ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

খুলনায় স্বপ্ন বুনছেন তরমুজ চাষিরা    

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২২ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২১
খুলনায় স্বপ্ন বুনছেন তরমুজ চাষিরা    

খুলনা: তিন-চার পাতা বিশিষ্ট সারি সারি তরমুজ চারা। মাঠের পর মাঠ তরমুজ ক্ষেত।

বেশির ভাগ মাঠে চারা গজিয়েছে। কোথাও আবার চারা বাড়তে শুরু করেছে। পানি ও সার দেওয়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

খুলনার দাকোপ, ডুমুরিয়া, রূপসা ও বটিয়াঘাটা উপজেলার তরমুজ চাষিরা এখন তপ্ত রোদের মধ্যে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ক্ষেত ঘিরে এক ধরনের প্রাণ চাঞ্চল্য কাজ করছে। বিস্তীর্ণ ক্ষেতে তরমুজ গাছের চারা দেখে ভালো ফলনের আশা করছেন চাষিরা। খুলনা বিভাগের মধ্যে খুলনা জেলায় সবচেয়ে বেশি তরমুজের চাষ হয় বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) ডুমুরিয়া উপজেলার মলমলিয়া গ্রামে তরমুজ ক্ষেত পরিচর্যা করার সময় কথা হয় কামাল বাওয়ালীর সঙ্গে।

তিনি বলেন, ১০ বিষা জমিতে পাকিজা জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে অনেক চারার তিন-চার পাতার হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো পাওয়া যাবে।

একই উপজেলার ছোটবন গ্রামের মৃত্যুঞ্জয় নামে এক চাষি বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে তরমুজ চাষ শুরু করেছিলেন। ধারাবাহিকভাবে ফলন ভালো পেয়েছেন। এবার দুই বিঘা জমিতে তরমুজের বীজ বপন করেছেন। অনেক বীজের চারা গজিয়েছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ডুমুরিয়ায় দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে তরমুজ আবাদ। লবণাক্ততা ও মিষ্টি সেচ পানির অভাবে আমন পরবর্তী সময়ে উপজেলার শরাফপুর, মাগুরখালি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা, শোভনা ও সাহস ইউনিয়নের কিছু এলাকা পতিত থাকত। ২০১৯ সালে উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের তক্তামারি গ্রামের কৃষক কামাল বাওয়ালী কৃষি বিভাগের সহায়তায় ব্লুগোল্ড প্রকল্পের আওতায় প্রথমবারের মতো তরমুজের একটি প্রদর্শনী পান এবং প্রথমবারেই বাজিমাত করেন।  প্রথমবারেই তিনি সাত লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেন। সেই থেকে শুরু।  এ বছর উপজেলার ঝালতলা, শরাফপুর, বাহির আকড়া, মাগুরখালি, শোভনা, শিবপুর, মাদারতলা বিলের যেদিকে চোখ যায় কেবল তরমুজের ক্ষেত। ছোট্ট একটি প্রযুক্তি এত বড় প্রভাব ফেলতে পারে তার বাস্তব উদাহরণ ডুমুরিয়া উপজেলার তরমুজ। এ বছর ৪৫০ একর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। কৃষককে সার, বীজ প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।

তিনি বলেন, আমি খুলনার দাকোপ উপজেলায় উপজেলা কৃষি অফিসার হিসেবে প্রায় পাঁচ বছর কর্মরত ছিলাম এবং ওখানে প্রায় ২৫০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ হত। কিন্তু ডুমুরিয়া উপজেলায় এসে দেখি এখানে কোনো তরমুজ হয় না। পরে তরমুজ সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করি। প্রথমে ২০১৯ সালে ব্লুগোল্ডের একটি প্রদর্শনী দিয়ে শুরু করি। এ বছর জিকেবিএসপি প্রকল্পের আওতায় কৃষককে প্রশিক্ষণ ও মাঠে গিয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো ফলন হবে।

বরাবরের মতো এবারও জেলায় সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে দাকোপ উপজেলায়। উপজেলার ছিটিবুনিয়া, খেজুরিয়া, উত্তর বানীশান্তা, কালিকাবাটি, হরিনটানা, লাউডোব, কৈলাশগঞ্জ, ধোপাদী, পশ্চিম বাজুয়া, পূর্ব বাজুয়ায় তরমুজ চাষ করা হয়েছে।

দাকোপ ইউনিয়নের ছিটিবুনিয়ার তরমুজ চাষি দীপক রায় বাংলানিউজকে বলেন, খুলনায় তরমুজ চাষের জন্য বিখ্যাত দাকোপে এবারও ব্যাপক হারে তরমুজের চাষ করা হয়েছে। দাকোপের তরমুজ খুব মিষ্টি। বাজারে চাহিদাও ব্যাপক। গত বছর করোনার কারণে দাম পাননি চাষিরা। এবার সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠার আশা করছেন তারা।

তিনি বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে এবার তরমুজের বীজ বপন করেছেন। বিজ থেকে চারা গজানো শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক চারা তিন-চার পাতার হয়ে গেছে।

এছাড়া বটিয়াঘাটা উপজেলার দেবীতলা, বরুণপাড়া, গঙ্গারামপুর, বয়ারভাঙা ও রূপসা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বণিজ্যিকভাবে এবার তরমুজ চাষ করা হচ্ছে।  

রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ফরিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর প্রথমবারের মতো রূপসায় তরমুজ চাষ শুরু হয়। কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে খরিপ ১ মৌসুমে ১০ হেক্টর জমিতে ও অফ সিজনে প্রায় ৩ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়। এ বছর প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি বলেন, সুইট ড্রাগন, সুইট ড্রাগন পাকিজা, ব্লাক বেবি, কানিয়া ইত্যাদি জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে। কৃষি বিভাগ নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২১
এমআরএম/আরবি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।