ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

এক মণ ধানে কৃষকের লাভ ১১৬ টাকা!

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২২
এক মণ ধানে কৃষকের লাভ ১১৬ টাকা!

মানিকগঞ্জ: ‘কচি ধানে আশার প্রদীপ স্বপ্ন দিবানিশি, দেশ বাঁচবে দশ বাঁচবে বাঁচবে কৃষক ও কৃষি’ এমন কথাগুলো কবির কবিতায় লেখা বাস্তবিক চিত্র ভিন্ন। জেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ফলন আশানুরূপ হলেও বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হবে এমনটাই বললেন একাধিক কৃষক।

সরকারিভাবে ২৭ টাকা কেজি দরে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার কথা কিন্তু এক কেজি ধান উৎপাদন করতে কৃষকের খরচ হয় প্রায় ২৪ টাকা ১০ পয়সা। দীর্ঘ সময় জমিতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষক উৎপাদন করেছে সোনার ফসল বোরো ধান। আর সরকারিভাবে যে টাকা ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে প্রতি কেজিতে ২ টাকা ৯০ পয়সা করে লাভ হয়। প্রতি মণ ধান উৎপাদন করতে কৃষকের খরচ হয় ৯৬৪ টাকা। সরকারি দাম অনুযায়ী এক মণ বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০ টাকা। তার মানে ৯৬৪ টাকা খরচ করে কৃষকের মণ প্রতি লাভ হবে ১১৬ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উফশী জাতের বোরো ধান সদর উপজেলায় ৮ হাজার ৬৩৫, সিংগাইরে ৮ হাজার ২৪৫, সাটুরিয়ায় ৫ হাজার ১১০, ঘিওরে ৫ হাজার ৪৯৫, দৌলতপুরে ৬ হাজার ৭২৫, শিবালয়ে ৬ হাজার ৩১৫, হরিরামপুরে ৩ হাজার। হাইব্রিড জাতের বোরো ধান সদরে ১৮০, সিংগাইরে ১৩০, সাটুরিয়ায় ৪৩০, ঘিওরে ১ হাজার ৬০, দৌলতপুরে ৫১৫, শিবালয়ে ১০৫, হরিরামপুরে ১৩০। স্থানীয় জাতের বোরো ধান সদরে ১০, সিংগাইরে ১০, সাটুরিয়ায় ১০, ঘিওরে ০, দৌলতপুরে ৪৫০, শিবালয়ে ২৫, হরিরামপুরে ১৯৫। মোট ৪৬ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

উফশী জাতের বোরো ধান সদর উপজেলায় ৮ হাজার ৮৫০, সিংগাইরে ৮ হাজার ৪১৭, সাটুরিয়ায় ৫ হাজার ২৩৫, ঘিওরে ৫ হাজার ৪৫০, দৌলতপুরে ৬ হাজার ৮৪০, শিবালয়ে ৬ হাজার ৩০৬, হরিরামপুরে ৩ হাজার ৯২। হাইব্রিড জাতের বোরো ধান সদরে ১৫০, সিংগাইরে ২৭৩, সাটুরিয়ায় ৪৩০, ঘিওরে ১ হাজার ২০০, দৌলতপুরে ৫০০, শিবালয়ে ৪৩৫, হরিরামপুরে ১৬২। স্থানীয় জাতের বোরো ধান সদরে ১০, সিংগাইরে ১০, সাটুরিয়ায় ০৫, ঘিওরে ০, দৌলতপুরে ৪৮০, শিবালয়ে ২০, হরিরামপুরে ১২০। জেলার সাতটি উপজেলায় মোট ৪৭ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে যা কী না গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেশি।

জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় ঘুরে দেখা যায়, উফশী হাইব্রিড ও দেশীয় জাতের বোরো ধানের আবাদ হয়েছে সর্বত্র। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরেই জেলার প্রায় সব কয়েকটি উপজেলায় বোরো ধান কাটা থেকে মাড়াইয়ের কাজ পুরো দমে শুরু হয়েছে। ধান কাটা থেকে মাড়াই করার কাজে শ্রমিকদের অতিরিক্ত মজুরি হওয়ায় কৃষক বেশ বেকায়দায় পড়ে গেছে। প্রতি শ্রমিককে কাজে নেওয়ার জন্য পারিশ্রমিক কৃষককে গুনতে হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১৩ টাকা। আর সরকারিভাবে প্রতি কেজি বোরো ধান কেনার জন্য মূল্য নির্ধারণ করেছে ২৭ টাকা, এর মানে এক মণ বোরো ধানের মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৮০ টাকা যেখানে এক জন শ্রমিকের মজুরি ১ হাজার থেকে প্রায় ১৩শ’ টাকা। যেখানে সরকারিভাবে বোরো ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ টাকা কেজি, আর বপন থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রতি কেজি ধানে খরচ হয়েছে প্রায় ২৪ টাকা ১০ পয়সা। কেজিতে লাভ হচ্ছে ২ টাকা ৯০ পয়সা তার মানে প্রতি মণে লাভ হবে ১১৬ টাকা এমনই হাস্যকর পরিসংখ্যানের কথা বললেন স্থানীয় চাষিরা।

সদর উপজেলার গজারিয়া চকের বোরো ধান চাষি সফিক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ২০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি ফলনও বেশ ভালো হয়েছে কিন্তু শ্রমিকের মজুরি ও হাটে দাম না পাওয়ায় লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা আছে।  

সাটুরিয়া উপজেলার কৃষক জামাল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমি ২৯ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছি, জমি চাষ থেকে বোরো ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত ১৩ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। এই জমি থেকে ১৪ মণ ধান পেয়েছি, সরকারিভাবে ২৭ টাকা কেজি দরে ধান কেনার কথা বলেছে অথচ আমার খরচ হয়েছে প্রতি কেজিতে ২৪ টাকা ১০ পয়সা। এক মণ ধান বিক্রি করলে লাভ হবে ১১৬ টাকা, তার মানে জমির মূল্য ও আমার পারিশ্রমিক বৃথা।  

মানিকগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেখ রিয়াদ কামাল রনি বাংলানিউজকে বলেন, সরকারিভাবে প্রতি কেজি ধান ২৭ টাকা তার মানে এক মণ ধান কৃষক বিক্রি করতে পারবে ১ হাজার ৮০ টাকা করে। কৃষকের প্রতি কেজিতে ২৪ টাকা ১০ পয়সা খরচ হয়েছে এবং সেখানে সরকারিভাবে ধান ক্রয় করছে ২৭ টাকা 

দামে কি কৃষকের তেমন লাভ হচ্ছে না এমন প্রশ্নে তিনি আরো বলেন, এই ধানের ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করার জন্য একটি কমিটি রয়েছে তারাই মূলত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা এ বছর লটারির মাধ্যমে ৫ হাজার ৭০১ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।  

মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামার বাড়ি) উপ-পরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লা্হ বাংলানিউজকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বোরো মৌসুমে গত বছরের চেয়ে বোরো ধানের আবাদ বেশি হয়ছে। সঠিক দাম পেলে কৃষক এ বছর বেশ লাভবান হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।