ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

শখের লাইপাতায় বাবুপ্রসাদের সচ্ছলতা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২১
শখের লাইপাতায় বাবুপ্রসাদের সচ্ছলতা এক টুকরো ছোট্টজমিতে বাবুপ্রসাদের লাই বাগান। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: এমন তো নয় যে, স্থানীয় কোনো নাম করা কৃষক তিনি। নেই তেমন নাম ডাকও।

যা আছে তা হলো-কোনোক্রমে বেঁচেবর্তে থাকা। অনেকটাই নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। জীবন নামক এমনই ভাঙাতরী মাঝি বাবুপ্রসাদ রবি দাস।

চা-বাগানের স্থায়ী শ্রমিক তিনি। তবে, এলাকায় তাকে অনেকেই লালু নামেই চেনে। থাকেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা ভাড়াউড়া চা-বাগানের রামপাড়ায়। একটু বাড়তি আয়ের আশায় ছুটছেন পৃথক পৃথক কর্মসংস্থানে। দৌড়ঝাপময় চূড়ান্ত জীবনের অধিকারী তিনি।  

সম্প্রতি বাবুপ্রসাদের মাটির ভিটায় গিয়ে দেখা গেলো, চোখজুড়ানো লাইপাতা ধরেছে। একদম টাটকা আর চির সবুজময়। দেখলেই যেন তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়! একটি পাতা অপরটির সঙ্গে লেগে লেগে ক্ষুদ্র বাগানকে তাৎপর্যময় করে তুলেছে।  

বাবুপ্রসাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘মাত্র আধা শতক (শতাংশ) জায়গায় লাইশাখে বীজ ছিটিয়েছিলাম গেলো আশ্বিনে। এরপর মাটিতে শুধু গোবরসার দিয়ে তৈরি করেছি। মাঝেমধ্যে দিয়েছি পানি। ব্যাস, তাতেই প্রচুর পরিমাণে লাইপাতা ফলেছে। এত বেশি পরিমাণে সেই লাইশাক হয়েছে যে, আমি এবং আমার স্ত্রী অবাক হয়েছি। যারা দেখে তারাও অবাক হয়। ’ 
সচ্ছলতার প্রসঙ্গে বলেন, ‘কি আর বলবো দুখের কথা! আমার ২ ছেলে ১ মেয়ে। বড় মেয়ে লাকি (১৬) লেখাপড়ার জন্য ওর মামার বাড়িতে দিয়েছি। গত বছর ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। ওখানেই থাকে। আমার অভাবের জন্য ওর মামা-মামী আমার বড়মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছে। আর মেঝ ছেলে সঞ্জয় (১২) এবং ছোটসন্তান বাপ্পী (৬) আমার কাছেই থাকে। এত টানাটানির মধ্যে আছি যে, সন্তানদেরও ঠিক মতো নিজের কাছে পালন করতে পারি না। এই হলো সচ্ছলতা। ’

বাবুপ্রসাদের লাইশাখ তুলছেন তার বাগান থেকে।  বাংলানিউজ

তিনি সাংসারিক কথাগুলো বলতে থাকেন এভাবে- ‘চা বাগানে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার পর ফিরে এসে বাড়ির কৃষিতে মনোযোগ দেই। আমার স্ত্রী অবশ্য বাগানে কাজ করে না, ঘরের কাজকর্ম করে। কৃষি কাজ করে ভালোই আয় রোজগার হয়। কৃষি আমার শখের জিনিস। এটাওটা লাগাতে আমার খুব ভালো লাগে। আজ যখন বিক্রি করে মানুষকে টাটকা সবজি খাওয়াই তখন আরো ভালো লাগে। ’ 

বাগানের মজুরি প্রসঙ্গে বলেন, ‘সপ্তাহে বাগানের মজুরি পাই ২৫-৭০ টাকা। এর মাঝে বিদ্যুৎ বিল, ফান্ডচার্জ কেটে রাখা হয়। এছাড়াও ঋণের সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ করে  তেমন কিছুই আর হাতে থাকে না। বাধ্য হয়েই বিকল্প আয়ের দিকে যেতে হয়। বাগানে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করে এসে আরো দৈনিক তিন ঘন্টা শহরের বাড়িতে কাজ করি। মাসে দেড়-দুই হাজার টাকা পাই। এছাড়াও বাগানের বন্ধের দিনে দৈনিক মজুরি খেটে তিন-চারশ’ টাকা আয় করি। কোনোমতে সংসার চলে যায়। ’   

কথা বলতে বলতে বের হয়ে আসে আক্ষেপের স্বর। আজ পর্যন্ত কোনোদিন কোনো ধরনরে সরকারি-বেসরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পাননি বলে জানান বাবুপ্রসাদ রবিদাস।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২১
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।