ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

বিনা চাষে আলুর উৎপাদনে সফল কয়রার চাষিরা  

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
বিনা চাষে আলুর উৎপাদনে সফল কয়রার চাষিরা   ক্ষেত থেকে আলু তুলছেন কৃষাণী তানজিলা। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: খুবই সহজে বিনা চাষে আলুর উৎপাদনে সফলতার মুখ দেখেছেন সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলার চাষিরা। বাজারে আলুর আশানুরূপ দাম পাওয়ার আশা করছেন তারা।

বিনা চাষে আলুর উৎপাদনে ধারাবাহিক তাদের সফলতায় স্থানীয় কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আলু চাষ।  

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ এমএলটি সাইট কয়রা কৃষকদের আলু উৎপাদনে দিচ্ছেন ফ্রি বীজ, সার, কীটনাশক ও বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ।  

জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত কয়রা উপজেলার কয়রা সদর ইউনিয়নের তিন নম্বর কয়রা গ্রামে রবীন্দ্রনাথ ঢালী ২০২০ সালে ১৬ শতাংশ জমিতে বিনা চাষে আলু চাষ শুরু করেন। তার এ অভিনব চাষাবাদ দেখে এলাকার অনেক কৃষক সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগের পরামর্শক্রমে বিনা চাষে আলু আবাদে ঝুকে পড়েছেন।

কৃষক আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে জানান, বিগত বছর স্থানীয় কৃষক রবীন্দ্র ঢালীর বাড়িতে বিনা চাষে আলু উৎপাদন দেখে তার মধ্যে আগ্রহ জাগে। তিনি বর্ষাকাল শেষ হওয়ার পরই সরেজমিন গবেষণা বিভাগের সহযোগিতায় পানি সরে যাওয়ার পরই কাদার মধ্যে ৩৩ শতক জমিতে বিনা চাষে আলু রোপণ করেন। পরে আলুর ক্ষেতে খড়কুটা দিয়ে ঢেকে দেন। তার এই পদ্ধতি চাষ করা দেখে প্রতিবেশীরা তাকে ‘পাগল’ বলে অনেকেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে থাকেন। বাড়ির পাশে রাঙ্গা গাজী বলেই দিয়েছিলেন, শুধু কষ্ট করে লাভ নেই বিনা চাষে কাদায় আলু হবে না। অথচ মহারাজপুর গ্রামের আব্দুল হালিম ও রবীন্দ্র ঢালী বিনা চাষে আলু চাষ করে লাভবান হওয়ায় অনেকের মুখে ছাই পড়েছে।  

এদিকে বিনা চাষে আলু বাম্পার ফলন দেখে আগামীতে এ ধরনের আলু আবাদ বাড়বে এই এলাকায় এমনটি ধারণা অনেকের।  
উপকূলীয় লবণাক্ত জমিতে আলুর ভালো ফলন দেখে কৃষি গবেষণা বিভাগ ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা এ পদ্ধতিতে আলু চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন।

তারা বলছেন, কম খরচে ও কম সার-পানি ব্যবহার করে বেশি ফসল পাওয়া যাবে। ওই বিভাগের এমএলটি সাইটের কয়রার দায়িত্বরত বৈজ্ঞানিক সহকারী জাহিদ হাসানই এলাকায় পতিত জমি দেখে বিনা চাষে আলু রোপণ করতে উদ্বুদ্ধ করেন কৃষককে। প্রথমে কেউ রাজি না হলেও পরে রাজি হয়ে ঝুঁকি নেন আব্দুল হালিম। ৩৩ শতক জমিতে রোপণ করেন ২২০ কেজি আলুর বীজ।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল শাহাদাৎ বাংলানিউজকে বলেন, ধান কাটার পর জমি তখনো পুরোপুরি শুকায় না জমিতে কাদা থাকে। সেই কাদা মাটির ওপর দড়ি টানিয়ে সারি সোজা করে আলুর বীজ বসিয়ে দিতে হয়। আলুর ওপর গোবর ছড়িয়ে তার ওপর খড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। কৃষক আব্দুল হালিমের বিশ্বাস ছিল না বিনা চাষে গাছের গোড়ায় এত আলু হবে।  

আব্দুল হালিমের স্ত্রী তানজিলা বিনা চাষের আলুর ক্ষেতের খড় সরিয়ে গাছ তুলে দুই হাত ভরে আলু দেখিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, আলুর আকারও বেশ বড়। কয়েক দিন পর বাজারে বিক্রি করা যাবে।  

খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হারুনর রশিদ বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় দক্ষিণাঞ্চলে আমন ধান কাটার পর বিস্তীর্ণ জমি পতিত থাকে। মূল কারণ দীর্ঘ জীবন কাল সম্পন্ন আমন ধান, এঁটেল মাটি, স্বল্পমেয়াদী শীত এবং জমিতে ‘জো’ না আসা। এসব প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ধাবিত লবণ ও তাপ সহনশীল আলুর জাত বারি আলু-৭২, ৭৩, ও ৭৮ এ ধানের খড় ব্যবহার করে বিনা চাষে আলু উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। যা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য মুজিব শতবর্ষের এক নতুন উপহার।  

তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে খরচ কম, চাষের প্রয়োজন নেই। মাটিতে লবণ উঠার আগেই বাড়তি একটা ফসল ঘরে তুলতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।