ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ব্যাংকিং

বন্ডের বিনিময়ে খেলাপি ঋণ ক্রয়

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৯
বন্ডের বিনিময়ে খেলাপি ঋণ ক্রয়

ঢাকা: বন্ডের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ ক্রয়, সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির বাইরে খেলাপি ঋণ ক্রয়-বিক্রয়ে আরও একটি মধ্যম বাজার ও ঋণ ক্রয়-বিক্রয়ে কর মওকুফ সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি কমিটি।

সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠনের জন্য দুই মাস আগে ছয় সদস্যের ওই কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কোম্পানি গঠনের কাজ এগিয়ে চলেছে।

সুপারিশগুলো এখন অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

ব্যাংকিং খাতকে চাঙা করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ (এনপিএল) কমিয়ে আনতে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিভিন্ন সময় খেলাপি ঋণ আদায়ে বিকল্প পথ খোঁজার কথা বলেছেন। তারই আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত কমিটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

কমিটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশে ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সালে ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হওয়ার পরও কিভাবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে এনেছে, তার একটি বিশ্লেষণ সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

যেসব দেশের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো— ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান ও ফিলিপাইনস। এ সাত দেশের প্রতিটিই ওই সূত্রটি প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের খেলাপি ঋণ সফলভাবে কমিয়ে নিয়ে এসেছে।

সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠনে গঠিত কমিটির একজন সদস্য বলেন, উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, এক সময় ইন্দোনেশিয়ায় আর্থিক সংকটের সময় ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত খেলাপি হয়েছিল, কিন্তু ২০১৭  সালের শেষে দেশটির খেলাপি ঋণ ৩ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। তাই আমরা ধারণা নিয়ে এসেছি। এটি ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সহায়তা করবে।

সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে খেলাপি ঋণ কিনে নেবে এবং দ‍াম দর চূড়ান্ত করে ব্যক্তি বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা ছিল, যা মোট একই সময়ে বিতরণ করা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ।

অনেক ব্যাংক খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমে গেছে।

কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে বিশেষ বন্ডের বিনিময়ে খেলাপি ঋণ নেবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি। ঋণের অর্থ ব্যাংকগুলো একটি নির্দিষ্ট সময় পরে পাবে। এভাবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা হবে।

এছাড়াও কমিটি একটি মধ্যম আকারের বাজার গঠনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছে, যেখান থেকে গ্রহীতাকে খেলাপি ঋণ বিক্রি এবং ক্রয় করার অনুমতি দেওয়া হবে।

সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির জন্য একটি গতিশীল বন্ড মার্কেট সুবিধা দেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করে কমিটি। গতিশীল বন্ড মার্কেট হলে পর্যাপ্ত মূলধন পাবে। এতে সহজেই খেলাপি ঋণ কিনতে পারবে।

এছাড়াও কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর বাইরে খেলাপি ঋণের জন্য আলাদা তথ্য ভাণ্ডার করার সুপারিশ করেছে।

খেলাপি ঋণ ক্রয় এবং বিক্রয়ের জন্য কর মওকুফ সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।

সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠনের অনুমোদনের জন্য শিগগিরই অর্থ মন্ত্রণালয়ে কমিটির সুপারিশগুলো পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৯
এসই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।