ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও অখুশি চাষিরা!

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২২ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২২
পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও অখুশি চাষিরা!

ফরিদপুর: ফরিদপুরে ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে। দেশের মধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদনে ফরিদপুর দ্বিতীয়।

জেলায় তিন ধরনের পেঁয়াজ চাষ হয়। মুড়িকাটা, হালি ও দানা পেঁয়াজ। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন।  

এ জেলায় উৎপাদিত পেঁয়াজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশজুড়ে সরবরাহ করা হয়। চলতি মৌসুমে ফলন হয়েছে বাম্পার। কিন্তু দাম কম। ফলে ফরিদপুরে পেঁয়াজ চাষিদের কপালে চিন্তার ভাজ।

বিভিন্ন এলাকার পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পেঁয়াজের রাজধানী জেলার সালথা উপজেলা। হালি পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু হয়েছে। দিন ১৫ পরেই শুরু হবে পুরোপুরি। ফলন ভালো হলেও দামে অখুশি চাষিরা। এবার সালথায় ১২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে।  

জানা গেছে, ফরিদপুরের নয়টি উপজেলাতেই পেঁয়াজের আবাদ হয়। তার মধ্যে প্রথম সালথা, দ্বিতীয় নগরকান্দা। এছাড়াও ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন, মধুখালী, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও ফরিদপুর সদরেও ব্যাপক পেঁয়াজের চাষাবাদ হয়। পুরো জেলায় এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষাণ-কৃষাণীরা এখন পেঁয়াজ ক্ষেত নিয়ে পুরোপুরি ব্যস্ত। কিছু কিছু জায়গায় শুরু হয়েছে, আবার অনেক জায়গায় পুরোদমে চলছে প্রস্তুতি। এপ্রিল মাসে চাষিদের ঘরে উঠবে নতুন পেঁয়াজ।

সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের ইউসুফদিয়া গ্রামের কাইয়ুম মোল্যা বাংলানিউজকে বলেন, এবার বিঘা প্রতি ৭০ থেকে ৮০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমান বাজার মূল্য সর্বোচ্চ ৮০০-৯০০ টাকা। এরকম মূল্যে থাকলে আমাদের লাভ তো দূরে থাক, আসল ওঠা নিয়ে চিন্তা। বাজার দর ১২০০-১৫০০ টাকা হলে কৃষক বাঁচবে।  

উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, বৃষ্টির কারণে এবছর পেঁয়াজের হালি লাগানো দেরি হয়েছে। তবে ফলন ভালোই হবে আশা করছি। তবে মণ প্রতি পেঁয়াজের বাজার মূল্য কম পাচ্ছেন কৃষকরা।  

একই গ্রামের কৃষক মো. আলম শেখ বলেন, চলতি মৌসুমে ২৫ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি পেঁয়াজ-৪, লাল তীর পাঁচ একর এবং লাল তীর কিং এক একর জমিতে চাষ করেছি। পেঁয়াজ চাষে প্রচুর পরিমাণে সার, ওষুধ ও সেচের প্রয়োজন হয়। ফলে অন্য ফসলের চেয়ে পেঁয়াজে খরচ বেশি। এক মণ পেঁয়াজ উৎপাদন করতে সব মিলিয়ে খরচ হবে ৭ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা। বর্তমান বাজার মূল্যও তাই, লাভ করবো কীভাবে?  

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, চলতি মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল বারি পেঁয়াজ-৪, বারি পেঁয়াজ-৫, বারি পেঁয়াজ-১সহ বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।

জেলার মধ্যে পেঁয়াজ চাষে অন্যতম উপজেলা সদরপুর। এ এলাকার চাষিরা বেশি পরিমাণে পেঁয়াজের আবাদ করে থাকে। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। বিগত বছরগুলোতে পেঁয়াজ আবাদ করে বেশ লাভবান হচ্ছিলেন এ অঞ্চলের চাষিরা।



জেলার চরভদ্রাসন উপজেলায় এ মৌসুমে ৬৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নে ১৫৭ হেক্টর, গাজিরটেকে ২৭১, চর হরিরামপুরে ১৪৫ ও চর ঝাউকান্দায় ৭৭ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করেছেন কৃষকরা। উপজেলার চর ঝাউকান্দা বাদে অন্য তিনটি ইউনিয়নে এ বছর ১৬০ হেক্টর জমিতে দানা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।

এ ব্যা্পারে সালথা উপজেলা কৃষি অফিসার জীবাংশু দাস বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর উপজেলায় হালি পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। হালি পেঁয়াজ আবাদের সময় ভারী বর্ষণে নিম্নাঞ্চলে পানি জমে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জিত কম হয়েছে। তবে পেয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। পেঁয়াজের আরেকটু দাম পেলে কৃষকের পক্ষে ভালো হতো।


সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিধান কুমার রায় বলেন, এ বছর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে ৬৬৩ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। পেঁয়াজ চাষিদের মধ্যে সরকারিভাবে প্রণোদনার আওতায় এনে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সার, বীজসহ বিভিন্ন ধরনের কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার দর নিম্নমুখী। ক্ষতি পোষাতে কৃষকদের কিছুটা বেগ পেতে হবে।

এ বিষয়ে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হজরত আলী বাংলানিউজকে বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক দিয়ে ফরিদপুর জেলার অবস্থান দেশের মধ্যে দ্বিতীয়। চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে প্রায় ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন। আবহাওয়া ভালো থাকলে এমনটি হবে বলে আমরা আশা করছি। এছাড়া ফরিদপুরে চাহিদা মাত্র ১৬ হাজার মেট্রিক টন। বাকি পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা পূরণ করে থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।