ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বাহরাইন

হরমুজ প্রণালী হয়ে আরব উপদ্বীপ ঘুরে বাহরাইন

জাকারিয়া মন্ডল, আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৪
হরমুজ প্রণালী হয়ে আরব উপদ্বীপ ঘুরে বাহরাইন

মানামা থেকে: মধ্যপ্রাচ্যগামী যাত্রীদের ‘মিসকিন’ বলে অবহেলা করা হয় বলে চাউড় আছে। তাই উপেক্ষিত হওয়ার গঞ্জনা সওয়ার একটা মানসিক প্রস্তুতি ছিলোই।

কিন্তু গোড়াতেই যে ধাক্কা খেতে হবে, আর তা নিজের দেশের বিমানবন্দরেই, এমনটা কস্মিনকালেও ভাবিনি।

শাহজালালে ইমিগ্রেশন ডেস্কে কর্মরত ‘কবির’ নামে যে কর্মকর্তার হাতে কাগজপত্র তুলে দিলাম তিনি বললেন, ‘যান যান কি কাজে যাচ্ছেন তাতো জানিই। বাঙালি হলো ধান্দাবাজ জাতি। ’

এই ‘ভদ্রলোক’ আমাকে তো বটেই, গোটা বাঙালি জাতিকে কেনো গালিগালাজ করলেন বোধোগম্য হলো না। তাকে ভালো ব্যবহার করার অনুরোধ জানালাম। এতে কয়েক সেকেন্ডের জন্য তিনি দমলেন। পরক্ষণেই পুরনো পাসপোর্টে নেপালের ভিসা দেখে বললেন, ‘ওখানে তো হেঁটেই যাওয়া যায়। এই ভিসায় কি হয়?’

জবাব দেওয়া সমীচিন মনে করলাম না। কিন্তু ইমিগ্রেশন পুলিশের এই ‘চৌকস’ কর্মকর্তা থামলেন না। আমার পাসপোর্ট ভিসা জব্দ করে পরামর্শ চাইলেন আর এক কর্মকর্তার।

অবশেষে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইমিগ্রেশন পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হলো। মিনিট পনেরো পরে ইমিগ্রেশন ওসি’র হস্তক্ষেপে ছাড়া পেলাম বটে। তবে মানসিক প্রস্তুতি নিলাম আরো হেনস্থার শিকার হওয়ার। কিন্তু অবাক কাণ্ড- যাত্রাপথে প্লেনের ক্রু, অন্য দেশের যাত্রী, এমনকি বাহরাইন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও আন্তরিকতার সকল প্রকাশ পেলাম।

কুয়াশার কারণে দেড় ঘণ্টা দেরি হলো জি৯ ৫১৪ ফ্লাইট। প্লেনে উঠে দেখলাম, শ’ দু’য়েক যাত্রীর অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যগামী শ্রমিক। বিশেষত শারজাহর। শারজাহতে নেমে কেউ যাবেন দুবাই বা আবুধাবি, কেউবা জেবেল আলী। আমারও প্রথম গন্তব্য শারজাহ। তারপর কানেকটিং ফ্লাইটে বাহরাইন।

এয়ার এরাবিয়ার ক্রুরা শ্রমিকদের সঙ্গেও বেশ আন্তরিক। মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব আফ্রিকার সর্ববৃহৎ লো কস্ট ক্যারিয়ার হিসেবে বিবেচিত এই এয়ারলাইন্সে অনলাইন ডিউটি ফ্রি শপিং এর নাম ‘স্কাই মল’। এই এয়ার এরাবিয়ার অনলাইন ক্যাফেতেও রয়েছে রকমারি খাবার সংগ্রহের সুযোগ। সাড়ে তিন থেকে ছয় ডলারে ব্রেকফাস্ট এবং সাড়ে তিন থেকে দশ ডলারে লাঞ্চের সুযোগ আছে এখানে।

এসব দেখতে দেখতে মুম্বাই নগরীর ওপর দিয়ে প্লেন উঠে এলো আরব সাগরের ওপরে। তারপর কিছুটা উত্তরে ঘুরে ওমান উপসাগর পেরিয়ে হরমুজ প্রণালী বরাবর এগুলো খানিকক্ষণ। পারস্য উপসাগরের সঙ্গে ওমান উপসাগরের সংযোগকারী এই হরমুজ প্রণালী বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌ-চ্যানেল। যাত্রীদের মাথার ওপরে ঝোলানো মনিটরে হরমুজ প্রণালী ও এর  দু’পাশের ভুখণ্ডকে অদ্ভূত দেখাচ্ছে।

