ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

সালামের ভাগ্য বদলে দিল ‘অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২১
সালামের ভাগ্য বদলে দিল ‘অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী’ গাছের ডালে ডালে ঝুলে আছে অস্ট্রেলিয়ান আপেল কুল। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: মানুষ বিদেশ যায় অর্থ উপার্জনে আশায়। সুখের আশায়।

কিন্তু সবার কপালে তা হয়তো জোটে না! বিদেশ গিয়েও ভাগ্যবিড়ম্বিত জীবনের অধিকারী সালাম। অবৈধভাবে দালালের মাধ্যমে প্রবাসে এসে দিনের পর দিন তাকে সহ্য করতে হয়েছে নানান দুর্ভোগ। অবশেষে ফিরে আসেন নিজ দেশে।  

সিদ্ধান্ত নেন, কৃষি কাজে মনোনিবেশ করবেন। চেষ্টা করবেন আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে। সামান্য পুঁজি, সততা আর পরিশ্রম দিয়েই শুরু করবেন চাষবাস। এভাবেই দিনবদল হতে শুরু হয় তার। প্রবাসজীবনের নানা যন্ত্রণাকে সমৃদ্ধিতে তাকে ভরিয়ে দিতে শুরু করেছে- নিজ মাতৃভূমি ‘বাংলাদেশ’।  মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার কুমড়াকাফন গ্রামের কৃষক আব্দুল খালিকের কৃষি সফল ছেলে আব্দুস সালাম। ব্যতিক্রমী একটি ফল চাষ করে আজ তার মুখে ফুটেছে সাফল্যের হাসি। তার এই চাষ করা ব্যতিক্রমী ফলের নাম, ‘অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী আপেল কুল’।  

আলাপচালিতায় আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘মেহেরপুর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ছোট ভাই সাবেদের সহযোগিতায় অনলাইনের মাধ্যমে ১শ ৭০টা অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী আপেল কুলের চারা আনি। তারপর আমাদের বসতবাড়ির পাশের জমিতে এ চারাগুলো রোপণ করি। পরে অবশ্য ১০টি চারা মরে যায়। অবশিষ্ট ১শ ৬০টি চারা এখন রয়েছে। মাশাল্লাহ, এগুলোতে এখন ভালোই ফলন আসছে। ওগুলোতেই এখন থোকা থোকা বরই ধরেছে। ’  নিজের জীবনের কষ্টকর অধ্যায়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভাইরে, অনেক স্বপ্ন নিয়ে জীবিকার তাগিদে ভাগ্যবদলের আশায় সৌদি আরব গিয়েছিলাম। বিদেশ যাওয়ার পর স্বাভাবিক অবস্থায় থাকার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন কাজ করতে না পেরে অর্থসম্বল সব নিঃশেষ হয়ে যায়। না বুঝে দালালচক্রের মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ায় নানান আইনি জটিলতায় পড়তে হয়। অবশেষে প্রায় তিন বছর পর বাংলাদেশ রিয়াদ অ্যাম্বেসির মাধ্যমে খালি হাতে দেশে ফিরে আসি। ’ 

‘একটা কিছু করে তো সৎভাবে বাঁচতে হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেই, ব্যতিক্রমী কিছু করবো। পরিবারসহ শুভাকাঙ্ক্ষীদের উৎসাহে অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী আপেল কুলের চাষ শুরু করি’ বলে আলাপচারিতায় যোগ করেন সালাম। চলতি শীত মৌসুমেই আব্দুস সালামের বাগানের প্রতিটি গাছে অপূর্বভাবে অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী আপেলকুল ছেয়ে থাকতে দেখা গেছে। ফলের ভারে গাছসহ ডালগুলো নিচের দিকে ঝুলে পড়েছে। বাঁশের খুঁটি দিয়ে আগলে রাখা হয়েছে প্রতিটি গাছ। পাখি ও চোরের হাত থেকে বরই রক্ষায় পুরো বাগান চারপাশে জাল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। বাগান পাহারা দেওয়ার জন্য বাগানের এক পাশে উঁচু করে মাচা করে রেখেছেন।  

খরচ এবং প্রসার প্রসঙ্গে আব্দুস সালাম বলেন, প্রায় ২৫ শতাংশ জমিতে এই অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী আপেল কুল বরই চাষে সব মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এর পেছনে আব্দুল কাইয়ুম, সাবেদ আহমেদ এবং আমিসহ আমরা তিনভাই প্রচুর শ্রম দিচ্ছি। রাতে এই তীব্র শীতের মধ্যে টোলে বসে বরই বাগানটি পাহারা দিতে হয়। দিন যতই যাচ্ছে ততই চাহিদা বাড়ছে। এলাকার অনেক ছাত্র-ছাত্রী, যুবক ও কৃষকরা প্রতিদিনই আমার এই বরই বাগানটি দেখতে আসছেন।  

এখন প্রতি সপ্তাহে অনলাইনে বড়ই বিক্রি করেন ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার। প্রতিকেজি ১শ ৫০ টাকা মূল্যে অনলাইনে বিক্রি করে থাকি। দেশের নানা প্রান্ত থেকে যে কেউ আমাদের এই সুস্বাদু এবং টাটকা অস্ট্রেলিয়ান আপেল কুল নিতে পারেন। এক্ষেত্রে ০১৭১০-২৮৪৪৮৭ এই নম্বরে ফোন করতে পারেন বলে জানান কৃষক আব্দুস সালাম।  

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান বাংলানিউজকে বলেন, বাংলায় আপেল কুলকে ‘বরই’ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। তবে, আমাদের দেশি বরইয়ের চেয়ে এই আপেল কুল কিছুটা বড়। ব্যতিক্রমী বরই অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী আপেল কুল চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন আব্দুস সালাম। আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করে চলেছি।  

এটি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক একটি উদ্যোগ। এর মাধ্যমে এলাকাসহ নানান প্রান্তের তরুণ-যুবকরা সালামের মতো আত্মনির্ভরশীল হবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করবেন বলে জানান ওই কৃষি কর্মকর্তা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২১
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।