ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বাহরাইন

বাংলানিউজ, ওয়েলকাম টু বাহরাইন

জাকারিয়া মন্ডল, আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৪
বাংলানিউজ, ওয়েলকাম টু বাহরাইন ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মানামা থেকে: মৌমাছির চাকের আদলে আলোকসজ্জা এই প্রথম দেখলাম। বড় বড় পোলে যেনো ঝুলে আছে আলোকোজ্জ্বল মৌমাছির চাক।

রাস্তার পাশের খেজুর গাছগুলোকে পেঁচিয়ে জ্বলছে লাল-নীল-হলদে বাতি। বাংলাদেশের মতো পারস্য উপসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র বাহরাইনেরও বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। তাই এতো আলোকসজ্জা।

কাকতালীয় হলেও ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস। আর ওই দিন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে বাহরাইন। পার্থক্য হলো, বাংলাদেশ স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছিলো পাকিস্তানের কব্জা থেকে, আর বাহরাইন স্বাধীন হয়েছে ব্রিটিশের কবল থেকে।

জাতীয় দিবস উপলক্ষে এই ব্যাপক সাজজ্জার আয়োজন টের পাওয়া গেলো বাহরাইন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নেমেই। তবে তার চেয়েও গভীর এক বিস্ময়ই যেনো অপেক্ষা করছিলো বাহরাইনে। ডিপারচার লাউঞ্জ পার হতে না হতেই আমার নাম ধরে ডাক দিলেন বাংলানিউজের বাহরাইন করেসপন্ডেন্ট মোসাদ্দেক হোসেন সাইফুল। পরম আন্তরিকায় তার সঙ্গে এগিয়ে এলেন আরো দু’জন হাস্যোজ্জ্বল মানুষ।

এদের একজন বাহরাইনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনভুক্ত বাংলাদেশ সমাজের (কমিউনিটি) সভাপতি ফজলুল করিম বাবলু, অপরজন বাহরাইন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহির উদ্দিন বাবর।

সস্ত্রীক এলেন বাহরাইন বিএনপির সভাপতি প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর তরফদারও। সবাই সহাস্যে বাংলানিউজকে ‘ওয়েলকাম টু বাহরাইন’ বলে কাছে টেনে নেওয়ায় পুলকিত হলাম।

বাহরাইনে এখন শীত মৌসুম। এ-সময় সাধারণত উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পুবে বয়ে যায় পারস্য উপসাগর ছুঁয়ে আসা মৌসুমী বাতাস। বছরভর উষ্ণ থাকলেও অগভীর (৫০ থেকে ১০০ মিটার মাত্র) এই সাগরের জলে এখন ভর করেছে শীতবুড়ি। তাপমাত্রা এখন ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পারস্য উপসাগরের জল ছুঁয়ে আসা বাতাসকে বেশ উপভোগ্যই মনে হলো।

মানামা শকে হোটেল ওরিয়েন্টাল প্যালেসে যাওয়ার পথে সঙ্গী হলেন বাবলু আর বাবর ভাই। মুহাররক পার হওয়ার আগ পর্যন্ত ড্রাইভিং সিটটা থাকলো বাবলু সাহেবের দখলে। এরপর তিনি নেমে গেলে চালকের আসনে এলেন বাবর ভাই।

মাত্র সাতশ’ বর্গকিলোমিটারের দেশ এই বাহরাইন। তার মানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা ফটিকছড়ির (৭৭৪ বর্গ কিলোমিটার) আয়তন অনেকটা সমানই বলা চলে। আর এই ছোট্ট দেশেই দ্বীপসংখ্যা ৩৩টি। এয়ারপোর্ট থেকে মানামা শকে যেতে তাই রাস্তার দুপাশে সাগরের জল চোখে পড়ে হরহামেশা। শান্ত সাগরের বুকে কৃত্রিম চর তুলে বহুতল শহর গড়ছে বাহরাইন। দেশটির আয়তন তাই প্রতি বছরই বাড়ছে।

বাহরাইনের প্রাচীন শহর মুহাররকের রাস্তাগুলো বেশ প্রশস্ত হলেও মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে মানামা যেনো অনেকটাই আঁটোসাঁটো শহর। তুলনামূলক ঘিঞ্জি বাঙালি গলিগুলো। তবে কোথাওই ট্রাফিক জ্যাম নেই। জন চলাচলও কম বাহরাইনের রাস্তায়। বিভিন্ন দেশের মানুষ থাকলেও কেবল বাঙালিরাই নাকি জমিয়ে রাখে রাতের মানামা। আমাদের পুরান ঢাকার সঙ্গে সাদৃশ্য আছে বেশ।

চেক ইন করার কিছুক্ষণ পরই প্রবাসী ফোরাম সভাপতি আনিসুজ্জামান মজুমদার এলেন হোটেলে। গরম পানিতে গোসল সেরে কয়েক মিনিট হেঁটে চলে গেলাম ফেনী হোটেলে। নিজেই ছুটে এলেন হোটেলমালিক লিটন চৌধুরী।

একে একে টেবিলে এলো বালিয়া মাছের ভর্তা, বাংলাদেশ থেকে আসা করল্লা ভাজি, কার্ফু মাছের ডিম, সৌদি আরব থেকে আসা পালং শাক, পাকিস্তানের মুরগি, গিলা-কলিজা, কেরালার গরু ইত্যাদি মুখরোচক আইটেম। এলো পাঁচফোড়ন দেওয়া পাতলা ডালও।

পেটপুরে খাওয়ার পর অতি সুস্বাদু রসগোল্লা খেযে অভিভূত হলাম। এই বিদেশ-বিভূঁইয়ে এতো ভালো রসগোল্লা বাংলাদেশেও এখন পাওয়া দুস্কর। সৈয়দ মুজতবা আলী তার বিদেশ সফরে এমন রসগোল্লার কথাই বলেছিলেন হয়তো।

শেষ দিকে এসে খাবারের টেবিলে সঙ্গী হলেন প্রবাসী বাংলাদেশ সমাজের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন পাটোয়ারি। আরো পরে এসে সঙ্গী হলেন বাংলাভিশন প্রতিনিধি কাদের সাহেব। বললেন, বাংলানিউজের একজন আসছেন শুনেই ছুটে এলাম। জুটে গেলো আরো ক’জন বাঙালি। জম্পেশ আড্ডা জমে গেলো বুঝি। লোভ সামলে উঠে পড়লাম।

লিটন চৌধুরী ছুটে এলেন সৌদি আরব থেকে আসা পানের খিলি হাতে। সঙ্গে কাঁচা সুপারি, চুন আর জর্দা। ‍ বাঙালিয়ানার ষোলকলা সত্যিই পূরণ হলো।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৪

** হরমুজ প্রণালী হয়ে আরব উপদ্বীপ ঘুরে বাহরাইন
** ‘ডেটলাইন বাহরাইন’, পৌঁছেছেন জাকারিয়া মন্ডল
** ‘ডেটলাইন বাহরাইন’, যাচ্ছেন জাকারিয়া মন্ডল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাহরাইন এর সর্বশেষ