ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

পর্যটনের অন্তরায় যোগাযোগ ব্যবস্থা

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩০ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৪
পর্যটনের অন্তরায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বড় কোনো গাড়ি নিয়ে দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরে যাওয়া যায় না চিকন সড়কের কারণে। সোজা একটি সড়ক তৈরি করে দিলে মন্দিরে যেতে ৪৫ মিনিটের পথটি অতিক্রম করা যায় মাত্র ৫ মিনিটে।

একইভাবে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে যেতে সোজাসুজি একটি সড়ক তৈরি করে দিলে সাশ্রয় করা সম্ভব আধা ঘণ্টা সময়।

কান্তজীর মন্দির কিংবা পাহাড়াপুর বৌদ্ধ বিহার দুটিই পর্যটন স্পট। ঐতিহাসিক এই দুটি স্পটে দেশীয় পর্যটকই নন, বিদেশি অনেক পর্যটকও আসেন। কিন্তু সড়ক যোগাযোগ উন্নত না হওয়ায় এসব স্পটে যেতে পর্যটকদের পোহাতে হয় ভোগান্তি।

ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃত বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ। ঢাকা থেকে মাওয়া ফেরিঘাট হয়ে এর দূরত্ব মাত্র ২০০ কিলোমিটারেরও কম। ঢাকা থেকে বাগেরহাটের  সড়কপথ খুবই চমৎকার। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই সড়কের ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়। ১৫’শ শতকের ষাটগম্বুজের এই বিশ্ব ঐহিত্যটি দেখতে দেশি পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকেরাও আসেন। এতসব উন্নয়নের পরেও এই পথটুকু যেতে লাগে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা। এর মধ্যে মাওয়া ফেরি পার হতে কেটে যায় তিন থেকে চার ঘন্টা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য অধ্যাপক মজিব উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, পর্যটনের উন্নয়নে সরকারের আলাদাভাবে কিছু করার দরকার নেই। শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজটি সরকার করে দিলে বিনিয়োগকারীরা হোটেল মোটেল তৈরি করবে। পর্যটকরাও ছুটে আসবে।

অধ্যাপক মজিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় সড়ক ও নদীপথ দু’ভাবেই যাওয়া যায়। দেশের অধিকাংশ মানুষ সড়কপথই বেছে নিচ্ছে কুয়াকাটায় যেতে। কিন্তু যদি নদীপথে সে ধরনের নৌযানের ব্যবস্থা করে মানুষকে উৎসাহী করা যায় তাহলে সড়কপথের চেয়ে নদীপথেই বেশি পর্যটক যাবেন।

ট্যুরিজম বিশেষজ্ঞ ও পর্যটন ভিত্তিক পাক্ষিক বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে তা চলনসই। তবে বাস, রেল, নৌ ও আকাশপথের যোগাযোগ আরো বাড়াতে হবে। এজন্য রাস্তাঘাটের উন্নয়ন প্রয়োজন।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) এর পরিচালক ও বেঙ্গল ট্যুরস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দেশের সার্বিক অবকাঠামো ভালো না। ১৫ বছর আগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে লাগতো সাড়ে ৫ ঘণ্টা। আর এখন লাগে ১৪ ঘণ্টা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে এবং সময় সাশ্রয়ী হবে। কিন্তু আমাদের এখানে তা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সড়ক পথে যেতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। এজন্য একটু যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা আকাশপথেই ভ্রমণ করছেন। তবে এখানেও পর্যটকদের রেহাই নেই। সড়ক যোগাযোগের বেহাল দশার কারণে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে অনেক বেশি ভাড়া আদায় করছে। তাছাড়া অধিকাংশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ ও সেবার মানও ভালো নয়। অর্থ‍াৎ এখানেও পর্যটকরা সঠিক সেবা পাচ্ছে না। বেশি ভাড়া দিয়েও তারা এক প্রকার প্রতারিত হচ্ছেন।

আকাশপথে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যাত্রীপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৬ হাজার টাকার ওপরে। বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রুটে তিন হাজার টাকা ভাড়া নিয়েও এয়ারলাইন্সগুলো মুনাফা করতে পারে। কিন্তু এয়ারলাইন্স সংখ্যা বেশি না হওয়ায় কয়েকটি এয়ারলাইন্স যাত্রীদের জিম্মি করে অতিমুনাফা করছে।

এ বিষয়ে পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি বলেন, এই সরকারের আমলেই পদ্মা সেতু নির্মিত হবে। তখন এই রুটে সাধারণ মানুষসহ পর্যটকদের ভোগান্তি দূর হবে। সেই সঙ্গে তিনি অন্যান্য পর্যটন স্পটে যেতে ভোগান্তি দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৮ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।