ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বাহরাইন

বাহরাইনে বেহাল বাংলাদেশ স্কুল

লাইসেন্স ফিরে না পেলে জমিও যাবে

জাকারিয়া মন্ডল ও মোসাদ্দেক হোসেন সাইফুল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৫
লাইসেন্স ফিরে না পেলে জমিও যাবে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাহরাইন ঘুরে: ১৮৩ শতাংশ জায়গা দিয়েছেন বাদশাহ হামাদ বিন ঈসা আল খলিফা।   বাহরাইনে তবু স্থায়ী ক্যাম্পাস হয়নি বাংলাদেশ স্কুলের।

এমনকি কিছ‍ু বাংলাদেশির হঠকারিতায় লাইসেন্সটাই খোয়াতে হয়েছে পারস্য উপসাগরের এই ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের সবেধন নীলমনি এই স্কুলের।

এখন ক্লাস হচ্ছে ভাড়া করা ভবনে। বাহরাইনের রাজার দেওয়া জায়গায় দুই বছরের মধ্যে স্কুল ভবন তৈরির তাগিদ থাকলেও এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে বছর দশেক সময়। দ্রুত ভবন তৈরি করতে না পারলে তাই বরাদ্দ বাতিল হয়ে জায়গাটা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তারওপর রয়েছে লাইসেন্স পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ।

সব মিলিয়ে তাই বেজায় চিন্তিত স্কুলটির নির্বাচিত চেয়ারম্যান কেফায়েত উল্যাহ মোল্লা। স্কুলটিকে এখন শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তার সামনে। তারই একান্ত আগ্রহে বরাদ্দ পাওয়া জায়গাটাতে যখন পা রাখি, তখন ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা ছুঁই ছুঁই করছে। পারস্য উপসাগর ছুঁয়ে ছুটে আসা শীতের বাতাস যেনো অনেকটাই বেয়াড়া।

ঈসা টাউনের পশ্চিম-উত্তরে শিয়া অধ্যুষিত এ আলী এলাকায় বাংলাদেশ স্কুলের জায়গাটি ইঁটের দেয়ালে ঘেরা। ভেতরে ইট বালুর মজুদ গড়েছিলো কোনো এক কনস্ট্রাকশন ফার্ম। স্কুল চেয়ারম্যানের অব্যাহত চাপের মুখে সেগুলো সরিয়ে নেওয়া শুরু করলেও একাংশে এখনো বালুর খামাল দৃশ্যমান।   জায়গাটির পূব ঘেঁষে আল ফালাহ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। উত্তরে আরব ওপেন ইউনিভাস্টিটি। পশ্চিমে ফিলিপিন্স স্কুল। দক্ষিণে মার্কেট। পশ্চিম-দক্ষিণে একটি হেলথ সেন্টার। সব মিলিয়ে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস হওয়ার জন্য আদর্শ জায়গাই বটে।

মরুশীতের কামড় সয়ে তাই কেফায়েত মোল্লার চোখে অনাগত ভবিষ্যতের স্বপ্ন। ভাব ও ভাষায় স্কুল ঘিরে হাজারো পরিকল্পনার খেলা।

বাহরাইনে এই বাংলাদেশ স্কুলের প্রেক্ষাপট বুঝাতেই যেনো আরো ক’বছর পেছনে চলে যান কেফায়েত মোল্লা। গত কয়েক ঘণ্টায় মানামা, মহররক আর হিদ এলাকায় ঘুরেছি তার সঙ্গে। ড্রাইভ করতে করতে স্কুলের চিত্র অনেকটাই চোখের সামনে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। কিন্তু স্বপ্নের এই জায়গার এসে সব কিছুই যেনো ধরা দিলো নতুন করে।

আপনমনে বলেন, প্রবাসে অনেক লোক আসছে। এখানে আমাদের এই একটাই মাত্র স্ক‍ুল। কিন্তু স্কুল নিয়ে গত ৩ বছরে দূতাবাস বা কমিউনিটির কেউ কারো সঙ্গে দেখা করতে যায় নি। ট্রাস্টি বোর্ড করতেও অনেক লড়াই করতে হয়েছে।

