ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

উঠান পেরিয়ে দুই একর জমি জুড়ে কামরুলের ড্রাগনবাগান 

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২০
উঠান পেরিয়ে দুই একর জমি জুড়ে কামরুলের ড্রাগনবাগান  ড্রাগন ফলের চাষ। ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: বিদেশি ফল ড্রাগন চাষে সফল হয়েছেন বাগেরহাটের কামরুল ইসলাম (৩৫)।  

নিজের বাড়ির উঠানে সখের বসে লাগানো কয়েকটি গাছ থেকে তার এখন তিন হাজার দুইশ’ গাছের বাগান।

মৌসুমের অর্ধেক সময়েই এ গাছের ফল বিক্রি করে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করেছেন তিনি। এখন দুই একর জমিতে নতুন করে ড্রাগনের চাষ শুরু করেছেন।

কামরুলের সফলতা দেখে প্রতিবেশীরাও ঝুঁকছেন ড্রাগন চাষে। শুধু কামরুলের প্রতিবেশীরাই নন, বাগেরহাট জেলার অনেকেই সখের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন।

ড্রাগন ক্ষেতে কাজ করছে চাষি।  ছবি: বাংলানিউজমাত্র তিন বছর আগে বড় ভাইয়ের দেওয়া চারা দিয়ে ড্রাগন চাষ শুরু করেন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের কামরুল ইসলাম। বড় ভাইয়ের পরামর্শে নিজেদের খাওয়ার জন্য বাড়ির আঙিনায় কয়েকটি চারা রোপণ করেন তিনি। ছয় মাস পরেই ফল আসে গাছগুলোতে। ফলের চেহারা ও স্বাদে মুগ্ধ হন কামরুল ও তার পরিবারের সদস্যরা। পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে এক বছরের মাথায় কাটিং পদ্ধতিতে নিজের গাছগুলো থেকেই চারা তৈরি করেন তিনি। দ্বিতীয় বছরেই নিজের তৈরি বেশ কিছু চারা রোপণ করেন তিনি। ২০১৯ সালের শেষের দিকে অর্থাৎ কামরুল ড্রাগন চাষ শুরুর তৃতীয় বছরে বাড়ির উঠানেই ২০টি ঝাড়ে (পিলারে) তার ড্রাগন গাছের সংখ্যা দাঁরায় ১২০টিতে। মাত্র দুই থেকে তিন শতক জমিতে লাগানো শতাধিক গাছ দিয়ে এ পর্যন্ত অর্ধ লক্ষাধিক টাকার বেশি ফল বিক্রি করেছেন। গাছে যে ফুল ও ফল রয়েছে, তাতে আরও সমপরিমাণ আয় হবে এবার কামরুলের। অন্যসব কাজ ছেড়ে দিয়ে এখন শুধু ড্রাগন চাষে মন দিয়েছেন তিনি।

সফল ড্রাগন চাষি কামরুল ইসলাম বলেন, আমার বড় ভাই চাকরির সুবাদে চট্টগ্রাম থাকেন। বছর চারেক আগে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসার সময় কিছু ড্রাগনের কাটিং (চারা) নিয়ে আসেন। আমাকে বলেন, এগুলো লাগা, ভালো কিছু হতে পারে। আমি ক্যাকটাস জাতীয় গাছ ভেবে না লাগিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম। পরে ভাই জানতে চাইলে  বলি ওসব দিয়ে কী হবে? আমি ফেলে দিয়েছি। পরের বছর ঈদে আবার ড্রাগনের কয়েকটি কাটিং নিয়ে আসেন তিনি। এবার কঠোর নির্দেশনা দেন আমাকে ভালোভাবে লাগানোর জন্য। আমি কোনো মতে লাগাই। এর মাত্র ছয় মাসেই গাছে ফল আসায় আমি অবাক হয়ে যাই। যত্ন নিতে থাকি গাছগুলোর। পরের বছর থেকে গাছের কাটিং দিয়ে চারা তৈরি শুরু করি। বর্তমানে ২০টি খুঁটিতে আমার শতাধিক গাছ রয়েছে। এবার প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছি। এ বছর আরো ৫০ হাজার টাকার মতো ফল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। এছাড়া ড্রাগন গাছের কাটিং দিয়ে চারা তৈরি করে বিক্রি করছি। তা দিয়েও ভালো আয় হচ্ছে আমার।

