ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

রিজেন্ট এয়ারওয়েজই সেরা

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৭
রিজেন্ট এয়ারওয়েজই সেরা রিজেন্ট এযারওয়েজে শিশুর সমাদর। ছবি: সেরাজুল ইসলাম

কুয়ালালামপুর থেকে: অনেক ফ্লাইট রয়েছে, কেনো রিজেন্ট এয়ারওয়েজে উঠব?- প্রশ্ন ছিল এয়ারপোর্ট সার্ভিস বিভাগের সহকারী স্টেশন ম্যানেজার কামরুল হক সুমনের কাছে।

প্রশ্নের উত্তর যেনো রেডি করাই ছিল তার। স্মিত হেসে জবাব দিলেন, আমরা যাত্রীদের পরম আত্মীয় হিসেবে সেবা দিয়ে থাকি।

আর কোথাও এমন সেবা পাবেন না। বাড়িতে আত্মীয় গেলে যেভাবে সমাদর করে আমরাও ঠিক সেভাবেই সমাদর করার চেষ্টা করি।
 
কামরুল হক সুমনের কথার খানিকটা প্রমাণও পাওয়া গেলো। বিজনেস ক্লাসের যাত্রীর ৩/৪ বছর বয়সী মিষ্টি শিশুটি কিছুতেই মায়ের কোলে কিংবা সিটে বসে থাকতে চাচ্ছিল না। এমনকি টেনে কোলে নিলেও মিনিট খানেক পরেই আবার জোর করে নেমে যাচ্ছিল।
 
কোল থেকে নামলে কোন সমস্যা ছিল না, হাঁটাহাঁটি করছিল কেবিন ‍জুড়ে। এতে বিপত্তি দেখা দেয় কেবিন ক্রুদের চলাচলে। এতে তাদের বিরক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু তাদের মধ্যে এ নিয়ে বিরক্তির প্রশ্নই আসে না। বরং শিশুটির বাবা-মা ছিলেন খানিকটা বিব্রত। উল্টো তাদেরকে কেবিন ক্রুরা নিবৃত করার চেষ্টা করলেন, ‘ইটস ওকে’।
 
কয়েক মিনিট পরেই শিশুটির মন জয় করতে কাজু বাদামসহ নানান খাবার নিয়ে হাজির হলেন কেবিন ক্রু রীতা। একটু সময়ের ব্যবধানেই যেনো বাচ্চাটির সঙ্গে ভাব জামিয়ে ফেললেন। যেনো সত্যিকারের আন্টি তিনি। অনেকদিন পর বড় বোন বেড়াতে এসেছে ভাগনীকে নিয়ে। তার সেবা যত্নে মগ্ন রীতা। শিশুটিও কুটে কুটে খাচ্ছিল কাজু বাদাম। তা দেখে বাবা-মায়ের মুখে প্রশান্তির ছাপ। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন যেনো।
 
ফ্লাইট পার্সার খালেদুর রহমান জানালেন, আত্মীয়কে যেমন ঠিক টাটকা ও গরম খাবার পরিবেশন করা হয়, তেমনি রিজেন্টের মালয়েশিয়াগামী ফ্লাইটটেও সব সময় টাটকা খাবার পরিবেশন করা হয়। যেহেতু বাংলাদেশি যাত্রী বেশি, তাই খাদ্য তালিকায় সবই বাংলাদেশি খাবার।  রিজেন্টের ফ্লাইটে যাত্রী সেবায় কেবিন ক্রু।  ছবি: সেরাজুল ইসলাম
 
তিনি বলেন, রাতে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় দেওয়া হয় চিকেন সাসলিক ও মোরগ পোলাও। সঙ্গে থাকে পছন্দ মাফিক কোমল পানীয়। আর সকালে দেওয়া হয় ভূনা খিচুড়ি। যাতে সাড়ে তিন ঘণ্টা জার্নিতে কষ্ট না হয়।
 
খালেদুর রহমান আরো বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য নিরাপত্তা ও সার্ভিস। নিরাপত্তার প্রশ্নে চুল পরিমাণ ছাড় দেওয়া হয় না। দক্ষ লোকদের বেছে বেছে নিয়োগ দেওয়া হয় এখানে। এই ফ্লাইটের পাইলট আকবর হোসেন ১২ বছর ধরে ফ্লাইট পরিচালনা করছেন। তিনি প্রথমে ছিলেন আমেরিকান এক কোম্পানিতে। একটানা ৭ হাজার কিলোমিটার ফ্লাই করার রেকর্ড রয়েছে তার। আর মালয়েশিয়াগামী ফ্লাইটটি মাত্র ২৬শ’ ৯৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে।
 
