ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

জাম্বুরাতে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২২
জাম্বুরাতে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা লভীবাজারের জাম্বুরার বাম্পার ফলন। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জাম্বুরার সুনাম রয়েছে। এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিবছরই এখানে জাম্বুরার বাম্পার ফলন হয়ে থাকে।

এতে কৃষকের মুখে থাকে সবসময় তৃপ্তির হাসি।  

জাম্বুরা গাছে দীর্ঘদিন ফল হওয়ায় এ ফলের চাষাবাদের মধ্য দিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কলমের চারা রোপণের ২-৩ বছরের মধ্যে জাম্বুরার ফলন পাওয়া সম্ভব। তবে বীজের চারার গাছ থেকে ফলন আসতে সময় লাগে ৫-৬ বছর। প্রতিটি গাছের গড় আয়ু ৪০-৫০ বছর, ফলনও পাওয়া যায় দীর্ঘ দিন ধরে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল আসে এবং ফল আসে অক্টোবর থেকে নভেম্বরে। তবে দাম ভালো পাওয়ার আশায় অনেকেই এ ফলটি আগাম বিক্রি করে দেয়।

‘ভিটামিন সি’ সমৃদ্ধ  ফল হওয়ায় এ অঞ্চলে উৎপাদিত জাম্বুরার চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। পাহাড়ি এলাকার টিলাগুলোতে এর ফলন ভালো হয়। জুড়ী উপজেলায় জাম্বুরার বাণিজ্যিক কোনো বাগান নেই। বসতবাড়ি, স্কুল-কলেজের আশপাশে ও পতিত জায়গায় জাম্বুরার চাষ হয়ে থাকে। কোনো কোনো অঞ্চলে এটি বাতাবি লেবু নামেও পরিচিত। অন্যান্য ফলের তুলনায় যেমন দামে সস্তা, তেমন পুষ্টিতেও ভরপুর। টক-মিষ্টি এ ফলটি লবণ-মরিচ মিশিয়ে মাখিয়ে খেতে ভীষণ ভালো লাগে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে প্রতি হেক্টরে ১৫-২০ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার হায়াছড়া, শুকনাছড়া, জামকান্দি, দুর্গাপুর, গোবিন্দপুর, বিনোদপুর, লালছড়া, রোপাছড়া, লাঠিটিলা, কুচাইরতল, কচুরগুল, কালাছড়া ও পুটিছড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের টিলাবাড়ি বা বসতবাড়ির আশপাশে ৬৬ হেক্টর জমিতে প্রায় ১০ হাজার জাম্বুরা গাছ রয়েছে। গাছ প্রতি ২০০-৫০০ জাম্বুরার ফলন হয়েছে। এগুলো বেশির ভাগই স্থানীয় জাতের। এ অঞ্চলের চাষিরা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি জাম্বুরা চাষেও আগ্রহ ও উৎসাহ দেখাচ্ছেন।

জাম্বুরা কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের প্রায় শতাধিক জাম্বুরা গাছ রয়েছে। গত বছর দেড় লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। এবারেও ভালো ফলন হয়েছে। তবে পানির অভাবে অনেক সময় এ ফলের উৎপাদন কম হয়। সরকার যদি আমাদের কে সেচের ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে ফলন আরো ভালো হত।

অপর কৃষক মোরশেদ ও বাবুল মিয়া জানান, যদি স্থানীয় বাজারে উপযুক্ত দাম পাওয়া যেত, তাহলে জাম্বুরা চাষে অনেকেই আগ্রহী হতেন। স্থানীয় বাজারে পাইকারি ১০-১২ টাকা দামে একেকটি জাম্বুরা বিক্রি হয়। পাইকারদের কাছ থেকে ক্রেতারা ৩০-৪০ টাকার কমে কিনতে পারেন না। ফলে চাষিদের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন পাইকাররা।

জুড়ীর বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় এখানকার জাম্বুরা চট্টগ্রাম, সিলেট ও ভৈরবে বিক্রি করতে নিয়ে যান। সেখানে জাম্বুরার ভালো চাহিদা রয়েছে এবং দামও ভালো পাওয়া যায় বলে জানান তারা।

উপজেলা কৃষি অফিসার মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, জুড়ীর জাম্বুরা সুস্বাদু ও রসালো হওয়ায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় দুটি জাত কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে দেশব্যাপী সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। প্রতি বছরের মত এবারও ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। ভালো ফলনের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।