ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

সফলতার সাক্ষী হয়ে বাতাসে দুলছে ‘শিশু পাটগাছ’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট     | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১১ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২২
সফলতার সাক্ষী হয়ে বাতাসে দুলছে ‘শিশু পাটগাছ’ নালিয়া ক্ষেত। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: চারদিকেই ঘন সবুজের সমারোহ। এমন সবুজেই কৃষকের মনে আনন্দ।

সফলতার সাক্ষী হয়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে শিশু পাটগাছ। স্থানীয় কৃষকরা ফসলটিকে ‘নালিয়া’ বা ‘নাইল্লা’ নামে ডাকেন।  

সম্প্রতি হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার মোড়াকরি গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের প্রবেশমুখে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে স্থানীয় কৃষকরা রোপণ করেছেন ঘন সবুজ পত্রগুচ্ছে আচ্ছাদিত নালিয়া। একটির গায়ে অপরটি আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে যেন তাদের বয়োবৃদ্ধির প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, জাতীয় বিবেচনায় পাটের পুরাতন ঐতিহ্য ফিরে আসছে। তবে, যদি এ ফসল উৎপাদনে স্থানীয় কৃষকদের ন্যায্যমূল্য বিবেচনা করা হয়; ফলন কয়েকগুণ বাড়ত। যা সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়তাকারী ফসল হিসেবে গণ্য হতো। মোড়াকরির নালিয়া চাষি সামছু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, দুই কানি (বিঘা) জমিতে আমি নালিয়া চাষ করেছি। এই পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছি। এই গাছগুলোর বয়স প্রায় দেড় মাস। পরিপূর্ণ পাট হতে আরো প্রায় দুই মাস লাগবে।  

তিনি আরও বলেন, পাটগাছগুলো পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পর সেগুলো কেটে প্রায় ১৫ দিন পুকুর, ডোবা বা বিলের পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়। তারপর রোদে কিছুটা শুকিয়ে সেই পাটগাছ থেকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে পাট বের করি। সবগুলো একত্রে জমাট বেঁধে আলাদা আলাদা করে রাখি।
পাটের বাজারদর সম্পর্কে এ চাষি বলেন, পাটের মণ প্রতি দাম তিন থেকে চার হাজার টাকা। এ দাম পেলে আমাদের লভ্যাংশ উঠে আসবে। এর নিচে দাম হলে আমাদের ক্ষতি হবে। গত বছর আমার পাট ভালো হয়নি। প্রচুর লোকসান গুণতে হয়েছে। এই বছর বৃষ্টিবাদল মোটামুটি হওয়াতে ফসল কিছুটা ভালো হয়েছে। এলাকার এক চাষিকে দেখা গেল নিজের শিশু সন্তানকে নিয়ে জমির আগাছা তুলছেন। তিনি জানান, তার মোট আড়াই কানি (বিঘা) জমিতে নালিয়া রোপণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৭ হাজার টাকা। পাট উঠে গেলে তারপর আমন ধান রোপণ করবেন।  
জমিতে ঘন সবুজ শিশুপাট গজালেও আক্ষেপ করে এ দুই কৃষক জানান, তারা এখন পর্যন্ত সরকারি কোন কৃষি সহযোগিতা পায়নি। সহয়াতা পেলে আরো ভালো ফসলাদি উৎপাদন করতে পারতেন তারা।

লাখাই উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাকিল খন্দকার বাংলানিউজকে বলেন,  বর্তমানে আমাদের লাখাই উপজেলায় প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হচ্ছে। এ উপজেলায় চাষাবাদের জন্য প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর কৃষি উপযোগী জমি রয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান হয়। বাকিগুলোতে অন্য ফসল।

এর প্রশ্নের উত্তরে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘পাটচাষ যারা করেন তাদের অধিকাংশই নালিয়া পাতা খাবার জন্য নয়তো অন্য ব্যক্তিগত উপকার কিংবা স্থানীয় বিপণনের কথা চিন্তা করেই চাষ করেন। ফলে পাটের চাষাবাদ বৃহৎভাবে হয় না। আর অন্য ফসলের তুলনায় এটি একটু সময়সাপেক্ষ দেখে অনেকেই এটি করতে অনিচ্ছুক থাকেন। বোরো ধান করার পর যে অবশিষ্ট সময়টুকু থাকে সেখানেই কোনো কোনো কৃষক নালিয়া চাষ করতে আগ্রহ হন। তখন জমিতে পানিও বাড়তে এ ফসলও বাড়ে। ’

কৃষকরা যদি সম্মিলিতভাবে গুরুত্ব দিয়ে এ ফসলটি চাষ করতে চান; সে ক্ষেত্রে লাখাই হয়ে উঠবে অধিক সম্ভাবনাময় একটি এলাকা। আমাদের পাটে আগের যে ঐতিহ্য ছিল সেটি যদি ফিরে আসতো এবং এর পাশাপাশি আমাদের কৃষকরা যদি পাটের ন্যায্যমূল্য পান তাহলে বর্তমান চাষাবাদ ৪০ হেক্টর ছাড়িয়ে ৪ হাজার হেক্টর হতে পারবে বলেও আশা প্রকাশ করেন শাকিল খন্দকার।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২২
বিবিবি/এমজে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।