ঢাকা, শনিবার, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

কুমিল্লায় পরাজয়, আওয়ামী লীগের সতর্ক পর্যালোচনা

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৭
কুমিল্লায় পরাজয়, আওয়ামী লীগের সতর্ক পর্যালোচনা

ঢাকা: কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে দলের অভ্যন্তরীণ অনৈক্যই পরাজয়ের প্রধান কারণ হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর এ বিষয়টিকে সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করছে দলটি।

তবে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হলেও শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব সেটা আবারও প্রমাণ হয়েছে বলে ক্ষমতাসীন এ দলটির নেতারা মনে করছেন।

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) অনুষ্ঠিত কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর কাছে পরাজিত হয়েছেন।

যে ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন সেটা দলের অনৈক্যই প্রকাশ পেয়েছে বলে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন। এই পরাজয়ের মধ্য দিয়ে আগামীতে যে কোনো নির্বাচনের জন্য দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল সতর্ক সংকেত হিসেবে উঠে এসেছে বলেও তারা মনে করেন।

কুসিক নির্বানের ফলাফল সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বাংলানিউজকে জানান, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা বিষয় আবারও স্পষ্ট হয়েছে যে বিএনপি বার বার আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে যে অভিযোগ করে সেটা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। দলীয় প্রার্থী পরাজিত হলেও এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের এক ধরনের রাজনৈতিক বিজয় হয়েছে।

তবে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়কে সতর্কভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে ওই নেতারা জানান।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মতে, কুমিল্লায় দলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। নির্বাচনের আগে সেটা সুষ্ঠুভাবে সমাধান করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সংগঠিতভাবে দলের সবাইকে কাজে নামানো সম্ভব হয়নি। যার ফলাফল হয়েছে নেতিবাচক। দেশের বিভিন্ন স্থানে দলের মধ্যে এ ধরনের কোন্দল রয়েছে। আগামী নির্বাচনগুলোতে বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মধ্যে চলমান কোন্দল মিটিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামানো সম্ভব না হলে কুমিল্লার মতো এরকম দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাবে। এই পরাজয় দলের জন্য সতর্ক সংকেত বলে তারা মন্তব্য করেন।
 
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি সব সময়ই বলে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা সব সময় কারচুপির অভিযোগ করে। এই নির্বাচনের পর তাদের সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমাদের দলের অভ্যন্ত্যরীণ সমস্যা ছিল। তাই দলকে আমরা ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারিনি। নির্বাচনের ফলাফল আমাদের ফোকাস নয়, ফোকাস হচ্ছে এ নির্বাচনটা সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ হয়েছে কি-না। এটা আমাদের ফার্স্ট প্রায়োরিটি। নির্বাচনে হারা-জেতা এটা জনগণের বিষয়।

বিএনপি সব সময় অভিযোগ করে আসছে, শেখ হাসিনার আমলে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু  নির্বাচন করতে পারবে না। কিন্তু কুমিল্লার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব।
 
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আমাদের দলের কিছু অভ্যন্তীণ দ্বন্দ্বের কারণে এই নির্বাচনে প্রভাব পড়েছে। আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদককে সব তথ্য নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে। দলের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। যারা এই নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে অবস্থান নিয়েছে, দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচন এক নয়। এই নির্বাচন দিয়ে জাতীয় নির্বাচনকে মাপার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৭
এসকে/আরআর/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।