ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

বান্দরবানে বেড়েছে কাজুবাদামের চাষ

কৌশিক দাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২১
বান্দরবানে বেড়েছে কাজুবাদামের চাষ ছবি: বাংলানিউজ

বান্দরবান: দিন দিন সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা আর চারার সহজলভ্যতার কারণে বান্দরবানে পাহাড়ের আনাচে-কানাচে বেড়েছে কাজুবাদামের চাষ।

সম্প্রতি বান্দরবানে একটি কাজুবাদামের চারার নার্সারি তৈরির পর পরই জেলায় বেড়েছে কাজুবাদামের চাষ।

অন্যদিকে সাধারণ জনগণের এই বাদাম প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে খাবার উপযোগী করে তুলতে জেলা সদরে গড়ে উঠেছে একটি প্রক্রিয়াজাত কারখানা।  

বান্দরবানের সদরের রেইচা এলাকায় কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে উন্নতজাতের কাজুবাদামের বীজ ক্রয় চারা উৎপাদন শুরু করেছে এল এ অ্যাগ্রো লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এ নার্সারি থেকে চাষিরা সাশ্রয়ী মূল্যে কাজু বাদামের চারা সংগ্রহ করে তিন পার্বত্য জেলায় কাজু বাদামের চাষ শুরু করেছে। ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর বান্দরবানের একমাত্র প্রথম কাজু বাদামের নার্সারিটি উদ্বোধন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মেহেদী মাসুদ।



বান্দরবানের প্রথম কাজুবাদাম চারা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এলএ অ্যাগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইফতেখার সেলিম অগ্নি বাংলানিউজকে বলেন, এলএ অ্যাগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় ২ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল কাজু বাদামের চারা উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। প্রাথমিকভাবে কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে উন্নতজাতের ৬ লাখ কাজু বাদামের বীজ আনা হয়েছে এবং চারা উৎপাদন করে বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলা এবং আশেপাশের জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।  

ইফতেখার সেলিম আরো বলেন, ইতোপূর্বে বান্দরবানে কোনো কাজু বাদামের চারা উৎপাদনের নার্সারি ছিলনা। তখন জেলায় কাজুবাদামের চাষে আগ্রহীও ছিলো না চাষিরা। বর্তমানে আমাদের নার্সারি শুরুর পর থেকেই বান্দরবানে কাজু বাদামের চাষ বেড়েছে।

এদিকে কাজুবাদামের চাষের পাশাপাশি জেলা সদরের বালাঘাটা এলাকায় একটি কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত কারখানা চালু হয়েছে আর এতে বর্তমানে ৩৫ জন কর্মচারী কাজ করছে। প্রতিদিন সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই কারখানার শ্রমিকেরা কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করে তা প্যাকেটজাত করছে।  

ছবি: বাংলানিউজ

কিষাণঘর নামে এই কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত কারখানার কো-ফাউন্ডার তোয়াহ চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, আমরা বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলার দুর্গম পাহাড় থেকে বাছাই করা কাজুবাদাম সংগ্রহ করে তা বান্দরবানের ফ্যাক্টরিতে এনে প্রসেস করে প্যাকেটজাত করি। এ বছর আমরা বিভিন্ন পাহাড়ের গাছ থেকে প্রায় ৩০ টন কাঁচা কাজুবাদাম ক্রয় করে এনেছি এবং পরবর্তীকালে সেই কাঁচা বাদাম প্রসেস করে আমরা প্যাকেট করে দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করবো, আমাদের প্যাকেটকৃত কাজুবাদাম প্রতিকেজি এক হাজার টাকা দামে বিক্রি করা হয় এবং এই বাদাম খুবই স্বাস্থ্যসম্মত।

এদিকে সরকারিভাবে পার্বত্য এলাকায় কাজুবাদাম চাষের জন্য বিস্তর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। পাহাড়ে বিদেশি আম, কফিসহ কাজুবাদাম উৎপাদন বৃদ্ধি করা জন্য সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বান্দরবানের রুমা উপজেলার মুনলাইপাড়ার বিভিন্ন বাগান পরিদর্শন করার পাশাপাশি চাষিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। এসময় কৃষিমন্ত্রী পার্বত্য এলাকার অনাবাদি জমিগুলোতে কাজুবাদামের চাষ শুরু করার জন্য আহ্বান জানান।



বান্দরবান কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বান্দরবান জেলার ৭ উপজেলায় বর্তমানে ১৯৪৭.৩২ হেক্টর জমিতে কাজুবাদামের চাষ হচ্ছে ৩০৩৯ জন কাজুবাদাম চাষি রয়েছে। সদরে ৪১ জন, রোয়াংছড়ি উপজেলায় ৫০৮ জন, রুমা উপজেলায় ১১৫৩ জন, থানচি উপজেলায় ১১৪৯ জন, লামা উপজেলায় ১১০ জন, আলীকদম উপজেলায় ৩৩ জন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৪৫ জন চাষি কাজুবাদাম চাষের সঙ্গে জড়িত এবং তারা বেশ লাভবান হচ্ছে এই চাষের মাধ্যমে।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বান্দরবান পার্বত্য জেলার অনেক জমি এখনো অনাবাদি পড়ে আছে, যেগুলোতে কাজুবাদাম চাষ করে ব্যাপক সাফল্য লাভ করা সম্ভব। কাজুবাদাম চাষ ও প্রক্রিয়াজাত করে দেশে বিক্রির পাশাপাশি বিদেশে ও রপ্তানি করা সম্ভব বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক।



কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, আমদানি কমানোর জন্য ভবিষ্যতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির জন্য কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশনায়  তিন পার্বত্য এলাকাসহ ১৯টি জেলার ৬৬টি উপজেলায় কাজুবাদাম ও কফির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে বিদেশি উন্নতজাতের কাজুবাদাম ও কফির আবাদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কাঁচাবাদাম ভিয়েতনাম ও ভারতে রপ্তানি হচ্ছে কিন্তু প্রসেস বাদাম রপ্তানি হচ্ছেনা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, চাষিদের প্রশিক্ষণ ও উন্নতমানের চারা, সার ও বালাইনাশক সরবরাহ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে প্রসেস বাদাম বিদেশে রপ্তানি করে আমদানি কমানো হবে।  


ছবি: বাংলানিউজ

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।