ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

জলাবদ্ধতা, সিরাজগঞ্জে ৪ হাজার একর জমিতে উৎপাদন ব্যাহত

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২২
জলাবদ্ধতা, সিরাজগঞ্জে ৪ হাজার একর জমিতে উৎপাদন ব্যাহত

সিরাজগঞ্জ: নানা অব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনাহীনতায় সিরাজগঞ্জে ৩ হাজার ৭৩১ একর জমিতে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব জমির অধিকাংশই ৬/৭ মাস পানির নিচে থাকে।

ফলে বছরের দুটি আবাদ তেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। আবার কোন কোন জমি জলাবদ্ধ হয়ে সারা বছরই পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এতে বছরে ২০ থেকে ২৫ হাজার মেট্রিক টন ধান, ১২-১৫ হাজার মেট্রিক টন সরিষাসহ হাজার হাজার মেট্রিক টন সবজির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যত্রতত্র পুকুর খনন, খাল, নদী ও ক্যানেল বন্ধ করে অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণ, সেতু-কালভার্টের মুখ বন্ধ করে স্থাপনা নির্মাণের ফলে নিকটস্থ জমিগুলো জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। এতে যেমন হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, পাশাপাশি কমে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন। জলাবদ্ধতা নিরসনে বিএডিসির চোখে পড়ার মতো কোনো প্রকল্প নেই বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী কৃষকদের।

উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যে প্রায় পৌনে চার হাজার একর জমি জলাবদ্ধ থাকার কথা বলা হলেও বাস্তবে এর পরিমাণ ৫ হাজার একরের বেশি বলে স্থানীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

বিভিন্ন উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে জেলার ৯ উপজেলায় ৩ হাজার ৭৩১ একর জমি জলাবদ্ধ হয়ে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৭৫ একর রায়গঞ্জ উপজেলায়। একমাত্র যমুনা বিধৌত চৌহালী উপজেলায় কোনো জলাবদ্ধ জমি নেই। এছাড়া তাড়াশে ৮৬৫ একর, বেলকুচিতে ৬৬৭, সদরে ৪৯২, কামারখন্দে ২৭১, শাহজাদপুরে ২২২, উল্লাপাড়ায় ৮৯ ও কাজিপুরে ৫০ একর জমিতে জলাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় অবাধে পুকুর খনন, খাল-ক্যানেল বন্ধ করে রাস্তা ও স্থাপনা নির্মাণের ফলে প্রতি বছরই জলাবদ্ধতা বাড়ছে।

তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাধবপুর, সাস্তান, মথুরাপুর, বিদি মাগুড়া ও শ্রীকৃষ্ণপুর এলাকায় প্রায় এক হাজার বিঘা জমি পানির নিচে রয়েছে। বর্ষা পেরিয়ে শীত এলেও এসব জমিতে এখনো হাঁটু পানি রয়েছে। পুরো মাঠ কচুরিপানাসহ জলজ উদ্ভিতে ভরে রয়েছে। একই অবস্থা মাধাইনগরের সরাপপুর ও ঝুরঝুরি এলাকায়ও। এখানে সারা বছরই জলাবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ হয় না বললেই চলে।

তাড়াশ সদর ইউনিয়নের এসএমই (ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তা) কৃষক মনসুর রহমান বলেন, কয়েক বছর আগেও ভু্ইয়াগাঁতী থেকে সলঙ্গার আমসাড়া, ঝুরঝুরিয়া, মাধবপুর, আগরপুর হয়ে মহিষলুটি পর্যন্ত একটি ছোট নদী ছিল। বর্ষা মৌসুমে ওই নদীতে নৌকা নিয়ে নওগাঁ ও অনুখাঁর হাটে যাওয়া যেত। কিন্তু যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে নদীটির বিভিন্ন স্থান বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এসব এলাকার ফসলি জমির পানি নিস্কাশন হচ্ছে না। যে কারণে এক হাজার বিঘার মতো জমি সারাবছরই জলাবদ্ধ থাকে। চলতি বছরও সরিষার আবাদ ব্যহত হয়েছে। শঙ্কা রয়েছে পরবর্তী বোরো চাষ নিয়েও।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফন্নাহার লুনা বলেন, এখানে বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রায় ৫শ হেক্টর জমি জলাবদ্ধ থাকে। চলতি বছরও প্রায় সাড়ে তিনশো হেক্টর জমি জলাবদ্ধ রয়েছে। পুকুর খননের কারণে আশপাশের জমিগুলো জলাবদ্ধ হয়। সেই জমিগুলোর পানি নিস্কাশন করা যাচ্ছে না, ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়েই পুকুর খননের দিকে ঝুঁকছেন।

রায়গঞ্জ উপজেলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান তালুকদার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৃপ্তি কনা মন্ডল বলেন, আমরা জলাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে এ উপজেলায় জাইকার তিনটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সিমলা, সোনাখাড়া ও ধুবিল ইউনিয়নের সংযোগ এলাকা এবং ধানগড়া ইউনিয়নে এ তিনটি প্রকল্পের কাজ শিগগিরই শুরু হবে।

তিনি বলেন, এসব প্রকল্পের মধ্যে খাল খনন ও আন্ডার পাইপ লাইনের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন করা হবে। এছাড়া উপজেলা পরিষদ থেকে ধামাইনগর, ব্রহ্মগাছা, নলকা ও পাঙ্গাসী ইউনিয়নের জলাবদ্ধতা নিরসন করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করছি আগামী বছর আর কোনো জলাবদ্ধতা থাকবে না।

বিএডিসির (ক্ষুদ্র সেচ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাছুদ আলম বলেন, জলাবদ্ধতার নিরসনে প্রথমে স্থানীয় কৃষক কিংবা ইউপি চেয়ারম্যান লিখিত আবেদন করবেন। আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে উপজেলা সেচ কমিটি সেটা অনুমোদন দেবে। এরপর পাবনা প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় থেকে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। সিরাজগঞ্জের জলাবদ্ধতা নিরসনে দেওয়া আবেদনগুলোর মধ্যে কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। কিছু বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, অস্থায়ী জলাবদ্ধ জমিগুলোতে একটি বা দুটি ফসল আবাদ করা সম্ভব হয়। আর স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টি জেলা সমন্বয় সভায় উত্থাপন করা হবে। সেগুলো প্রকল্পের মাধ্যমে চাষযোগ্য করার জন্য কাজ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা নভেম্বর ১৫, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।