ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

ফের মুখ থুবড়ে পড়লো বিমানের বোয়িং

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৭
ফের মুখ থুবড়ে পড়লো বিমানের বোয়িং বিমানের বোয়িং ৭৩৭/ফাইল ফটো

ঢাকা: শাহজালালে ফের বেল্টারের আঘাতে বিমানের একটি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ অচল হয়ে পড়লো। বেল্টার চালকের অসাবধানতায় ওই উড়োজাহাজটির ইঞ্জিন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) বেলা ১১টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে। এতে ঢাকা-নেপাল রুটের ফ্লাইটে দুই ঘণ্টা বিলম্ব হয়।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন এম মোসাদ্দিক আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, এ ঘটনার দায়ে তাৎক্ষণিক একজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, বরখাস্ত অপারেটরের নাম আবদুল বারেক। তিনি এই বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে প্রকৌশল বিভাগের নুরুল ইসলাম নামে অপর একজন অপারেটরকে দায়িত্ব বুঝিয়ে অন্য একটি কাজে যান। এ সময় নুরুল ইসলাম বেল্টার অপারেট করার সময় অসাবধনাবশত ইঞ্জিনে আঘাত লাগে।

সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বিমানের ঢাকা-নেপাল ফ্লাইট বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজটি পূর্ণ যাত্রী নিয়ে উড্ডয়নের অপেক্ষায় ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে অপারেটর লাগেজ ডোর বন্ধ করার জন্য বেল্টার ঘুরিয়ে সামনে আনার সময় সজোরে আঘাত লাগে ইঞ্জিনে। এতে মুহূর্তে ইঞ্জিন শাটডাউন হয়ে যায়। বিকট শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পাইলট ককপিটে বসে সেটা অনুধাবন করার পর পাওয়ার অফ করে দেন। এ সময় যাত্রীদের জানানো হয় এই ফ্লাইট আর নেপাল যাচ্ছে না। এরপর যাত্রীদের আনলোড করে অন্য একটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ এ ওঠনো হয়। আড়াই ঘণ্টা বিলম্বে সেই ফ্লাইট নেপালের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যায়।  

আরও জানা যায়, বেল্ট অপারেটর আবদুল বারেকের নিজের দায়িত্ব নুরুল ইসলামকে বুঝিয়ে দিয়ে যাওয়ার পরপরই এ ঘটনা ঘটে। কিন্তু শাস্তিমূলক ব্যবস্থাটা নেওয়া হয়েছে বারেকের বিরদ্ধে। আর নুরুল ইসলাম রয়ে গেছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অথচ তার অসাবধানতার কারণেই এ ঘটনা ঘটে। উড়োজাহাজের লাগেজ ডোর বন্ধ করার সময় এতো জোরে বেল্ট ঘুরিয়েছেন যে তাৎক্ষণিক ইঞ্জিনে আঘাত লেগে যায়। এতে ইঞ্জিনের অনেকগুলো ব্লেড ভেঙে চুরমার হয়েছে।  

এরপর ক্ষতিগ্রস্ত উড়োজাহাজটিকে নিয়ে যাওয়া হয় হ্যাঙ্গারে। সেখানে মেরামতের কাজ শুরু হয়।  

জিএসই বিভাগের ডিজিএম রাশেদ বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে। এটা নতুন কিছু নয়। এর আগেও গত জুলাই মাসে অনুরূপ ঘটনায় একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে ঘটনা নিয়ে তো কোনো হৈচৈ হয়নি।  

জিএম নজরুল ইসলাম ও পরিচালক ক্যাপ্টেন ফারহাত জামিল ঘটনার সময় কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন ছুটিতে, অন্যজন অফিসে।

বিমানের জিএসই বিভাগ বর্তমানে পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন ক্যাপ্টেন জামিলের অধীনে। তিনি পরিচালক হওয়ার পর থেকেই একের পর এক ঘটনা ঘটতে থাকে। গত নভেম্বরে হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়া এবং গত জুলাইয়ে একজন অপারেটরের আঘাতে একটি ৭৭৭ উড়োজাহাজ অচল হওয়ার পরও বিমান কোনো  ব্যবস্থা নেয়নি। এ নিয়ে তখন ক্যাপ্টেন জামিলের অপসারণের দাবি উঠলেও বিমান রহস্যজনক কারণে নিশ্চুপ থাকে।  

তার বিরুদ্বে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া দূরের কথা, উল্টো তাকে ডিসিএস-এর মতো বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে বিমানে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হলে তাকে ডিসিএস থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।  

আশির দশকের শেষ দিকে ক্যাপ্টেন জামিল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পোকা মারার পাইলট হিসেবে কোনো ধরনের ইন্টারভিউ ছাড়াই বিমানে যোগ দেন। তখন এ নিয়ে বিমানের চরম আপত্তি ওঠে। কারণ বিমানের মতো প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের পোকা মারার পাইলট যোগ দিলে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে বলেই আপত্তি তোলেন ক্যাপ্টেন আজিমসহ অন্য সিনিয়র পাইলটরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।