কেফায়েত মোল্লা বলেন, ১৯৯৫ সালে এই স্কুলের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরের বছরই স্কুলটি চালু করা সম্ভব হয়। তখন দলমত নির্বিশেষে এখানকার বাংলাদেশ ক্লাব এর নামে রেজিস্ট্রেশন হয় স্কুলের।

তিনি বলেন, কথা ছিলো ক্লাব পরে কমিউনিটির নামে স্কুলের জায়গা দিয়ে দেবে। নতুবা নিবন্ধন বাতিল হবে। কিন্তু ক্লাব স্কুলটাকে নিজেদের সম্পদ করে নিতে চায়।

কেফায়েত মোল্লা বলেন, অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনার পর জানা যায়, ক্লাব চলার জন্যে যে আইনগত ভিত্তি দরকার, তা না থাকায় ক্লাবের নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে। তাই স্কুলের লাইসেন্সও বাতিল হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে স্কুলের পক্ষে ল ইয়ার নিয়োগ করা হয়।

কিন্তু এর আগের ল ইয়ার স্কুলের সম্পদকে ক্লাবের নামে দেখিয়েছিলেন জানিয়ে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, এখন ভাড়া ভবনে স্কুল চলে। ক্লাবপন্থিরা বেশ কয়েকবার তালাচাবি নিয়ে গেছে স্কুলের। চালিয়েছে হামলা। তবুও টিকে আছে বাংলাদেশ কমিউনিটি। চলছে বাংলাদেশ স্কুল।

এখানকার মিনিস্ট্রি অব সোস্যাল অ্যাফেয়ার্সে দূতাবাসের অধীনে স্কুলটির কমার্শিয়াল রেজিস্ট্রেশন (সি আর) করতে হবে জানিয়ে কেফায়েত মোল্লা বলেন, মিনিস্ট্রি অব প্রাইভেট এডুকেশনের ডিজি মিসেস আহলান আহমেদ আল আমীর এর সঙ্গে দেখা করেছি। আমাদের দূতাবাস বলছে, কমিউনিটি পিপলের নামেই স্কুল হবে।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট কলেজে পড়াতেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান। দেশে সামাজিক নিরাপত্তার প্রকট অভাব বোধ করায় ২০০৬ সালে চলে আসেন বাহরাইন। স্কুলটাকে অগোছালো দেখে চেয়ারম্যান পদে ইলেকশন করেন ২০১১ সালে। কিন্তু সেবার আর স্কুলের নেতৃত্ব দেওয়া হযনি তার। ২০১৪ সালের জানুয়ারির ইলেকশনে এসে সেই সুযোগ হয় তার।

মার্চে দায়িত্ব পালন শুরু করার পর সেপ্টেম্বরে গঠন করেন ট্রাস্টি বোর্ড। এখন হারানো লাইসেন্স পুনরুদ্ধার আর বাদশাহ’র দেওয়া জায়গায় স্কুল ভবন গড়াই প্রধান চ্যালেঞ্জ তার।  

তাই বলেন, কেনো ভবন হচ্ছে না তা নিয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ এসেছে কয়েক দফা। কিন্তু ভবন গড়ার আগে লাইসেন্স পুনরুদ্ধার করা দরকার। লাইসেন্স উদ্ধার না হলে জায়গা হারাতে হতে পারে। তাই বাংলাদেশ কমিউনিটির সবাইকে এক কাতারে আনা হচ্ছে।

তবে সবার আগে বাংলাদেশ দূতাবাসের নামে স্কুলের লাইসেন্স নিয়ে নিতে রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল কে এম মমিনুর রহমানকে অনুরোধ জানিয়েছি আমরা।

ট্রাস্টি বোর্ড বা ম্যানেজিং কমিটির ‍নামে লাইসেন্স নিতে গেলে নয় মাস থেকে এক বছর সময় লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে কেফায়েত মোল্লা বলেন, এখনই আম‍াদের শিক্ষার্থী ৯৩০ জন। ভর্তির অপেক্ষায় আছে আরো অর্ধ শতাধিক। সবার যথাযথ বিকাশের স্বার্থে স্থায়ী ক্যাম্পাস দরকার। তারও আগে দরকার লাইসেন্স পুনরুদ্ধার। তাই দূতাবাসকেই এগিয়ে আসতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাহরাইন এর সর্বশেষ