ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

আওয়ামী লীগ

সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকেই রিভিউ আবেদন! 

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৭
সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকেই রিভিউ আবেদন! 

ঢাকা: সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকেই রিভিউ আবেদন করার সম্ভাবনা রয়েছে। 

তবে পুরো রায় নয়, রায়ে বিচার্য বিষয়ের বাইরে সর্বোচ্চ আদালত যেসব বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তার কিছু কিছু প্রত্যাহার (এক্সপাঞ্জ) চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পর্যবেক্ষণগুলো প্রাসঙ্গিক ছিলো না বলেও মনে করে দলটি।

এ রিভিউয়ের মধ্য দিয়ে একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। ওই রায়ের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তাও দ্রুতই বন্ধ হবে বলেই প্রত্যাশা করছেন তারা।  

গত ০১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। গত ০৩ জুলাই হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত রায়টি দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলও খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।

গত বছরের ০৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে মূল রায়টি দিয়েছিলেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের ফলে প্রথম দফার মহাজোট সরকারের আমলে আনা সংশোধনীটি বাতিল হয়ে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ফের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে চলে এসেছে।

রায়ের পরে গত ০৬ আগস্ট প্রথম সভাও করেছেন পুনর্বহাল হওয়া সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে রাজনীতি, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ও সংসদ ‘অকার্যকর’ এবং গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ বলা আওয়ামী লীগের জন্য স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংসদ সদস্যদের বিষয়ে যে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোতেও বিব্রত হয়েছে এবং সব বিষয়ে আপত্তি রয়েছে দলটির।

এ বিষয়গুলো রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিষয়। এগুলো অকার্যকর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের কোনো কিছুই তো বাকি থাকে না বলেও মনে করছে আওয়ামী লীগ।

এছাড়া ‘আমিত্ব বা কোনো একজন ব্যক্তি দ্বারা কোনো একটি রাষ্ট্র বা জাতি তৈরি হয়নি’ বলা হয়েছে রায়ে। এটি বঙ্গবন্ধুকে ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। এতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং তাকে ঘিরে যে বাংলাদেশের অর্জন সেটিকে অবজ্ঞা করা হয়েছে বলে দাবি করে এ বিষয়গুলো প্রত্যাহার চায় দলটি।
 
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকেই সরকার ও আওয়ামী লীগ এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। এর কয়েকদিন পর জানানো হয়, সরকার রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন (রিভিউ) করবে। তবে আবেদনটি কবে করা হবে- সে দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।  

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, রায়ের পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহারে রিভিউ আবেদনের প্রস্তুতি চলছে। এর জন্য রায়ের সত্যায়িত কপি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। কপি পাওয়ার পরই আবেদন করা হবে।  

সেক্ষেত্রে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকেই আবেদনটি করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ওই নেতারা।  

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা আইনগতভাবে এর একটি সামাধানের জন্য রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঈদের পরপরই তা করা হয়ে যাবে’।

আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা রায়ের সার্টিফাইড কপি এখনো হাতে পাইনি। কপির জন্য আবেদন করেছি। সার্টিফাইড কপি পাওয়ার পর যে সময় পাওয়া যাবে সেই সময়ের মধ্যেই রিভিউ আবেদন করবো’।
 
রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে গত মাসখানেক ধরে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে দাফায় দফায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধামন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, দলের দুই উপদেষ্টা (যারা সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীও) দেখা করে কথা বলেছেন, আলোচনা করেছেন। প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও সরকার ও দলের পক্ষ থেকে দেখা করে কথা বলেছেন দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।  

প্রথমে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেন।  

এছাড়া দলের সিনিয়র আইনজীবী-নেতা ও আইন বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। দলের সমর্থক আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরও মতামত নেওয়া হয়েছে।  

আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, এসব আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সরকার তার করণীয় সম্পর্কে যথাযথ ধারণা পেয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। ফলে এর মাধ্যমে চলমান সমস্যার সমাধানের একটা সম্ভাবনা বা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে।  

এদিকে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে আলোচনা-সমালোচনা, ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও বিতর্কের ঝড় উঠেছে তা দ্রুতই থেমে যাবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা।  

তাদের অভিমত, বিষয়টি আর বেশিদূর গড়াবে না। খুব তাড়াতাড়িই এর সমাধান হয়ে যাবে। যেহেতু এটি আইনগত বিষয়, সেহেতু আইনগতভাবেই এর সমাধান বের হয়ে আসবে।
 
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, এ রায় নিয়ে অনেকেই অনেক অঙ্ক মেলানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেসবের কিছুই হবে না।  

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘রায় নিয়ে বেশি কথা না বলাই ভালো। এটি আইনগত বিষয়, আইনগতভাবেই এর সমাধান হয়ে যাবে’।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৭ 
এসকে/জেএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।