ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

উচ্চ ফলনশীল 'বিইউ' সয়াবিন ১ ও ২ বীজে দ্বিগুন ফলন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২২
উচ্চ ফলনশীল 'বিইউ' সয়াবিন ১ ও ২ বীজে দ্বিগুন ফলন

লক্ষ্মীপুর: দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ সয়াবিন উৎপাদন হয় লক্ষ্মীপুরে। এ অঞ্চলে বিভিন্ন জাতের সয়াবিন চাষ হলেও বর্তমানে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সয়াবিন-১ ও ২ (বিইউ সয়াবিন-১ ও বিইউ সয়াবিন-২)’ এ দুই জাতের সয়াবিন বীজ দ্বিগুন ফলন হচ্ছে।

যা চাষ করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।  

শুধু বাংলাদেশ নয়, বৃহত্তর এশিয়া মহাদেশের মধ্যে এই দুই জাতের সয়াবিনের সর্বোচ্চ ফলন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদরা।  

তারা জানান, স্বল্পমেয়াদী উচ্চ ফলনশীল ও প্রোটিন সমৃদ্ধ সয়াবিন বীজ উৎপাদনে 'জাত বিইউ সয়াবিন-১ ও ২' ভূমিকা রাখবে।

সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার খায়েরহাট বাজার এলাকায় উন্নত জাতের সয়াবিন বীজ বর্ধন, সম্প্রসারণ এবং মার্কেটিং সংক্রান্ত বিষয়ক ‘ক্রস ভিজিট’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন কৃষিবিদরা।

বাজারে এ দুই জাতের বীজের চাহিদা বেশি থাকায় নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে এর সম্প্রসারণ ও বাজারজাতকরণের জন্য এনজিও সংস্থা ‘সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  

এতে বক্তারা বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সয়াবিন উৎপাদন কেন্দ্র ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাকেও হার মানিয়েছে বিইউ সয়াবিন-১ ও ২। দেশ দুটির ফলনের চেয়েও বর্তমানে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে জাত দু’টির বীজের ফলন বেশি। তাই অনুন্নত সয়াবিন বীজ ব্যবহারের পরিবর্তে বিইউ সয়াবিন-১ ও ২ জাতের সয়াবিন আবাদে কৃষকদের উৎসাহী হওয়া উচিত। এজন্য চলতি মৌসুমে কৃষকদের মাঝে উন্নত জাতের বীজও সরবরাহ করা হয়েছে।  

বক্তারা আরও বলেন, চলতি বছর ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ, অতিবৃষ্টি ও বন্যার করণে এ অঞ্চলের সয়াবিন চাষ পিছিয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আবাদি জমিও কমে গেছে। গত বছর ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষ হলেও চলতি বছর মাত্র ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। এতে ৭ হাজার হেক্টর জমির সয়াবিন চাষ ব্যাহত হয়। তবে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে যে পরিমাণ সয়াবিনের আবাদ হয়েছে।  

আশা করা যাচ্ছে, গত বছরের চেয়েও উৎপাদন বেশি হবে। অনুন্নত জাতের সয়াবিন চাষে হেক্টর প্রতি ১ টন সয়াবিন উৎপাদন হতো। বর্তমানে বিইউ-১ ও ২ চাষে হেক্টরে আড়াই টন সয়াবিন উৎপাদন হবে। আবার কোনো কোনো জমিতে হেক্টর প্রতি ৪ টন সয়াবিন উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে।  

সয়াবিন থেকে ভোজ্যতেল ও বিভিন্ন ফুডস্ উৎপাদনসহ দেশের বাইরে রপ্তানি করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।  
 
‘সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’র কৃষিবিদরা বলেন, উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা অনুসরণ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি রবি মৌসুমে এখানে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে ৪৫ টন বীজ উৎপাদনের আশা করা যাচ্ছে। ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এ দুই জাতের বীজের ফল চলে আসে। এক একটি সয়াবিন গাছে অনেক ছড়া ফলন হয়।  

বিইউ-১ এ দানা সাইজে বড়। বিইউ-২ জাত লবণ সহনীয়। যা উৎপাদনে কৃষকদের আশার আলো দেখাবে। জাত দুটির চাহিদা বাড়লে বিভিন্ন কোম্পানির এ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করার সম্ভবনা রয়েছে। তাই অনুন্নত জাতের বীজ ব্যবহার না করে উন্নত জাতের বিইউ-১ ও ২ জাতের সয়াবিন বীজ আবাদের আহবান কৃষিবিদদের।  

আয়োজিত ক্রস ভিজিট অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক ড. জাকির হোসেন। ‘সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’ জেলা কো-অর্ডিনেটর প্রদীপ কুমার রপ্তান-এর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমলনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইকতারুল ইসলাম, ‘সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’র প্রোগ্রাম অফিসার কৃষিবিদ মো. ফরহাদ হোসেন।

এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জামসেদ আলম, উদ্যোক্তা কৃষক নুর উদ্দিন ও মো. হাতেম, বিভিন্ন বীজ উৎপাদক ও ব্যবসায়ীগণ। অনুষ্ঠান শেষে উন্নত জাতের বিইউ সয়াবিন-১ ও ২ জাতের বীজের প্রদর্শনী জমিগুলো পরিদর্শন করেন অতিথিরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।