ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আরব-আমিরাত

দুবাইয়ে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশি শিশুটির মা কোথায়?

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৫
দুবাইয়ে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশি শিশুটির মা কোথায়?

ঢাকা: বাংলাদেশি মায়ের গর্ভে শিশুটির জন্ম সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। কিন্তু জন্মের একমাসের মাথায় আমিরাতের নিয়মে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হন তার গৃহশ্রমিক মা সাথী আক্তার।

তবে অপরিপক্ক অবস্থায় জন্ম নেওয়া শিশুটিকে হাসপাতালে রেখে আসেন তিনি।

শিশুটির বর্তমান বয়স দেড় বছর। আমিরাতের নিয়মে মা-বাবা না থাকায় তার নামও রাখা হয়নি। জন্মকালীন জটিলতা কাটিয়ে এখন সুস্থ্ সাথীর শিশুপুত্র। এবার তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে চায় আমিরাত সরকার। কিন্তু বিপত্তি ঘটেছে শিশুটির দাবিদার নিয়ে। এক বছরের বেশি সময় পার হলেও দেশে ফিরে আসা তার মা তাকে ফেরত পেতে কোন যোগাযোগ করেননি। ফলে দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সাহায্য নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কনস্যুলেট দেশে যোগাযোগ করেও তার মায়ের সন্ধান পায়নি। এ অবস্থায় শিশুটির দায়িত্ব নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত শিশুমনি নিবাসে রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ কনস্যুলেটকে নির্দেশনা দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গল্পের শুরুটা আরো আগের। পরিবারের স্বচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে কয়েকবছর আগে বাংলাদেশ থেকে আমিরাত যান সাথী। দেশটিতে কর্মরত অবস্থায় ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ের ফুজাইরা হাসপাতালে তিনি এই শিশু পুত্রের জন্ম দেন। তার সন্তানটি ছয়মাসের মধ্যে ডেলিভারি হওয়ায় অপরিপক্ক সন্তান বিবেচনায় হাসপাতালের বেবি কেয়ার সেন্টারের নিবিড় পর‌্যবেক্ষণে রাখা হয়। এর এক মাসের মাথায় ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় সাথী আক্তারকে দেশে ফেরত পাঠায় আমিরাত পুলিশ। আর ওদিকে হাসপাতালের সেবা ও পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ওঠে তার শিশুটি।

জানা যায়, ফুজাইরা হাসপাতালে ছয় মাসের বেশি বয়সের শিশুদের রাখার নিয়ম নেই। ফলে শিশুটি অন্যান্য শিশুদের নিবিড় সেবা ও পরিচর্চার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে দাবি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে তাকে বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেটকে অনুরোধ জানায়। হাসপাতালে জমা দেওয়া সাথীর পাসপোর্টের ঠিকানা অনুযায়ী তার বাড়ির ঠিকানায় যোগোযোগ চিঠি দিয়েও কোন সাড়া পায়নি কনস্যুলেট। এমনকি পাসপোর্টে থাকা ফোন নম্বরে ফোন করা হলেও একজন নারী জানান, তিনি সাথী নন, এবং তার কোনো বাচ্চা নেই।   কনস্যুলেট পরে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও যোগাযোগ করে শিশুটির মা সাথী আক্তারের সন্ধান পাওয়া সম্ভব হয়নি।

আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, সাথী আক্তারের পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী তিনি অবিবাহিত অবস্থায় দেশটিতে গিয়েছিলেন। পরে ওখানে গিয়ে বাংলাদেশি আরেকজন শ্রমিকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। আমিরাতে প্রবাসীদের বিয়ের সুযোগ নেই বলে বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করা একটি বিয়ের কাবিন নামাতে সই করে তারা স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করতেন। হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী সেই কাবিন নামার একটি কপিও জমা দেন সাথী। তবে সেখানে তার স্বামীর পূর্ণ ঠিকানা না থাকায় শিশুটির বিষয়ে তার সঙ্গে কোন যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে কোন অভিভাবককে না পেলেও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় শিশুটিকে দেশে ফেরত আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের অধীনস্ত ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন ও উন্নয়ন) নুরুন আখতার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানানো হয়েছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সম্মানিত প্রবাসী বাংলাদেশি সাথী আক্তারের শিশু পুত্রটিকে সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত ছোট মনি নিবাসে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দুবাই কনস্যুলেটের প্রথম সচিব (শ্রম) একেএম মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ‘নানাভাবে সাথী আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনভাবেই তার সাড়া মেলেনি। এখন যেহেতু শিশুটিকে শিশুমনি নিবাসে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, শীঘ্রই ট্রাভেল পাস নিয়ে একজন সহকারীসহ তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। ’

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বলছে, যেকোন মাধ্যমে তার মা যদি খবর পান, তাহলে প্রমাণ সাপেক্ষে নিজের শিশুকে ফেরত নিতে পারবেন তিনি।

হাসপাতালে জমা দেওয়া সাথী আক্তারের পাসপোর্ট নম্বর AD0824283. পাসপোর্টে দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী তিনি নওগাঁ জেলার সদর থানার পার-নওগাঁ নামক গ্রামের গোলাম মওলার কন্যা।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪৪ ঘণ্টা,আগস্ট ১৪, ২০১৫
জেপি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আরব-আমিরাত এর সর্বশেষ