ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

নরসিংদীর ৪০০ হেক্টর জমির কলাক্ষেতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডব

সুজন বর্মণ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২২
নরসিংদীর ৪০০ হেক্টর জমির কলাক্ষেতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডব

নরসিংদী: সুস্বাদু কলার জন্য সারাদেশে নরসিংদী জেলার সুনাম রয়েছে। স্বাদের কারণে সবার কাছে এর কদরও বেশি।

জেলাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায় নরসিংদীর কলা। আর কলা চাষ করে স্বাবলস্বীও হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা।  

কারো বাগানে কলা ধরতে শুরু করেছিল, কারো বাগানের কলা প্রায় বিক্রির উপযুক্ত হয়েছিল। ঠিক এমন সময় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং গুঁড়িয়ে দিয়েছে নরসিংদীর কলা চাষিদের স্বপ্ন।  

সোমবার (২৪ অক্টোবর) সারাদেশের মতো নরসিংদীর ওপর দিয়েও বয়ে যায় এ ঝড়। ঝড়ে শত শত একর কলাবাগান মাটিতে মিশে গেছে। সাত থেকে আট মাস কঠোর পরিশ্রম ও নগদ টাকা খরচ করার পর ফসল ঘরে তোলার আগমুহূর্তে এমন ক্ষতি হওয়ায় কলা চাষিদের এখন মাথায় হাত।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ছয়টি উপজেলায় এবার এক হাজার ৮০৮ হেক্টর জমিতে কলা চাষ করা হয়েছে। তবে মনোহরদী উপজেলার হাতিরদিয়া, চালাকচর পলাশ উপজেলার রাবান,বরাব, কুড়াইতলী জিনারদী ও শিবপুর উপজেলার দুলালপুর, সাধারচর এলাকায় প্রচুর কলা চাষ করা হয়। এর মধ্যে সাগর, অমৃত সাগর, চাম্পা বা চিনি চাম্পা, হোমাই ও সবরিসহ ১০ ধরনের কলা চাষ হয়ে থাকে।

তবে সিত্রাংয়ের কারণে নরসিংদীর ফসলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কলার ক্ষতি হয়েছে। জেলার প্রায় ৪০০ হেক্টর কলাক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।  

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিবপুরের প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে তিন হাজার কৃষক কলা চাষ করেছিলেন। সোমবার রাতের ঝড়ে এসব কলা বাগানের অধিকাংশ গাছই নষ্ট হয়ে গেছে।  পুরো ক্ষেত একেবারে দুমড়ে মুচড়ে গেছে। অনেকেই কলা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কেউ এক বিঘা, কেউ দেড়, কেউ বা তিন বিঘা জমিতে কলার আবাদ করেছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন কলা বিক্রি করার। কিন্তু সিত্রাং সেই স্বপ্ন নিমিষেই নষ্ট করে গেছে। তাই তারা সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করছেন।

কলা চাষি সাধারচর ইউনিয়নের সৈদরখোলা গ্রামের আলামিন বলেন, এবার দেড় বিঘা জমিতে প্রায়  চার শতাধিক চাম্পা কলা গাছ লাগিয়েছি। সার, কীটনাশক, শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিয়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকার মতো খরচ করেছি। সাত-আট মাস ধরে গাছের পরিচর্যা করেছি। আর এক মাস পরেই কলা বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাত সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। আমার তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সাধারচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য নাজমুল হোসেন বলেন, আমাদের এ অঞ্চলের বেশিরভাগ কৃষকই কলা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে কলা বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লাখ লাখ টাকা লোকসানের হচ্ছে কৃষকদের।  সরকারের কাছে আমি তাদের জন্য সহায়তা দাবি করছি।

পলাশ উপজেলার পারুলিয়ার কলা চাষি মশিউর মিয়া বলেন, আর মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন পরেই বিক্রি করতে পারতাম কলা। কিন্তু  তুফানে একেবারে সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমার অমৃত সাগরের প্রায় তিন শতাধিক কলাগাছ ভেঙে মাটিতে পড়ে গেছে।  প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মনোহরদী উপজেলার একদুয়ারিয়া গ্রামের মোহাম্মাদ আলী বলেন, ধার-কর্জ করে বাগান করেছিলাম। আগামী এক মাস পরেই কলা বিক্রি করে ধার-দেনা শোধ করেও লাভ থাকতো। সব স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিল এ ঝড়।

নরসিংদীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক মো. ছাইদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে জেলার বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কলা। প্রতিটি কলাক্ষেতের প্রায় ২৪% ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া কিছু ধান ও পেঁপেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করছি, যাতে কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে সাহায্য করা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।