে চাষিরা যদি আম বিক্রি করতে না পারেন, সেক্ষেত্রে কৃষকদের কৃষি প্রণোদনা ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার বিষয়টিও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৪ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২০
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।