ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

শ্রমআইন লঙ্ঘন করছে বিমান!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৭
শ্রমআইন লঙ্ঘন করছে বিমান! বলাকা ভবন

ঢাকা: শ্রম আইন মানা না মানা নিয়ে যখন বেসরকারি খাত রয়েছে চাপের মুখে, ঠিক তখন সামনে এসেছে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের তুঘলকি কারবারের কথা। প্রতিনিয়ত শ্রম আইন লঙ্ঘন করছে বিমান। প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সহস্রাধিক শ্রমিক।

২০০৬ সালের (সংশোধনী ২০১৩) শ্রম আইন অনুযায়ী, কেবল মাত্র ক্যাজুয়াল কাজের জন্যই অনূর্ধ্ব তিন মাসের ক্যাজুয়াল শ্রমিক নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে বলা হলেও তা মানছে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

বিমানের মেকানিক, ক্লিনার, তদারকির নানা কাজ সাধারণত স্থায়ী কাজ হিসেবে বিবেচিত হলেও তার তোয়াক্কা করছে না সংস্থাটি।

বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে প্রায় ১ হাজার ৫০০ ক্যাজুয়াল শ্রমিক কাজ করছেন। এসব শ্রমিকের প্রায় ৭০ শতাংশের কাজের মেয়াদ ৫ বছরেরও বেশি।
৫ বছর একই শ্রমিক কখনোই ক্যাজুয়াল হিসেবে কাজ করতে পারেন না। আর যে কাজ বছরের পর বছর চলছে তা কিছুতেই ক্যাজুয়াল কাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।

স্থায়ী কর্মীদের মতো দীর্ঘ দিনের পরিচয়পত্র যেমন আছে ক্যাজুয়াল শ্রমিকের, ঠিক তেমনি আছে নির্দিষ্ট পোশাক। এসব পোশাক জন্য স্থায়ী শ্রমিকরা ভাতা পেলেও বঞ্চিত হচ্ছেন ক্যাজুয়াল শ্রমিকরা। অনেক শ্রমিক ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করলেও শুধুমাত্র ক্যাজুয়াল শ্রমিক হওয়ায় পাচ্ছেন না তেমন কোনো উৎসব ছুটিও।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিমানের একজন ক্যাজুয়াল শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, বিমানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা টাকা পয়সা লোপাটের জন্য ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের স্থায়ী করছেন না। আর নয়তো আমাদের যে পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে বিমান থেকে তার মেয়াদ তিন বছর। তিন মাসের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত একজন ক্যাজুয়াল শ্রমিককে কি করে তিন বছরের জন্য পরিচয়পত্র দেয়া হলো!

এভাবে স্থায়ী কাজের জন্য বছরের পর বছর ধরে ক্যাজুয়াল শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো সম্পূর্ণ বেআইনি বলে মন্তব্য  করেছেন শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী যে কাজ সব সময় প্রয়োজন বা ক্যাজুয়াল কাজ না সেই কাজের জন্য ক্যাজুয়াল শ্রমিক নিয়োগ করা মানে আইন লঙ্ঘন করা। এ বিষয়ে বিমানের বিরুদ্ধে কেউ চাইলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।

বিমানের সিবিএ সূত্রে জানা যায়, কয়েকজন ক্লিনার মামলা করে কয়েক বছর আগে বিমানের বিরুদ্ধে। আইনগতভাবে জয়লাভও করেছেন তারা। বর্তমানে আইনি লড়াইয়ে জয়ী ক্লিনাররা স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কর্মরতও রয়েছেন।

যেসব শ্রমিকরা ক্যাজুয়াল হিসেবে বছরের পর বছর ধরে কাজ করছেন তারা তাদের প্রাপ্য নানা অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ সংস্থাটির ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের।

শ্রমিকরা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কোনো নিয়োগপত্র নাই। কিন্তু স্থায়ী শ্রমিকদের মতোই আমাদের কাজ করতে হয়। নিয়োগপত্র না থাকায় বিমান যখন ইচ্ছা চাকরি থেকে বাদ দিতে পারেন। তখন কোনো শ্রমিক পাওনা থেকেও বঞ্চিত হন। বছরের পর বছর ধরে সেবা দিয়ে আসছি কিন্তু আমরা অবহেলিত।

তবে এসব বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ বিমান কর্তৃপক্ষ। একাধিকবার বিমানের উচ্চপদস্থ দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৭
ইউএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।