ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

আনন্দ ও মৃত্যু হাতছানি দিয়ে ডাকে

ইবনে আমিন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪১ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৪
আনন্দ ও মৃত্যু হাতছানি দিয়ে ডাকে ছবি: ফাইল ফটো

কক্সবাজার: বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ও একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। সমুদ্রের বিশাল জলরাশি যেন পর্যটকদের আনন্দ দেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত ঢেউয়ের তালে গর্জন করে চলেছে।

পর্যটকরা মাত্রাতিরিক্ত আনন্দ পেতে সমুদ্র স্নান করতে গিয়েই ঘটছে সাগরে ভেসে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা। প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক এখান থেকে আনন্দ নিয়ে ঘরে ফিরলেও কিছু দুর্ঘটনায় অনেক পরিবারে নেমে আসছে চরম অমানিষা।
   
কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন ঘুরতে আসা পর্যটকদের মধ্যে প্রবীণ লোকজন ছাড়া শিশু থেকে যুবক শ্রেণির সব মানুষই সমুদ্র স্নানের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন। সেই সুযোগকেই যেন কাজে লাগায় সাগর। নিজের করে নেয় অনেক পর্যটককে। অর্থাৎ ভাসিয়ে নিয়ে সলিল সমাধি ঘটায়। গুপ্তখালে পড়ে কিংবা অন্য কোনো কারণে কয়েক ফুট পানিতে দাঁড়ানো মানুষের পা একবার ফসকে গেলেই ঘটে যায় মহা বিপদ।

এসব বিপদ থেকে পর্যটকদের রক্ষার জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ আজ অবধি লক্ষ্য করা যায়নি। যার ফলে গত ২০ বছরে শতাধিক প্রাণ কেড়ে নিয়েছে সমুদ্র। এসব নিহতদের মধ্যে অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছাত্র।
   
তবে ১৯৯৫ সালে ইয়াসির নামে এক কিশোর সাগরে ভেসে গিয়ে মৃত্যুবরণ করার এক বছর পরেই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গড়ে ওঠে ইয়াসির লাইফ গার্ড। ইয়াসিরের বাবা বিদেশি কোম্পানি ডানকানস্ এর কর্মকর্তা ছিলেন। সাগরে হারিয়ে যাওয়া কর্মকর্তার ছেলের খোঁজে হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করেছিলো ওই কোম্পানি। বড় মাপের কোম্পানির মানব হিতৈষী দিক থাকার প্রয়োজনীয়তাবোধ কাজ করায় ডানকানস্ এই সৈকতে গড়ে তোলে ইয়াসির লাইফ গার্ড নামক একটি সেবা প্রতিষ্ঠান।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মহাবিপদগ্রস্ত শতাধিক পর্যটকের প্রাণ বাঁচানোর মহাউপকারী কাজটি ইতোমধ্যে বেশ দক্ষতার সঙ্গেই করে চলেছে এই লাইফ গার্ড। তাদের দেখাদেখি কয়েক বছর আগে মোবাইল অপারেটর রবি মানব হিতৈষী ব্যয়ের আওতায় গড়ে তুলেছে রবি লাইফ গার্ড।
   
বিগত ওয়ান ইলেভেনের পট পরিবর্তনের পর সামরিক সমর্থনপুষ্ট সরকার বেশ উদ্যোগী হয়েছিলো কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে। তৎকালীন সময়ে কক্সবাজারে ডিজিএফআই’র কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল গোলাম মাওলা ও জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম আয়োজন করেছিলেন কয়েকটি মতবিনিময় সভা। এসব সভায় নেওয়া হয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ৩০টি সিদ্ধান্ত। সরকার পরিবর্তনের পর পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ায় পর্যটকদের নিরাপত্তায় সৈকত পুলিশ গঠন ও কলাতলী মোড়ে বেসরকারি উদ্যোগে একটি আকর্ষণীয় ভাস্কর্য স্থাপন ছাড়া আর কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি।

বিচে আলিফ-লাম-মীম নামক একটি মসজিদ স্থাপন করা হলেও প্রকৃতপক্ষে ব্যতিক্রমধর্মী মূল নকসার ধারে কাছেও যাওয়া হয়নি। ফলে মসজিদটিতে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো কোনো উপকরণ বা স্থাপত্যশৈলী স্থান পায়নি।
   
গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সমূহের মধ্যে বিদেশি পর্যটকদের জন্য এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন প্রতিষ্টা ও সমুদ্র স্নানের জায়গা নির্দিষ্ট করে তারজালির/সুতাজালির ব্যবস্থা আজও পরিকল্পনার সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ থেকে গেছে। ফলে সাগরে ভেসে যাওয়ার হাত থেকে পর্যটকদের অমূল্য প্রাণ রক্ষার বিষয়টি উপেক্ষিত। এছাড়া পর্যটকে ভরপুর বিচে যত্রতত্র বাইক চালানো, স্পিডবোট ও ঘোড়ার চলাচল যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ না থাকলেও বিচের লাভজনক ‘কিটকট’ বা ছাতার বরাদ্দ নিয়ে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও ক্ষমতাসিন দলের লোকদের মাঝে বেশ দহরম মহরমের খবর মাঝে মধ্যে বের হয়ে পড়ে।
   
পর্যটকদের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা ও ঘোরাফেরার জন্য আরো অনেক উপকরণ কক্সবাজারে অকৃত্রিম হাতে দান করেছেন সৃষ্টিকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।