ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

কমছে গাছ, রসের অভাবে ঐতিহ্য হারাচ্ছে খেজুরের গুড়

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২২
কমছে গাছ, রসের অভাবে ঐতিহ্য হারাচ্ছে খেজুরের গুড়

মাদারীপুর: গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ায় কমে যাচ্ছে রসের পরিমাণ। অথচ শীত মৌসুম এলে দিন দিন চাহিদা বাড়ে খেজুরের গুড়ের! 

অথচ গুড় তৈরির প্রধান কাঁচামাল ‘খেজুরের রসে’র সংকট।

আর এ সুযোগেই মিশে যাচ্ছে ‘ভেজাল’। ফলে দিন দিন ‘আসল’ খেজুরের গুড় হারিয়ে যাচ্ছে। খেজুরের গুড়ের সেই আসল স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম।  

ভালো মানের খেজুরের গুড় পেতে বিশ্বস্ত অনলাইন বিক্রেতাদের দারস্থ হচ্ছেন অনেকেই। যারা নাটর বা বিভিন্ন স্থান থেকে নিজস্ব উপায়ে তৈরিকৃত গুড় সরবরাহ করে থাকেন।

জেলার বিভিন্ন এলাকার গাছিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিন যতই যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে খেজুর গাছ। যা টিকে আছে, তাতে আগের মতো রস হয় না। তাছাড়া খেজুর বাগান বলতে যা বোঝায়, তা এখন খুঁজে যাওয়া কষ্টকর। ৮/১০টি গাছ মিলেও পর্যাপ্ত খেজুরের রস একদিনে পাওয়া যাচ্ছে না। রসের পরিমাণ কম হওয়ায় ‘খাটি গুড়’ তৈরি করে সরবরাহ করা কষ্টসাধ্য। তাতে দামও পড়ে বেশি। বেশি দাম দিয়ে ‘শখের বসে’ কেউ কেউ কিনলেও সাধারণ মানুষ তা কিনতে পারে না। আর গুড়ের পরিমাণ বাড়াতেই চিনি মেশানো হয়ে থাকে। অনেকে রসের সঙ্গে অর্ধেক পরিমাণ চিনি মিশিয়েও গুড় তৈরি করে। তাতে করে খেজুরের রসের ঘ্রাণ কিছুটা পাওয়া যায়। এছাড়া দাম ভেদে গুড়ের মান বা কোয়ালিটি নির্ধারণ হয়ে থাকে। চিনি কম মেশানো গুড়ের দাম বেশি। আর সম্পূর্ণ চিনি ছাড়া এক কেজি গুড় ৫০০ টাকা করে বিক্রি করতে হয়। বিশেষ অর্ডার থাকলেই কেবল এভাবে গুড় তৈরি করে দেওয়া হয়। এছাড়া স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রির জন্য তৈরিকৃত খেজুরের গুড়ে চিনি মেশানো হয়ে থাকে।

গাছিরা আরো জানান, গ্রামে খেজুর গাছ বেশি থাকলে গুড়ে কোনো ভেজালই থাকত না। তখন পর্যাপ্ত রস পাওয়া যেত। আর তাতেই গুড় তৈরি হতো। মানুষের চাহিদাও মেটানো যেত। এখন গাছ কম। রস আরো কম। কিন্তু খেজুরের গুড়ের চাহিদা কমেনি। তাই ভেজালে ছেয়ে যাচ্ছে চারপাশ। এখন আসল গুড় কেউ বিক্রি করতে চাইলেও ক্রেতাদের মনে সন্দেহ জাগে যে আসল গুড় কিনা।

স্থানীয়রা জানান, খেজুরের রসে নিপা ভাইরাস থাকতে পারে এমন আশঙ্কায় কাঁচা রসের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে অনেকেই। তাছাড়া এক হাঁড়ি রস বর্তমানে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা করে বিক্রি হয়। তাও আগেভাগে অর্ডার দিয়ে রাখতে হয়।

শীত মৌসুমে খেজুরের গুড়ের ব্যবসা করেন এমন কয়েকজন তরুণ বলেন, অনলাইনে খেজুরের গুড় বিক্রি হয় প্রচুর। তবে অরিজিনাল খেজুরের গুড় আনতে হয় নাটোর, যশোর থেকে। শিবচরে পর্যাপ্ত খেজুর গাছ নেই। যা আছে তাতে গুড়ের চাহিদা মেটানো যায় না। এক সময় শিবচর খেজুরের গুড়ের জন্য সমৃদ্ধ ছিল। দিন যাচ্ছে খেজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে কেউ খেজুর গাছ লাগায় না।

মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছর আগে মাদারীপুর জেলায় প্রায় ৭৫ হেক্টর জমিতে ৮৪ হাজার ৯৮৫টি খেজুর গাছ ছিল। বর্তমানে সেখানে ৪৫ হেক্টর জমিতে ৪৭ হাজার ৭৩১টি খেজুর গাছ রয়েছে। দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে। তবে কৃষকদের খেজুর গাছ চাষের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, খেজুর গাছ না কাটার জন্য আমরা জনগণকে সচেতন করছি। মাঠ পর্যায়ে আমাদের অভিযানও চলে। ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ। কেউ যদি আইন অমান্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া অন্য কারণেও যদি কেউ খেজুর গাছ কাটে, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া সাধারণ মানুষকে খেজুর গাছ লাগানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।