ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

খেজুরের রস-গুড় তৈরিতে ব্যস্ত গাছিরা

জিসান আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসডন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২২
খেজুরের রস-গুড় তৈরিতে ব্যস্ত গাছিরা রস থেকে গুড় তৈরি করা হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা: বাংলা বর্ষপঞ্জির কার্তিক মাস, অর্থাৎ শীত মৌসুম শুরু থেকে খেজুর গাছ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন প্রান্তিক পর্যায়ের গাছিরা। সেসময় থেকেই চলে তাদের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির ব্যস্ততা।

টানা ৫ মাস চলে গাছিদের এ কর্মযজ্ঞ। এরই মধ্যে গুড় তৈরি করে সারা বছর তার চাহিদা মেটানো হয়। ওই ৫ মাসের উপার্জনেই সংসার চলে অনেক চাষির। শীতের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুরের রস ও গুড়।  

রস থেকে গুড় তৈরির প্রক্রিয়া জানতে গিয়েছিলাম চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কৃষিনির্ভর গাড়াবাড়িয়া গ্রামে। ঠিক সকাল ৬টায় গাড়াবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে পৌঁছালে চোখে পড়ে গাছিদের ব্যস্ততা। গ্রামের ধু-ধু মাঠ শীতের মোড়ানো। কুয়াশা আচ্ছাদিত চারপাশ। শীত ও ঘন কুয়াশার মধ্যেই গাছে বাঁধা রসের ভাড় নামাচ্ছেন গাছিরা। সেই ভাড় বাইসাইকেলে নিয়ে মেঠোপথ ধরে ছুটে চলছেন তারা। কেননা সূর্য্যের উঁকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের সংগ্রহ করা রস আগুনে ঢালতে হবে। নির্ধারিত স্থানে নেওয়া হয় সংগ্রহ করা রস। এবার চুলায় জ্বাল দিতে রস ঢালা হয় পাত্রে। রস ঢালার পর তা জ্বাল দিয়ে গাঢ় হওয়ার অপেক্ষা। কেননা, রস গাঢ় হলেই তৈরি হবে গুড়। সময় লাগবে অন্তত দুই ঘণ্টায়। টানা দুই ঘণ্টায় চলে রস জ্বাল দেওয়ার কার্যক্রম। চুলার ওপরে পাত্রে রস নাড়িয়ে নাড়িয়ে গুড়! আবহমান বাংলার সঙ্গে মিশে থাকা এ এক অসাধারণ দৃশ্য। ৬টা থেকে ঘড়ির কাঁটা যেয়ে পৌঁছালো ৯ এর ঘরে। আকাশে মেঘ ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থাকার কারণে এ বেলায় সূর্য্যরে দেখা মিললো না। তাতে কী? চুলায় জ্বাল দেওয়া রস ঠিকই গুড়ে রূপান্তর হয়েছে। এবার নামানোর পালা। পাত্র থেকে সেসব গুড় ঢালা হলো মাটির ভাড়ে। গুড় বিক্রি হবে, সে আশায় শুরু হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাক। হাঁকডাকে গুড়ের প্রতি কেজি দাম ওঠে ১৬০-১৮০ টাকা পর্যন্ত। এভাবেই ভোর থেকে সারা দিনের কর্মব্যস্ত সময় কাটে গাছিদের।

রস থেকে গুড় তৈরির প্রক্রিয়ায় আমরা গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক হাবিল রহমানকে অনুসরণ করি। রস থেকে গুড় তৈরির ব্যাপারে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘সারা বছর এই শীতের সময়ের জন্য অপেক্ষা করি আমরা। শীতের এই সময়টাতে কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত ভোর থেকে রাত অব্দি এই গুড়ের পেছনেই সময় চলে যায়। যা থেকে ভালো উপার্জন হয়ে থাকে এবং সেই উপার্জনের বড় অংশ সংসারের কাজে লাগে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আব্দুল মাজেদ বলেন, জেলায় আড়াই লাখের মতো খেজুরের গাছ রয়েছে। এ বছর এসব গাছ থেকে আড়াই হাজার মেট্রিক টন খেজুরের গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।