ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

পেঁপে চাষে আসাদুরের ভাগ্যবদল

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩২ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২০
পেঁপে চাষে আসাদুরের ভাগ্যবদল নিজের বাগানে পেঁপেচাষি আসাদুর। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: লেবু দিয়ে নিজের কৃষিকাজ শুরু নয়-দশ বছর আগে। ক্ষতির ধাক্কা কাটিয়ে অবশেষে সফলতা এসেছে পেঁপেতে। এখন শত-সহস্র ফলবতী পেঁপের সৌন্দর্য হাসিতে হাসছেন শ্রীমঙ্গলের বাণিজ্যিকভাবে সফল পেঁপেচাষি আসাদুর।

রোববার (২৮ জুন) সকালে মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের শাসন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ-ফুট উচ্চতার প্রতিটি গাছেই গুচ্ছাকারে ধরে আছে পেঁপে। হাজার হাজার পেঁপে গাছ।

যেদিকে চোখ যায় শুধু পেঁপে আর পেঁপে। ১৫ জন শ্রমিক নিয়মিতভাবে দৈনিক শ্রমসেবা দিয়ে যাচ্ছেন এখানে।
কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ গ্রহণ করছেন পেঁপেচাষি আসাদুর।  ছবি: বাংলানিউজ বাংলানিউজকে কৃষক আসাদুর বলেন, ২০১১ সালে প্রথমে আমি লেবু দিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছিলাম। মোটামুটি ভালো লাভ হচ্ছিলো। ২০১৬ সালের দিকে একদিন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অজিত কুমাল পাল আমার বাগান দেখে বলেছিলেন, ‘লেবুতে তো লাভের মুখ দেখতে ৩ বছর অপেক্ষা করতে হবে; তার চেয়ে তুমি যদি উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহ করে পেঁপে চাষ করতে পারো তবে সবদিক থেকে তুমি লাভবান হতে পারবে। ’ তার পরামর্শক্রমে এবং অনুপ্রেরণায় নিজের ২ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষাবাদ শুরু করি।

তিনি আরও বলেন, তারপর কিছুদিন পরে আমার পেঁপে গাছগুলোতে যখন ফলন আসা শুরু করে তখন হঠাৎ করে মোজাহিক রোগ আক্রমণ করে। পেঁপে গাছগুলো দ্রুত শুকিয়ে যেতে থাকে। পরে তৎকালীন উপজেলা কৃষি অফিসার সুকল্প দাসের পরামর্শে আক্রান্ত গাছগুলো কেটে ফেলি। এভাবে কেটে ফেলা ২০টি রোগাক্রান্ত পেঁপে গাছে প্রতিটিতে ৪০/৪৫ কেজি করে পেঁপে ছিল। রোগাক্রান্ত গাছগুলো কাটার খবর পেয়ে তখন অজিত কুমার পাল আমার বাগানে ছুটে এসে গাছ না কেটে রোগনির্মূল করার পরামর্শ দেন। তারপর থেকে ধীরে ধীরে পেঁপে ভাইরাস দূর হয়ে গাছগুলো প্রাণে বাঁচে।
আসাদুরের পেঁপে বাগান।  ছবি: বাংলানিউজনিজের আবাদ প্রসঙ্গে এ কৃষক বলেন, পেঁপেতে লাভের মুখ দেখার পর ২০১৮ সালে ২ বিঘা জমি থেকে ১০ বিঘা জমিতে পেঁপের বাগান করি। তখন প্রায় ২ হাজার ৪শ চারা লাগাই। সে বছর ১২ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করি। খরচ ছিল ৮ লাখ টাকা এবং লাভ হয় ৪ লাখ টাকা।  

২০১৯ সালে লেবু বাগানের ফাঁকে ফাঁকে আরও ১০ বিঘা জমিতে ১ হাজার চারা দিয়ে পেঁপে আবাদ করি। বছর শেষে ৬ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করি। খরচ ছিল ৩ লাখ টাকা এবং লাভ হয় সাড়ে তিন লাখ টাকা।  

চলতি বছরের শুরুতে লেবু বাগানের গ্যাপে গ্যাপে নিজের ১০ বিঘা জমিতে ১ হাজার ২ শত চারা রোপণ করেছি। গাছগুলোতে ফল আসা শুরু হয়েছে। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এগুলো বাজারে বিক্রি করবো।    

পেঁপের ভ্যারাইটি সম্পর্কে কৃষক আসাদুর বলেন, আমি আমার বাগানে সবচেয়ে বেশি লাগিয়েছি ‘রেডলেডি’ পেঁপে। এটি হাইব্রিজ জাতীয়। এটি গোল গোল পেঁপে। তারপর লাগিয়েছি শাহী ইন্ডিয়ান। এই পেঁপে উন্নত, আকারে বড় এবং খেতে সুস্বাদু। আর লাউয়ের মতো লম্বা আকারের পেঁপে হলো ‘শাহীওয়াল’। এটি থাইল্যান্ডের একটি ভ্যারাইটি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অজিত কুমাল পাল বাংলানিউজকে বলেন, পেঁপে চাষাবাদ অন্য সবজি থেকে অধিকতর কঠিন। এটি উৎপাদন স্পর্শকাতর সবজি। তবে আসাদুর প্রবল আগ্রহ আর কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে পেঁপেতে সফলতা লাভ করে নিজে ভাগ্যবদল করেছেন। এলাকায় এখন তিনি অনুকরণীয় কৃষক।
থাইল্যান্ডের শাহিওয়াল জাতের লম্বাটে পেঁপে।  ছবি: বাংলানিউজপেঁপে চাষে আগ্রহীদের করণীয় সম্পর্কে এ কর্মকর্তা বলেন, প্রথমত পেঁপে চাষে উঁচু জমি নির্বাচন; কারণ নিচে পানি জমে গেলে পেঁপে কখনোই হবে না। দ্বিতীয়ত, কৃষকের অধিক আগ্রহ ও কঠিন পরিশ্রম করার ইচ্ছাশক্তি। কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে আধুনিক কলাকৌশল ও পরিচর্যা সম্পর্কে আগ্রহ থাকতে হবে। প্রায় দুই সপ্তাহ যদি তিনি বে-খেয়ালী হন তাহলেই বাগান শেষ। আর কঠিন পরিশ্রম করার ইচ্ছাশক্তি অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

কোনো আগ্রহী কৃষক স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শক্রমে পেঁপে চাষ অধিকতর লাভজনক করা সম্ভব বলেও জানান উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অজিত কুমাল পাল।     

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩১ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২০
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।