পাইলট আকবরের উড্ড্য়ন ছিল যেমন অসাধারণ, চমৎকার, তেমনি ল্যান্ডিংও ছিল প্রশংসা করার মতো। সাধারণত ল্যান্ডিংয়ের সময় অনেক ক্ষেত্রেই ঝাঁকুনি অনুভূত হয়। কিন্তু ভোরের আলো ভেদ করে কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে ল্যান্ডিং করার সময় যাত্রী জায়দুল আলমতো বুঝতেই পারলেন না কখন চাকা রানওয়ে স্পর্শ করল।
 
অথচ ল্যান্ডিংয়ের আগে যখন ঘোষণা দেওয়া হলো সিট বেল্ট বাঁধার, তখন থেকেই সিটের হাতল শক্ত করে ধরেছিলেন তিনি। বললেন, দক্ষ পাইলট। বুঝতেই পারলাম না কিভাবে কখন রানওয়ে স্পর্শ করল।
 
জানা গেলো, ইনফ্লাইট সেবার মানের কারণে দারুণভাবে সাড়া দিয়েছে যাত্রীরাও। বোয়িং ৭৩৭-৭০০ প্লেনটিতে ১২৬টি আসন রয়েছে। শুক্রবারও কুয়ালালামপুরগামী যাত্রী ছিলেন ১২৫ জন। এই রুটে রিজেন্টের যাত্রী সঙ্কট নেই। অনেক সময়েই চাহিদা মতো টিকেট দিতে পারেন না তারা। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের টাটকা খাবার।  ছবি: সেরাজুল  ইসলাম
 
রিজেন্ট এয়ারওয়েজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম ফজলে আকবর জানান, চলতি বছরেই আরও ৩টি উড়োজাহাজ যুক্ত হবে রিজেন্টের বহরে। ২টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এবং একটি দূরপাল্লার বোয়িং ৭৭৭-২০০। পর্যায়ক্রমে এই প্লেনগুলো দিয়ে ৫টি নতুন আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হবে। গন্তব্যগুলো হলো- গোয়াংজু (চীন), জাকার্তা (ইন্দোনেশিয়া), কলম্বো (শ্রীলংকা), মালে (মালদ্বীপ) এবং জেদ্দা (সৌদি আরব)।
 
২০১০ সালের ১০ নভেম্বর কানাডার বোমবারভিয়ার কোম্পানির তৈরি দুটি ড্যাশ-৮ কিউ উড়োজাহাজ দিয়ে যাত্রা শুরু করে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই ২টি বোয়িং ৭৩৭-৭০০ প্লেন দিয়ে কুয়ালালামপুর রুটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে অভিষেক হয়।
 
বর্তমানে ৯টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে রিজেন্ট। এরমধ্যে কুয়ালালামপুর রুটে দৈনিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে। প্রতিদিন স্থানীয় সময় রাত ১১টা ২০ মিনিটে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে ফ্লাইটটি ছাড়ছে ঢাকা থেকে। আবার ভোর ৬টা ২০ মিনিটে কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে উড়ছে ফিরতি ফ্লাইট।
 
এ ছাড়া সিঙ্গাপুর, কলকাতা, মাসকাট, ব্যাংকক, কাঠমান্ডু রুটেও সুনামের সঙ্গে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে রিজেন্ট। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট যাচ্ছে মাসকাট, ব্যাংকক আর কলকাতায়।

অভ্যন্তরীণ রুটেও বেশ দাপটের সঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকা থেকে প্রতিদিন অন্তত ৪টি ফিরতি ফ্লাইট যাচ্ছে চট্টগ্রামে। নিয়মিত ফ্লাইটের সঙ্গে সপ্তাহের ৪ দিন যোগ হচ্ছে বিশেষ ফ্লাইট। ঢাকা থেকে কক্সবাজারেও ১টা করে ফ্লাইট যাচ্ছে প্রতিদিন।
 
শুধু গন্তব্যে পৌছাই নয়, যাত্রাকে উপভোগ্য ও স্মরণীয় করে তুলতে সদা সচেষ্ট রিজেন্ট। এই এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে ৮ কেজি পর্যন্ত পোষা কুকুর,বিড়াল ও পাখি পরিবহনের সুযোগ আছে। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আছে হুইল চেয়ার। শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে বিশেষ ব্যবস্থা।
 
বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানীর নামী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হাবিব গ্রুপের রিজেন্ট এয়ারওয়েজ আন্তর্জাতিক মানের সার্ভিসের পাশাপাশি সাশ্রয়ী খরচও নিশ্চিত করেছে। যাত্রী সেবা দিয়ে যাচ্ছে তুলনামুলক কম খরচে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৬
এসআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।