ড্রাগন ফলের ক্ষেত।  ছবি: বাংলানিউজএ বছর নতুন করে দুই একর জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন জানিয়ে কামরুল আরো বলেন, ৩০ হাজার টাকা খরচ করে দুই একর জমিতে মাটি কাটিয়ে ড্রাগন চাষের উপযোগী করেছি। দুই একর জমিতে আটশ’ পিলারে তিন হাজার দুইশ’ চারা রয়েছে। এ গাছে তেমন সার বা ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। মোটামুটি গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার ও মাঝে মধ্যে ছত্রাকনাশক দিলেই গাছ থেকে ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতিদিনই দুই-একজন দিনমজুর আমার ড্রাগন ক্ষেতে কাজ করছেন। প্রতিটি পিলারের জন্য খরচ পড়েছে ৬৫০ টাকা। সব মিলিয়ে দুই একরে তার চাষ শুরু করতে প্রায় আট লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। তবে একবার শুরু করার পরে খরচ খুবই কম। মাসে আগাছা পরিষ্কার, সেচ ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হাজার পাঁচেক টাকা খরচ হবে।

তিনশ’ থেকে ছয়শ’ টাকা কেজি দরে ড্রাগন ফল বিক্রি করি। আবার এলাকার অনেকে আমার দেখাদেখি ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন। প্রতিটি চারা অন্য কৃষকের কাছে বিক্রি করি ৩৫ থেকে ৫০ টাকায়, যোগ করেন কামরুল।

কামরুলের প্রতিবেশী হাফিজুর রহমান বলেন, কামরুলের বাড়িতে বিদেশি ফল ড্রাগনের ফলন দেখে আমাদের ভালো লাগে। কামরুলের কাছ থেকে আমরা কিনে নিয়ে এ ফল খাই। এছাড়া মাঝে মধ্যে কামরুল আমাদের প্রতিবেশী হিসেবে এমনিতেও খেতে দেয়।

ড্রাগন ক্ষেত ।  ছবি: বাংলানিউজকামরুলের পরিচর্যাকর্মী সাইফুল ইসলাম ও রুহুল আমিন বলেন, সারা বছরই কামরুল ভাইয়ের ড্রাগন ক্ষেত অন্যান্য ক্ষেতে কাজ করি। ভালোই চলে। আমরা ছাড়াও অনেকেই মাঝে মধ্যে কাজ করেন কামরুল ভাইয়ের ক্ষেতে। নতুন ক্ষেত করার সময় বেশ কিছু দিন এক টানা কাজ করেছেন অনেক শ্রমিক।

কামরুল ইসলামকে দেখে ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন ইমতিয়াজ শেখ এবং আলমগীর হোসেন। তারা বলেন, কামরুলের বাড়ির উঠানে ড্রাগনের ফলন দেখে আমরা অবাক হয়েছি। ফলের দামও অনেক ভালো। এ বছর তিনশ’ থেকে ছয়শ’ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি করেছেন। কামরুল এবং কচুয়া কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে আমরাও বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ শুরু করেছি। আশা করি, এর মাধ্যমে আমরা আর্থিকভাবে সফল হবো।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, ড্রাগন একটি বিদেশি ফল। পুষ্টিগুণ, আকার-আকৃতি ও দামের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্ব বাজারে এ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্যাকটাস জাতীয় গাছ হওয়ায় রোগ বালাইও কম। তাই চাষিরা সহজে এ ফল চাষ করতে পারেন। বাগেরহাটে নিজ উদ্যোগে এবং কৃষি বিভাগের সহায়তায় কামরুলসহ অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন। বাণিজ্যিক, অবাণিজ্যিক ও ছাদ কৃষি সব মিলিয়ে বাগেরহাটে ১০ একরের বেশি জমিতে ড্রাগন চাষ হয়েছে। চাষিরা ফলও পাচ্ছেন ভালো।

নতুন ড্রাগন চাষিদের সম্পর্কে উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, ড্রাগনের চারা অবশ্যই রোদ পড়ে এমন জায়গায় রোপণ করতে হবে। রোপণের কয়েকদিন আগে ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করে জৈব সার দিয়ে দিতে হবে। আট ফুট দূরত্বে পিলার দিয়ে পিলারের চারপাশে চারটি করে গাছ লাগানো যায়। কংক্রিটের পিলারের উপরে লোহার রডের সঙ্গে সাইকেল বা ভ্যানের পুরনো টায়ার দিয়ে দিতে হবে, যাতে গাছগুলো বড় হলে ওই টায়ারে থাকতে পারে। ছাদের টবেও এ গাছ রোপণ করা যায়। ফলও ভালো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।