ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

‘শৈশব স্বাদে’ ভরপুর কাঁচা-পাকা দেশি বরই

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২২
‘শৈশব স্বাদে’ ভরপুর কাঁচা-পাকা দেশি বরই কাঁচের পাত্রে সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেশি বরই। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: ফিরে আসি শৈশবের কথায়! সবারই সেই ছোট বেলা থাকে। থাকে দুরন্ত অতীত সময়ের কিছু সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ।

কালক্রমে মানুষ একসময় বড় হয়। পেছনে পড়ে থাকে তার মধুময় স্মৃতির প্রেক্ষাপট। সে অতীত সুখ বা দুখেরই স্মৃতিতে রাঙা। আমাদের শৈশবের সেই দুরন্তপনা সময় - প্রাকৃতিক দেশি ফলের প্রতি বড় বেশি দুর্বলতাপ্রিয়। এ বাড়ি আম, ও বাড়ির পেয়ারা কিংবা নিজ বাড়ির বরই, আহা! আমাদের স্মৃতিপটে আজও অমলিন।

এখান দেশি বরইয়ের মৌসুম। কাঁচা-পাকা এসব দেশি বরই দেখলেই জিভে পানি চলে আসতে দেরি হয় না। কেননা, আমাদের সোনালি অতীত সেই সব কাঁচা-পাকা ফলেদের স্বাদ গ্রহণে ছিল বড়ই অভ্যস্ত। দিনগুলো হারিয়ে গেলেও ফলেদের দিকে চোখ পড়লেই স্মৃতি যেন ভেসে উঠে।  

বরইয়ের বৈজ্ঞানিক নাম Ziziphus zizyphus. একেকটি গাছ প্রায় বারো থেকে চৌদ্দ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ডিম্বাকৃতির সৌন্দর্য নিয়ে পৌষ-মাঘে গাছে গাছে ঝুলে থাকে বরই।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক (এডি) কাজী লুৎফুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, দেশি বরই আমাদের ঐতিহ্য। এই সময়ের ফলের চাহিদা মিটাচ্ছে সে। তবে, এই দেশি বরই এখন কম পাওয়া যায়। প্রায় প্রতিটি বরই গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে দেশি বরই তুলনামূলক কম পাওয়া যাচ্ছে। এর পরিবর্তে বাজার এখন দখল করেছে মিষ্টি বরই। এগুলো হলো- আপেল কুল, বাউকুল, বল সুন্দরী প্রভৃতি বরইয়ের আধুনিক মিষ্টিজাতের ভ্যারাইটি। এগুলো এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যাপক চাষ হচ্ছে।  

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশি বরইগুলোকে আমরা গ্রাফটিং করে ধীরে ধীরে উন্নতজাতের করে দিচ্ছি। তবে, দেশিজাতের বরইগুলোও থাকবে এবং অবশ্যই থাকা উচিত। মুখের স্বাদবৃদ্ধিসহ আচার এবং রান্না-বান্নায় এই দেশি বরই বহু আগে থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে।  

এর পুষ্টিগুণ ও শারীরিক উপকারিতা সম্পর্কে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, দেশি বরইগুলো সাধারণত টক হয়ে থাকে। তবে, গাছপাকা বরই হলে টকভাব কমে গিয়ে অপেক্ষাকৃত সুস্বাদু হয়। টক হওয়ার কারণে এতে ভিটামিট ‘সি’ বেশি পরিমাণে থাকে। ঠোঁটের কোণা বা জিহ্বায় ঘা, ঠোঁটের চামড়া উঠে যাওয়া, টনসিলাইটিস প্রভৃতি সমস্যা বরই খেলে দূর করে। সেসঙ্গে বরইয়ে থাকে ক্যালোরি এবং ফাইভার। এর কারণে শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে। দুই আউন্স অর্থাৎ প্রায় চারটি বরই আমাদের শরীরের যে শক্তির জোগান দেয় তার বৈজ্ঞানিক হিসাব প্রায় ৪৪ ক্যালোরি।

আবার বরইয়ের আরেকটি মিষ্টি ভ্যারাইটিও রয়েছে। এগুলোতে বিভিন্ন জাতের ভিটামিন, খনিজ লবণ রয়েছে। যা পুষ্টিমাণে ভালো বলে জানান তিনি।

গ্রাম বা শহরাঞ্চলের বসতবাড়ি থেকে কিংবা রাস্তা-ঘাটের আশপাশ থেকে এখন দেশি বরই গাছগুলো কাটা পড়ে যাচ্ছে। যা খুবই দুঃখজনক। তাই দেশি বরই সংরক্ষণে দেশি বরইয়ের বাগান করা দরকার বলে জানান সিলেট কৃষি বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কাজী লুৎফুল বারী।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।