ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫ বাণিজ্যিক ব্যাংকের, কমেছে রূপালীর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫ বাণিজ্যিক ব্যাংকের, কমেছে রূপালীর

ঢাকা: ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেকই রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর। সেপ্টেম্বর শেষে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল-এর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকায়।

একই সময়ে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপির পরিমাণ ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। এ সময় ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকার ঋণ।


 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের অতিরিক্ত ঋণের কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকে শ্রেণীকৃত ঋণ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম।  

কারণ বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো অনেক যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেয়। আদায়ের জন্যও অনেক বেশি তৎপর থাকে।
 
সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির বিষয়ে সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেস্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণের সার্বিক পরিস্থিতি মোটেও সন্তোষজনক নয়।
 
তিনমাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সোনালী, জনতা, অগ্রণী, বেসিক ও বিডিবিএল-এর খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ৬৬৭ কোটি বাড়লেও ৩১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা কমেছে রূপালী ব্যাংকের। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৪৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকায়। চলতি বছরের জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিলো ৩৪ হাজার ৫৮০ কোটি  টাকা।
 
সবচেয়ে বেশি ২৮৪৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা খেলাপি বেড়ে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ১৮৭ কোটি টাকায়। বৃদ্ধির তালিকায় সবার নিচে রয়েছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)। ১৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বেড়ে খেলাপির পরিমাণ হয়েছে ৭৮২ কোটি ৮ লাখ টাকা।
 
এছাড়াও সোনালী ব্যাংকের ৫৩৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বেড়ে মোট খেলাপি হয়েছে ১১ হাজার ৯৬৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। অগ্রণীর ৫৩২ কোটি ৭ লাখ বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকের ৩১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বেড়ে খেলাপির পরিমাণ ৭ হাজার ৭০৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর ড. খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থাপনার নীতি নির্ধারকরা আরও বেশি সক্রিয় ও কঠোর হলেই খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব। কারণ খেলাপিদের চাপের মধ্যে রাখলে তারা টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হবে।
 
খেলাপি ঋণ আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ২০১৭ সালের শুরুতেই বছরটিকে ঘুরে দাঁড়ানোর বছর বলেছিলাম। তারই আলোকে আমাদের টিম কাজ করছে। আদায় প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি। আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সবকিছু মিলে কিছু টাকা আদায় হয়েছে। তবে এতে আমরা সন্তুষ্ট না। আরও বেশি আদায় হওয়া প্রয়োজন ছিল।
 
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই-সেপ্টেম্বর বেড়েছে ৬ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকায়। যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ১৭ শতাংশ।
 
২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। এর বাইরে মন্দ মানের খেলাপি হয়ে যাওয়ায় অবলোপন করা হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ। সেপ্টেম্বর শেষে অবলোপনসহ খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২৫ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, আর্থিক খাতের সুশাসন নিশ্চিত করতে ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিবছরের জুন ও সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়। বছর শেষে আবার খেলাপির পরিমাণ কিছুটা কমবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।