ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

শিমের রাজ্য ডুমুরিয়া!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২০
শিমের রাজ্য ডুমুরিয়া! ক্ষেতে শিম

খুলনা: খুলনার ডুমুরিয়ায় যেকোনো ক্ষেতে দাঁড়িয়ে হাত বাড়ালে মুঠো মুঠো শিম পাওয়া যাবে। যেখানে এলে মনে হবে শিমের রাজ্যে দাঁড়িয়ে আছেন।

ক্ষেতে শিম। মাছের ঘেরের ভেড়িতে, জমির আইলে শিম। খালের পাড়ে শিম। বাদ যায়নি বেড়িবাঁধও। দেখলে মনে হয় শিম ফুল দিয়ে সাজানো বাগান। আকর্ষণীয় শিম ও বেগুনি রঙের শিমের ফুলে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত যেন বেগুনি চাদরে ঢেকে গেছে!

এ উপজেলায় শিমের ফলন এবার হয়েছে খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বেশি। কৃষকরা বাজারে ন্যায্য দাম পেয়ে বেজায় খুশি।

শিম চাষিরা জানান, আগাম জাতের শিম চাষ করা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে।

তারা জানান, কৃষি কর্মকর্তাদের তৎপরতায় ডুমুরিয়ায় প্রতি বছর শিম চাষির সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে শিম চাষের পরিমান।
.

বুধবার (১১ নভেম্বর) সকালে ক্ষেত থেকে শিম তোলার সময় কথা হয় ডুমুরিয়ার খর্নিয়ার বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকপ্রাপ্ত কৃষক আবু হানিফ মোড়লের সঙ্গে।

এ সময় তিনি বলেন, সাড়ে ৮ বিঘা মাছের ঘেরের আইলে আগাম জাতের শিম (ইন্ডিয়ান লাল ফুল) চাষ করেছিলাম। শ্রাবণ মাসের প্রথম থেকেই শিমের ফলন শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত চার দফায় শিম বিক্রি করেছি। প্রথম দফায় শিম তুলেছি ১৬৭ কেজি। তারপর দ্বিতীয় দফায় ১৬১ কেজি, তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় ১৬০ কেজি। পৌষ মাস পর্যন্ত এ গাছ থেকে শিমের ফলন পাওয়া যাবে।

তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে স্থানীয় বাজারে শিমের কেজি ১৬০ টাকা করে বিক্রি করেছি। এখন ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

হানিফ মোড়ল জানান, তাদের গ্রামের ৯৫ শতাংশ মাছের ঘেরেই শিম চাষ করা হয়েছে এবার। শিম বিক্রি করে অনেক চাষি খুবই লাভবান হচ্ছেন।
.

একই গ্রামের দ্বীন মুহাম্মদ বিশ্বাস জানান, ৫ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। বিগত বছর থেকে অনেক বেশি শিম হয়েছে এবার। এখনও তেমন পোকামাকড় লাগেনি শিম গাছে।

চুকনগর এলাকার মেহেদী হাসান বাবলু বলেন, মাছের ঘেরের আইলে ১৬ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছি। ইতোমধ্যে ৬-৭ লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছি। মোট ১৫-১৬ লাখ টাকার শিম বিক্রি হবে বলে আশা করছি। চুকনগরের যেখানেই ঘের আছে সেখানেই এবার শিমের চাষ হয়েছে। ফলনও বাম্পার হয়েছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ডুমুরিয়া উপজেলায় মোট ১৬০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। যা খুলনা বিভাগ তথা পদ্মার এপাড়ের ২১ জেলার মধ্যে এই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি শিম চাষ হয়েছে। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেসব এলাকায় শিম চাষ হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভুলবাড়ি, কুলবাড়ি, চুকনগর, খর্নিয়া, বামনদিয়া, রানাই, চিপনা। প্রতিবছর বাড়ছে শিমের চাষ। লাভ থাকায় প্রতিবছর বাড়ছে চাষির সংখ্যা।
.

তিনি আরও বলেন, ক্ষেত ছাড়াও মাছের ঘেরের ভেড়িতে ব্যাপক হারে এবার শিম চাষ করেছেন এলাকার চাষিরা। ফলে মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি শিম বিক্রি করে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করছেন তারা। এ বছর শিমের ফলন ভালো হয়েছে, পাশাপাশি দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তাই চাষিরা খুব খুশি।

কৃষি কর্মকর্তা জানান, ডুমুরিয়ার গ্রামগুলোতে যতদূর চোখ যায় শুধু শিম ক্ষেতের চোখ ধাঁধানো সবুজের ওপর বেগুনির সমারোহ। মনে হয় যেন শিমের গালিচা অথবা শিম দিয়ে সাজানো কোনো পার্ক। যেখানে গেলেই শিম ফুলের ঘ্রাণে ভিন্ন আমেজে উপভোগ করা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২০
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।