ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

শিওরক্যাশে উপবৃত্তির টাকা তুলতে ভোগান্তি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭
শিওরক্যাশে উপবৃত্তির টাকা তুলতে ভোগান্তি রূপালী ব্যাংক শিওর ক্যাশ মোবাইল ব্যাংকিং

ঢাকা: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বিতরণের জন্য রূপালী ব্যাংক শিওর ক্যাশ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে।

কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা উপবৃত্তির টাকা তুলতে গিয়ে নানা ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

অপ্রতুল এজেন্ট, এজেন্টদের অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকা এবং টাকা তোলার সময় এজেন্টরা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন—এরকম অনেক ঘটনা ঘটছে।


বর্তমানে রূপালী ব্যাংকের শিওরক্যাশের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট এক কোটি ৩০ লাখ প্রাথমিক শিক্ষার্থীর মধ্যে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের ১ মার্চ সকালে গণভবনে আয়োজিত এক ভিডিও কনফারেন্সে উপব‍ৃত্তির টাকা শিওরক্যাশের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মায়েদের মোবাইল অ্যাকাউন্টে পাঠানোর কার্যক্রমটির উদ্বোধন করেন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের এই প্রকল্পটির নাম ‘মায়ের হাসি’।

স্বচ্ছতা বাড়াতেই উদ্যোগটি নেওয়া হয়। রূপালী ব্যাংকের সঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত চুক্তিটি হয় ২০১৬ সালের জুনে।

দেশের এক কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা দিতে এক কোটি অ্যাকাউন্ট খোলার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের কাছে নির্ধারিত ফরম পাঠানো হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক বিনামূল্যে ১ কোটি সিম দিয়েছে উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীর মায়েদের জন্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এখনও অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মায়েরা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেননি। তারা এ নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে এজেন্টদের অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের যোগসাজশে টাকা মেরে দেওয়ার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটেছে।
উপবৃত্তির অর্থ বিতরণের অনিয়ম তদন্ত করে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের বরাবর চলতি বছরের ২২ জুন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর একটি চিঠিও দেয়। তারপরও থেমে নেই অসৎ লোকদের অনিয়ম।

অনেক অভিভাবক ও শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, শিওরক্যাশের এজেন্টরা অবৈধ কমিশন-বাণিজ্য শুরু করেছেন। টাকা তোলার সময় এসব এজেন্টের অনেকেই ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আদায় করছেন। এমন একটি ঘটনায় (১৯ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় শফিকুল ইসলাম নামের এক শিওরক্যাশ এজেন্টকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
শফিকুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা থেকে ২০ টাকা করে কেটে নিচ্ছেন মর্মে একজন অভিভাবক পাটগ্রাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অভিযোগের সত্যতা পান এবং শফিকুলকে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেন। ইতিপূর্বেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিওরক্যাশের এজেন্টদের বিরুদ্ধে এমন অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সারাদেশে শিওরক্যাশের পর্যাপ্ত এজেন্ট নেই। একারণে অনেক স্থানে অভিভাবকরা উপবৃত্তির টাকা তুলতে পারছেন না। এজন্য তাদেরকে সময় ও অর্থ ব্যয় করে দূরবর্তী স্থানে যেতে হচ্ছে। আবার দেখা যাচ্ছে, এজেন্ট আছেন কিন্তু তার অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই। ফলে অভিভাবকরা টাকা তুলতে গিয়ে নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অনেক সময় ভূক্তভোগী অভিভাবকদের উল্টো পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তারা যেন রূপালী ব্যাংকের শাখা থেকে টাকাটা তুলে নেন। কিন্তু এখানেও ভোগান্তি কম নয়। কেননা সব জায়গায় তো রূপালী ব্যাংকের শাখা নেই! থাকলেও তা আছে অনেক দূরে। ফলে অভিভাবকদের সময় এবং যাতায়াত বাবদ অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে।
শিওরক্যাশের কয়েকজন এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, উপবৃত্তির টাকা ছাড়া শিওরক্যাশের অ্যাকাউন্টে অন্য কোনো লেনদেন হয় না। আর বৃত্তির টাকা দেওয়া হয় তিনমাস পরপর। অ্যাকাউন্টধারীদের বৃত্তির টাকা দেওয়ার পর শিওরক্যাশের প্রতিনিধিদের আর সহজে দেখা মেলে না। একারণে টাকা আটকে থাকে অনেকদিন।

বর্তমানে সারাদেশে মোট ৬০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রতিবছর প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়ার জন্য সরকারের ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। উপবৃত্তির টাকা তুলতে অভিভাবকদের উপবৃত্তি বিতরণকেন্দ্রে যেতে হয়। সেখানে অসহযোগিতার শিকার হওয়াসহ নানা ঝামেলা পোহাতে হয় তাদের। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া শিক্ষার্থীর নাম ব্যবহার করে উপবৃত্তির টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। অথচ এমনটা যেন না হতে পারে সেজন্যই মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের এই কার্যক্রমটি চালু করা হয়েছিল।

এ ব্যাপারে বাংলানিউজের তরফে বেশ কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলা হয়। তারা জানান, শিওরক্যাশের এই সকল সমস্যা দূর না হলে মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের মূল উদ্দেশ্যটাই ব্যাহত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিওরক্যাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শাহাদত খান বলেন, কোনো কানো এজেন্ট টাকা বেশি নেওয়ার অপচেষ্টা করছে। এমন অপকর্ম রোধের জন্য আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি। প্রত্যেক এজেন্টকে চিঠি দিয়েছি। কোনো কোনো এজেন্টকে বাদ দিয়েছি। কয়েকজন গ্রাহকের টাকা ফেরত দিয়েছি। জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের এ বিষয়ে তদারকি করার অনুরোধ করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭
এসই/জেএম

** শিওরক্যাশে উপবৃত্তির অর্থ বিতরণে অনিয়ম, তদন্তের নির্দেশ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।