হরমুজ প্রণালী থেকে ঘুরে প্লেন এলো আরব উপদ্বীপের ওপরে। স্থানীয় সময় বিকেল চারটা নাগাদ শারজাহ এয়ারপোর্টে নামলো প্লেন। রানওয়েতে নামতে হলো না। সরাসরি ওয়াকওয়েতে ভিড়লো এয়ার এরাবিয়ার এ৩২০।

এখানকার ভিসা সংগ্রহ কেন্দ্রে দেখলাম ইংরেজি আর আরবির পাশাপাশি বাংলাও লেখা। ক্যাফে আর লাইঞ্জগুলোতে বসে দিব্যি রানওয়ে দেখা যায়। রানওয়ের ওপাশে বালিয়াড়ি, তারপর মরুঝোপ, ঝোপের ওপাশে শারজাহ শহরের একাংশ। প্লেনের ওঠানামা দিব্যি দেখা যায় দেয়ালজোড়া কাঁচের আড়াল থেকে।

এখানে ওখানে কেরালা ট্যুরিজমের বড় বড় বোর্ড দেখে মনে হলো-এর চেয়েও সুন্দর আমার দেশের পর্যটন। ঠিকমতো প্রচারে গেলে ভালো করবো আমরাও।
ঘণ্টা দেড়েক সময় পার হয়ে গেলো দ্রুতই। ঢাকায় কুয়াশার কারণে দেরি হলেও কানেক্টিং ফ্লাইট জি৯ ১০৩ ঠিক সময়েই উড়লো আকাশে। এবার মাত্র এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের জার্নি। মরুভূমির এখানে ওখানে শহরের অস্তিস্ত নজরে এলো। দ্রুতই অন্ধকার নামলো মরুর বুকে। মরু ফুঁড়ে দূরে হারিয়ে যাওয়া আলোর রেখাগুলো দেখে বুঝলাম ওগুলো হাইওয়ে। শহর আর রাস্তার আলোর রেখাগুলো আমার দেশের মতো হিজিবিজি নয়। পরিকল্পিত বলেই হয়তো আকাশ থেকে নানা আকৃতির নকশা হয়ে ধরা দিলো এসব আলোর রেখা।

এখানেও নামতে হলো না রানওয়েতে। এখানকার ভিসা পরীক্ষা করার লাউঞ্জটার নাম ‘মারহাবা’। তারা অনলাইন ভিসার অরিজিনাল কপি চাইলেন। বাংলানিউজের বাহরাইন করেসপন্ডেন্ট মোসাদ্দেক হোসেন সাইফুল এলেন অরিজিনাল কপি নিয়ে। এরই মধ্যে আরো ঘণ্টা দু’য়েক সময় গড়িয়ে গেলো। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে বেরিয়ে এলাম পারস্য উপসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র বাহরাইনের খোলা হাওয়ায়।

দক্ষ ভাড়া ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় সুনাম কুড়োনো এয়ার এরাবিয়ার উত্তোরোত্তর উন্নতি বিস্ময় জাগানিয়াই বটে। এদের প্রধান এয়ার বেস শারজায়। ঢাকা থেকে প্রতি সপ্তাহে সেখানে যায় ২১টি ফ্লাইট। চট্টগ্রাম থেকে যায় ১৪টি। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে প্রতি সম্পাহে তিনটি করে ফ্লাইট যায় রাস আল খাইমায়। তবে শারজাহ থেকে বাইরাইন যায় ১৭টি ফ্লাইট। সম সংখ্যক ফ্লাইট ফিরে আসে। রাউন্ড ট্রিপের খরচ মাত্র ৩০ হাজার টাকা। তবে ঢাকা থেকে বাহরাইনে সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই।

বাংলাদেশে ২০০৭ সাল থেকে ব্যবসা করছে এয়ার এরাবিয়া। শারশাহ ছাড়ও কায়রো আর তুরস্কেও বেস আছে তাদের।

অনগ্রসর কমিউনিটিকেও সহায়তা করে থাকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে কম খরুচে এয়ার লাইন্সের পুরস্কার জেতা এয়ার এরাবিয়া। সুদানের রাজধানী খার্তুম থেকে চারশ’ কিলোমিটার দূরে জাল্লাফ এলাকায় তারাই প্রথম দাতব্য কমিউনিটি ক্লিনিক খোলো। এয়ার এরাবিয়ার এমন দাতব্য প্রতিষ্ঠান আছে শ্রীলংকা, নেপাল, ভারত আর ইয়েমেনেও।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৪

** ‘ডেটলাইন বাহরাইন’, পৌঁছেছেন জাকারিয়া মন্ডল
** ‘ডেটলাইন বাহরাইন’, যাচ্ছেন জাকারিয়া মন্ডল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাহরাইন এর সর্বশেষ